সিকিমের আকস্মিক বন্যায় ছয় ভারতীয় সেনাসহ অন্তত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনো ১৬ সেনাসহ ১০৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গে তিস্তা নদীর নিম্নপ্রবাহে বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত পানির তোড়ে ভেসে আসা ১৮টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতভর ভারি বৃষ্টির পর বুধবার ভোরে পর্বত থেকে নেমে আসা পানির প্রবল চাপে সিকিমের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প সিকিম উর্জার চুংথাং বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে যায়। তাতে তিস্তা নদীর নিম্ন প্রবাহের অনেক এলাকা হড়কা বানে ভেসে যায়।
ভারতের জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলা কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, সিকিমের ধ্বংসলীলার প্রাথমিক কারণ অতিরিক্ত বৃষ্টি এবং ১৭০৬০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত লোনক হ্রদের পানি পাড় ভেঙে নেমে আসা।
বৃহস্পতিবার ভারতের মহাকাশ সংস্থার প্রকাশ করা স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, পাড় ভেঙে পানি নেমে আসার পর লোনক হ্রদের আকার অনেক ছোট হয়ে গেছে।
ভারতের ন্যাশনাল রিমোট সেনসিং সেন্টার এর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক স্যাটেলাইট ছবিগুলোতে দেখা গেছে হ্রাদের আকার বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১৬২ দশমিক ৭ হেক্টরে দাঁড়িয়েছিল, কিন্তু পাড় ভেঙে বিপুল পরিমাণ পানি নেমে যাওয়ার পর হ্রদের আকার ছোট হয়ে ৬০ দশমিক ৩ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানিয়েছেন, উঁচু থেকে নেমে আসা ঢলের তোড়ে ১৪টি সেতু ধসে গেছে এবং রাজ্যের বিভিন্ন অংশে তিন হাজারের বেশি পর্যটক আটকা পড়েছেন। স্থানীয় ২৫০০ বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং প্রায় ৬০০০ জন ত্রাণশিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন।
সিকিম রাজ্য সরকার আরেকটি হিমবাহ হ্রদে একই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছে। আগের হড়কা বানে সেনাশিবির থেকে বিস্ফোরক ও গোলাবারুদ ভেসে যাওয়ায় সে বিষয়েও সতর্কতা জারি করেছে তারা।
লাচেনের নিকটবর্তী শাকো চো হ্রদও পাড় উপচে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। কর্তৃপক্ষ ওই হ্রদের আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে।
সিকিমের মুখ্য সচিব বিজয় ভূষণ পাঠক বলেছেন, “লাচেন ও লাচুংয়ে প্রায় ৩০০০ মানুষ আটকা পড়ে আছেন। মোটরসাইকেল যোগে সেখানে গিয়েছিলেন আরও ৩১৫০ জন, বন্যার কারণে তারাও আটকা পড়েছেন। আমরা সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার দিয়ে তাদের সরিয়ে আনবো।”
হড়কা বানে মঙ্গন জেলায় আটটি, নামচিতে দু’টি ও গ্যাংটকে একটি সেতু পানির তোড়ে ভেসে গেছে। আরও বহু সেতু পানিতে ডুবে আছে। এর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর পানি সরবরাহের পাইপলাইন, পয়নিষ্কাশন লাইন, বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন ও টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিস্তা পাড়ের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত পাকিয়ং, গ্যাংটক, নামচি ও মঙ্গন জেলার ২৭৭টি বাড়ি ধ্বংস বা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বহু বাড়ি ও গাড়ি কাদারস্রোতের নিচে তলিয়ে আছে, অনেক গাড়ি ভেসে গেছে।
মঙ্গন জেলায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে ও ১৭ জন নিখোঁজ রয়েছেন, গ্যাংটকে মারা গেছেন পাঁচজন আর নিখোঁজ রয়েছেন ২২ জন। পাকিয়ংয়ে ছয় সেনাসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৫৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
পূর্বকোণ/এএইচ