পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বাজাউরে একটি ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলের সভায় রবিবার চালানো ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলার পেছনে কারা ছিল- তা অনুসন্ধান করছে দেশটির পুলিশ। বাজাউর জেলার খার শহরে জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম-ফজল নামের রাজনৈতিক দলের সভায় আত্মঘাতী হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৬ জন নিহত হন- যার মধ্যে ওই দলটির স্থানীয় কিছু নেতা রয়েছেন।
এখন পর্যন্ত কোন গোষ্ঠী এ হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেনি, এবং আক্রমণের উদ্দেশ্যও স্পষ্ট নয়। তবে পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের সন্ত্রাস-দমন বিভাগের একটি দল এ ঘটনার অনুসন্ধান করছে। বিবিসিকে পুলিশ বলেছে, ইসলামিক স্টেট গ্রুপের সাথে সম্পৃক্ত একটি স্থানীয় গোষ্ঠী এর সাথে জড়িত থাকতে পারে বলে তারা সন্দেহ করছে।
জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম-ফজল পার্টি প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের কোয়ালিশন সরকারের অংশ। এই দলটি কট্টর ইসলামপন্থীদের সাথে তাদের যোগাযোগের জন্য সুপরিচিত।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, রোববারের আত্মঘাতী বোমা হামলার সময় খার থেকে দু কিলোমিটার দূরের শান্ডি এলাকায় ওই সভাটিতে শত শত পার্টি সদস্য ও স্থানীয় নেতাদের সমাগম হয়েছিল। বিকেল চারটার দিকে একজন নেতার বক্তৃতা চলার সময় প্রচণ্ড বিস্ফোরণটি ঘটে। বোমাটিতে প্রায় ১০ কেজি বিস্ফোরক ছিল বলে তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলেছেন। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে সভার প্যান্ডেলটি ভেঙে পড়ে এবং আতংকিত পলায়নপর লোকজন তার মধ্যে আটকা পড়েন। নিহতদের মধ্যে জেইউআইএফ দলের খার অঞ্চলের দুজন স্থানীয় নেতা এবং তাদের একজনের পুত্র আছেন। আহতের সংখ্যা ১৫০ জনেরও বেশি। খার হাসপাতালের একজন ডাক্তার জানিয়েছেন নিহতদের মধ্যে পাঁচটি শিশুও রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এ হামলার নিন্দা করে বলেছেন, ‘ইসলাম, কোরআন ও পাকিস্তানের পক্ষে যারা কথা বলে তাদের ওপর যে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে তাদের সত্যিকারের সাজা দেয়া হবে।’
এ পর্যন্ত কোন গোষ্ঠী এ আক্রমণে দায়িত্ব স্বীকার না করলেও সংবাদদাতারা বলছেন, এ বছর বাজাউরে বেশ কয়েকটি আক্রমণের পেছনে আইএস ছিল, এবং তারা এর আগেও জমিয়ত-ই-উলেমায়ে-ইসলামের আক্রমণ চালানোর দাবি করেছে। জুন মাসে ‘ইসলামিক স্টেট ইন খোরাসান প্রভিন্স’ বা আইএসকে দাবি করে যে তারা ইনায়েত কিলি গ্রামে একজন পার্টি কর্মকর্তাকে হত্যার পেছনে ছিল।
পাকিস্তানের দৈনিক ডন জানাচ্ছে, পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলছেন, সম্ভবত এ আক্রমণের পেছনে আইএসকে জড়িত, এবং ‘এ ব্যাপারে কোন প্রশ্নের অবকাশ নেই’ বলে দাবি করেন তিনি। ‘ওই জেলায় বোমা হামলার কোন হুমকিই ছিল না’- ডন’কে এ কথা বলেছেন অন্য নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।
আফগানিস্তান সীমান্তের কাছে একটি প্রত্যন্ত জেলা বাজাউর, এবং এক সময় বৈশ্বিক ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ একটি অন্যতম কেন্দ্র বিন্দু ছিল এ অঞ্চলটি।
সম্প্রতি কিছু রিপোর্টে এ এলাকায় আইএস-কের উপস্থিতির আভাস পাওয়া গেছে। জুন মাসে সন্ত্রাস দমন কর্মকর্তারা এখানে আইএসকে’র তিনজন সদস্যকে নিষ্ক্রিয় করে বলে ডন-এর রিপোর্টে বলা হয়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, গত বছর সরকার ও পাকিস্তানি তালেবানের (তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপি) মধ্যেকার একটি যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায় এবং তার পর থেকেই দেশটিতে ইসলামপন্থী জঙ্গীদের আক্রমণ বেড়ে গেছে।
তবে যদিও সম্প্রতি অনেকগুলো আক্রমণের পেছনে টিটিপি বা তাদের সহযোগী গোষ্ঠীগুলোর হাত ছিল বলে বলা হয় – কিন্তু রবিবারের আক্রমণের পর টিটিপি এর সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতা নেই বলে আভাস দিয়েছে এবং তাদের একজন মুখপাত্র এর নিন্দা করেছেন।
জানুয়ারি মাসে উত্তর পশ্চিমের পেশাওয়ার শহরে একটি মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১০০-রও বেশি লোক নিহত হয়। তবে রাজনৈতিক দলের সভায় আক্রমণের ঘটনা বিরল। আসন্ন নভেম্বর মাসে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন হবার কথা রয়েছে।
বিবিসি বাংলা
পূর্বকোণ/মাহমুদ