দীর্ঘ সময় ধরেই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বড় চালিকাশক্তি চীন। কিন্তু সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় দেশটির অর্থনৈতিক মন্দা আন্তর্জাতিক নেতাদের ও বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। মন্দা মোকাবেলায় এখন তারা চীনের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। এক দশকের মধ্যে এবারই প্রথম বড় ধরনের সমস্যার মুখে পড়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি। খবর সিএনএন।
গত সপ্তাহে ডলারের বিপরীতে ইউয়ান ১৬ বছরের সর্বনিম্নে ঠেকেছে। কভিডকালীন লকডাউন কাটার পর চীনের অর্থনীতি খুব দ্রুত বাড়তে থাকে। তবে সেই প্রবণতা বেশি দিন অব্যাহত থাকেনি। বর্তমানে দ্রুত ভোক্তামূল্য কমতে শুরু করেছে। গভীর হচ্ছে রিয়েল এস্টেট খাতের সংকট। কমে গেছে রফতানির পরিমাণও। তরুণদের বেকারত্ব হার এতটাই খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সরকার এখন এ-সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করা বন্ধ করে দিয়েছে।
পরিস্থিতি এতটাই নেতিবাচক দিকে বাঁক নিয়েছে যে একটি প্রধান গৃহনির্মাতা ও একটি বিশিষ্ট বিনিয়োগ কোম্পানি সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় তাদের বিনিয়োগকারীদের থেকে অর্থ পায়নি। ফলে আবাসন বাজারের চলমান অবনতি দেশটির আর্থিক পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে তোলার আশঙ্কা রয়েছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়াতে জোরালো পদক্ষেপের অভাব ও পরিস্থিতি সামনে আরো খারাপ হতে পারে এমন ভয় ছড়িয়ে পড়ায় খরচ কমিয়ে দিয়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। ফলে বাজারের মন্দা দশা আরো প্রকট হয়ে উঠেছে। বেশ কয়েকটি বড় বিনিয়োগ ব্যাংক চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসকে ৫ শতাংশের নিচে কমিয়ে দিয়েছে।
ইউবিএস বিশ্লেষকরা সম্প্রতি প্রকাশিত নোটে লিখেছেন, চীনের প্রপার্টি মন্দা আরো গভীর হয়েছে, রফতানি চাহিদা আরো দুর্বল হয়েছে এবং প্রত্যাশা অনুযায়ী নীতিগত সমর্থনও পাওয়া যায়নি। ফলে আমরা চীনের প্রকৃত জিডিপি বৃদ্ধির পূর্বাভাসকে কমিয়ে দিয়েছি। নোমুরা, মরগান স্ট্যানলি ও বার্কলেসের গবেষকরা আগেই তাদের পূর্বাভাস সংশোধন করে কমিয়ে দিয়েছেন। তার মানে চীন তার প্রায় ৫ দশমিক ৫ শতাংশের সরকারি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হতে পারে, যা হবে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বাধীন চীনা নেতৃত্বের জন্য বেশ বিব্রতকর হবে।
ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দিয়ে বছর শুরু হলেও গত এপ্রিল থেকেই চীনের অর্থনীতিতে মন্দা পরিস্থিতি যাচ্ছে। তবে চলতি মাসে একসময়ের আবাসন বিক্রির ক্ষেত্রে দেশের সবচেয়ে বড় ডেভেলপার কান্ট্রি গার্ডেন ও শীর্ষ ট্রাস্ট কোম্পানি ঝংরং ট্রাস্টের ভুলের কারণে উদ্বেগ আরো তীব্র হয়েছে। আরেকটি বড় উদ্বেগের বিষয় হলো স্থানীয় সরকারের ঋণের বোঝা। মহামারী লকডাউন আরোপ করায় ব্যয়ের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ও আবাসন ব্যবসার মন্দার কারণে জমি বিক্রি থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের পরিমাণ ব্যাপক হারে কমে গেছে। ফলে ঋণের বোঝা বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে।
পূর্বকোণ/এএইচ