চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

মৃগী রোগের বড় বাধা কুসংস্কার

চিকিৎসায় সম্পূর্ণ ভাল হয় ৭০% রোগী

নিজস্ব প্রতিবেদক 

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ | ২:০২ অপরাহ্ণ

আমিনুল ইসলাম (ছদ্মনাম)। প্রায় দেড় দশক ধরে খিঁচুনি রোগে আক্রান্ত রাঙ্গুনিয়ার এ বাসিন্দা। রোগ থেকে মুক্তি পেতে আত্মীয়-স্বজনদের পরামর্শে বিভিন্ন বৈদ্য, কবিরাজের দ্বারস্থ হন তিনি। কিন্তু কোন কিছুতেই সুস্থ হতে পারেননি তিনি। সর্বশেষ বছর চারেক আগে শরণাপন্ন হয় চমেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করে বর্তমানে এ রোগ থেকে পুরোপুরিই সুস্থ আছেন তিনি। শুধু আমিনুল ইসলামই নয়। চিকিৎসকরা বলছেন, মৃগী রোগের চিকিৎসায় ঝাড়ফুঁক নয়, অন্য সাধারণ রোগের মতো মৃগী রোগের সঠিক চিকিৎসায় রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারে। নিয়মিত ওষুধ সেবন আর চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করলে আক্রান্তদের ৭০ শতাংশ রোগীই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। শুধু তাই নয়, ৯০ শতাংশ রোগী ওষুধ খেয়ে ভালো থাকে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এমন বাস্তবতার মধ্যেই আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব আন্তর্জাতিক মৃগী রোগ দিবস। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি বেসরকারি ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা, শোভাযাত্রাসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। চিকিৎসকরা বলছেন, মৃগী রোগ নিয়ে সমাজে অনেক কুসংস্কার প্রচলিত আছে। দেশের ৭০ ভাগ মৃগী রোগী বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা না করে প্রচলিত চিকিৎসা যেমন ঝাড়ফুঁক, পানিপড়া, তাবিজ, কবিরাজ, বৈদ্য ইত্যাদি চিকিৎসা করেন। এছাড়া খিঁচুনি দেখা দিলে কেউ পায়ের স্যান্ডেল বা চামড়ার যেকোন জিনিস নাকে শুকান। আবার অনেকে জিহŸায় কামড় না খাওয়ার জন্য চামচ বা মুখে কাপড় ঢুকানোর চেষ্টা করেন যেটাও অনুচিত , এগুলো সবই কুসংস্কার। আর এসব কুসংস্কারের কারণে এ রোগ নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না।
কাদের হয়ে থাকে মৃগী রোগ :
খিঁচুনি মৃগী রোগের একটি অন্যতম লক্ষণ খিঁচুনি ছাড়াও মৃগী রোগ হতে পারে। আবার মৃগী রোগ ছাড়াও অন্য অনেক কারণে খিঁচুনি হতে পারে। যেমন কারও রক্তে গ্লুকোজ কমে গেলে, সোডিয়াম লবণ কমে গেলে, তীব্র জ্বর, ইনফেকশন, মস্তিষ্কে আঘাত বা টিউমারসহ আরও নানাবিধ কারণে খিঁচুনি হতে পারে। কিছু মৃগী রোগে শুধুমাত্র কিছুক্ষণের জন্য অন্যমনস্ক হয়ে যাওয়া, কিছু ক্ষেত্রে মানসিক রোগীর মতো অস্বাভাবিক কিছু আচরণ দিয়েও খিঁচুনি হতে পারে। তবে এটি কোন অভিশপ্ত রোগ নয়। পুরোপুরিই নিরাময়যোগ্য।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামত :
৯০ শতাংশ রোগী ওষুধ খেয়ে ভালো থাকে। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে ২ থেকে ৫ বছর ওষুধ খেয়ে রোগমুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) নিউরোলজি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. সীমান্ত ওয়াদ্দাদার বলেন, ‘মৃগী রোগের চিকিৎসায় ঝাড়ফুঁক নয়, অন্য সাধারণ রোগের মতো মৃগী রোগের সঠিক চিকিৎসায় রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারে। তবে প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে মৃগী রোগের উপসর্গ অন্য কোনো রোগের উপসর্গ হিসেবেও দেখা দিতে পারে। তাই পরিবারের কারো মৃগী রোগের উপসর্গ দেখা দিলে বৈদ্য কিংবা কবিরাজের অপচিকিৎসা না নিয়ে দ্রæত পার্শ্ববর্তী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা মেডিকেলে নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জামান আহমেদ বলেন, ‘মৃগী রোগ কোন অভিশপ্ত রোগই নয়। এটি পুরোপুরিই নিরাময়যোগ্য। সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করলে ৭০ শতাংশ রোগী পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়। তবে আমাদের সমাজে এ রোগ বা রোগী নিয়ে কুসংস্কার আছে, এসব বৈজ্ঞানিক কোন ব্যাখ্যাই নেই। তাই সবাইকে সামাজিকভাবে বেশি সচেতন হওয়া দরকার।’

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট