চট্টগ্রাম শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও ডিজিটাল নিরাপত্তায় কনটেন্ট বেইজড ফিল্টারিং ও মনিটরিং

প্রফেসর ড. ইকবাল আহমেদ

৪ অক্টোবর, ২০২৪ | ১২:৫৭ অপরাহ্ণ

তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বজুড়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে তথ্য আদান-প্রদান সহজ হয়েছে। এরই ফলস্বরূপ, শিক্ষাব্যবস্থা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট ব্যবস্থাপনা নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। কনটেন্ট বেইজড ফিল্টারিং, মনিটরিং এবং অ্যাসেসমেন্ট এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বর্তমান ডিজিটালযুগে তথ্যের বিশ্লেষণ, যাচাই এবং নিয়ন্ত্রণ একটি অপরিহার্য দিক হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষত শিক্ষাব্যবস্থা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

 

কনটেন্ট বেইজড ফিল্টারিং কী: কনটেন্ট বেইজড ফিল্টারিং হলো একধরনের সুপারিশ প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যবহারকারীর আগ্রহ এবং পূর্ববর্তী কার্যকলাপের ভিত্তিতে নতুন কনটেন্ট (ছবি, তথ্য, অডিও-ভিডিও) প্রস্তাব করা হয়। এই পদ্ধতি মূলত ব্যবহারকারীর পছন্দের বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করে এবং সেই অনুযায়ী নতুন কনটেন্ট দেখানোর জন্য একটি উপযুক্ত ফিল্টারিং পদ্ধতি প্রয়োগ করে। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর কার্যকলাপের বা সার্ফিং ওপর ভিত্তি করে কাজ করে।

 

কনটেন্ট মনিটরিং ও অ্যাসেসমেন্ট কী : কনটেন্ট মনিটরিং বলতে কোনো নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করা তথ্য বা কনটেন্টের নজরদারি বোঝায়। এর মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয়, ক্ষতিকারক বা অবৈধ কনটেন্ট শনাক্ত (হেইট স্পিচ, বিদ্বেষ, উস্কানি মূলক অডিও-ভিডিও, পর্ণোগ্রাফি) এবং প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। এটি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম এবং অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলোর জন্য, যেখানে তথ্যের অবাধ প্রবাহ রয়েছে। কনটেন্ট অ্যাসেসমেন্ট হল সেই প্রক্রিয়া, যেখানে শেয়ার করা কনটেন্টের গুণমান এবং বৈধতা যাচাই করা হয়। এটি ব্যবহারকারীর তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা এবং যথার্থতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এটি ব্যবহৃত হয় তথ্যের সত্য-মিথ্যা যাচাই, গুজব রোধ এবং ভুল তথ্য প্রতিরোধের জন্য।

 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কনটেন্ট ফিল্টারিং ও মনিটরিংয়ের সাফল্য লক্ষণীয় এবং এর ব্যবহার অনস্বীকার্য হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, যেমন ফেসবুক, টুইটার এবং ইউটিউব কনটেন্ট বেইজড ফিল্টারিং এবং মনিটরিংয়ের জন্য উন্নত এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে। গুজব, ভুয়া তথ্য, এবং বিদ্বেষমূলক মন্তব্য ফিল্টার করতে এবং সরিয়ে ফেলতে এদের নিজস্ব নীতিমালা ও কৌশল রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ফেসবুক ও টুইটার ভুয়া তথ্য এবং ভুল সংবাদ শনাক্ত করতে এবং মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির মাধ্যমে কনটেন্ট ফিল্টারিং করেছিল। চীন: চীনে সরকার কনটেন্ট মনিটরিং এবং ফিল্টারিং অত্যন্ত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। সেখানে ইন্টারনেটের ব্যবহারের ওপর কড়া নজরদারি রয়েছে এবং সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো তথ্য প্রকাশ করা যায় না। ফায়ারওয়াল প্রযুক্তির মাধ্যমে চীনা সরকার অবৈধ ও অপ্রয়োজনীয় কনটেন্ট ব্লক করে, যা ‘গ্রেট ফায়ারওয়াল’ নামে পরিচিত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন: ইউরোপের দেশগুলোতে কনটেন্ট বেইজড ফিল্টারিং ও মনিটরিং সাইবার নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিশেষভাবে ডিজিটাল পরিষেবাগুলোর উপর নিরীক্ষা করে, যাতে ভুয়া তথ্য এবং ক্ষতিকর কনটেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়াতে না পারে। ‘জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশন’ (এউচজ) এর আওতায় ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করা হয়।

 

কনটেন্ট বেইজড ফিল্টারিং ও মনিটরিংয়ের প্রয়োজনীয়তা এবং উপযোগিতা: বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে কনটেন্ট ফিল্টারিং ও মনিটরিংয়ের প্রয়োজনীয়তা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণগুলো হলো: ১) ভুয়া তথ্য ও গুজব প্রতিরোধ- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা বাংলাদেশের মতো দেশে একটি বড় সমস্যা। বিশেষ করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সামাজিক অস্থিরতা এবং ধর্মীয় সংবেদনশীলতা নিয়ে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করে। কনটেন্ট ফিল্টারিং এবং মনিটরিং এর মাধ্যমে গুজব এবং ভুয়া তথ্য শনাক্ত করা সম্ভব হবে। ২) শিক্ষার উন্নয়ন- বাংলাদেশে শিক্ষার ক্ষেত্রটি ক্রমবর্ধমানভাবে পরিবর্তনশীল এবং প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন প্রযুক্তির সংযোজন ঘটছে। তবে এতদসত্তে¡ও শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের গতি এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে হলে শিক্ষাক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। কনটেন্ট বেইজড ফিল্টারিং বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

 

ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এখনও প্রচলিত পাঠ্যক্রমভিত্তিক শিক্ষার ওপর নির্ভরশীল। তবে বিভিন্ন শিক্ষার্থীর শেখার ধরন ও আগ্রহ ভিন্ন হতে পারে। কনটেন্ট বেইজড ফিল্টারিং এই ব্যবধান পূরণ করতে পারে। এটি প্রতিটি শিক্ষার্থীর শিক্ষার ধরন অনুযায়ী উপযুক্ত শিক্ষাসামগ্রী সরবরাহ করতে সক্ষম। শিক্ষার্থীরা যেসব বিষয়ে আগ্রহী, সেসব বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে সুনির্দিষ্ট শিক্ষামূলক কনটেন্ট দেওয়া হলে শিক্ষার্থী আরও উৎসাহী হবে এবং শেখার মানও বৃদ্ধি পাবে।

 

প্রচুর শিক্ষাসামগ্রী থেকে প্রয়োজনীয় কনটেন্ট খুঁজে পাওয়া: ইন্টারনেটে হাজার হাজার শিক্ষামূলক কনটেন্ট রয়েছে, যার মধ্যে থেকে সঠিক এবং প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে পাওয়া অনেক সময় ব্যয়সাপেক্ষ ও ক্লান্তিকর হতে পারে। কনটেন্ট বেইজড ফিল্টারিং ব্যবহারকারীকে তার আগ্রহের বিষয়বস্তু খুঁজে বের করার ঝামেলা থেকে মুক্তি দেয় এবং দু্র সঠিক শিক্ষামূলক কনটেন্ট প্রদর্শন করে।

 

ডিজিটাল শিক্ষায় প্রবৃদ্ধি: বাংলাদেশে ডিজিটাল শিক্ষার প্রসার বাড়ছে, বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারির পরে অনলাইন শিক্ষার দিকে ঝোঁক বেড়েছে। কনটেন্ট বেইজড ফিল্টারিং শিক্ষার্থীদের অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্মগুলোতে আরও কার্যকরভাবে যুক্ত করতে পারে, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের আগ্রহ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন ও মানসম্মত শিক্ষামূলক কনটেন্ট পেতে সক্ষম হবে।

 

সাইবার নিরাপত্তা ও পর্নোগ্রাফি প্রতিরোধ: ইন্টারনেটের মাধ্যমে অপ্রাপ্তবয়স্করা সহজেই পর্নোগ্রাফি এবং অন্যান্য ক্ষতিকর কনটেন্টের সংস্পর্শে আসতে পারে। কনটেন্ট ফিল্টারিং এবং রিয়েল টাইম মনিটরিং এর মাধ্যমে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে পর্নোগ্রাফিক এবং ক্ষতিকর কনটেন্টের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে পর্নোগ্রাফির অবাধ প্রবাহ রোধে, শিশু-কিশোরদের সঠিক মানসিক বিকাশে এবং অভিভাবকদের প্যারেন্টিং সহজ করার জন্য ফিল্টারিং এবং রিয়েল টাইম মনিটরিং খুবই সময়োপযোগী কনটেন্ট বেইজড ফিল্টারিং এবং মনিটরিংয়ের প্রধান উপযোগিতাগুলো হলো- ১) ব্যক্তিগতকৃত শিক্ষা সরবরাহ: এটি শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যক্তিগতকৃত শিক্ষার অভিজ্ঞতা তৈরি করতে সহায়ক। শিক্ষার্থীরা যে বিষয়ে বেশি আগ্রহী, সেই বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে নতুন নতুন কনটেন্ট সরবরাহ করা হলে তারা আরও গভীরভাবে বিষয়টি বুঝতে সক্ষম হয়। এভাবে প্রতিটি শিক্ষার্থী তার আগ্রহ এবং দক্ষতার উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় শিক্ষামূলক কনটেন্ট পেতে পারে, এবং ফিল্টার টিউনিং এর মাধ্যমে শিক্ষকরাও তাদের শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা-সহায়ক তথ্য, রিসোর্চ সরবরাহ করতে পারে, যা শিক্ষার মান উন্নয়নে সহায়ক। ২) তথ্য বিশ্লেষণ এবং যাচাই: কনটেন্ট বেইজড ফিল্টারিং এবং মনিটরিং ব্যবহারকারীদের তথ্য বিশ্লেষণ এবং যাচাই করতে সহায়ক। এটি শিক্ষাব্যবস্থায় তথ্যের মান বজায় রাখতে সহায়ক এবং ভুয়া তথ্য রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ৩) সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ: ইন্টারনেটের মাধ্যমে সাইবার অপরাধ বাড়ছে। কনটেন্ট মনিটরিং সাইবার অপরাধ, যেমন হ্যাকিং, ভুয়া তথ্য প্রচার, এবং ক্ষতিকর কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করতে পারে।
বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রেক্ষাপটে কনটেন্ট বেইজড ফিল্টারিং ও মনিটরিংয়ের প্রয়োগ: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় কনটেন্ট বেইজড ফিল্টারিং এবং মনিটরিংয়ের প্রয়োগ সম্ভাবনাময়।

 

যদিও প্রযুক্তিগতভাবে দেশ এখনো অনেকভাবেই পিছিয়ে আছে, তবে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে ডিজিটাল সমাধানের ব্যবহার অপরিহার্য। ১) স্কুলপর্যায়ে: স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক কনটেন্ট প্রদান করা হয়। তবে শিক্ষার্থীদের চাহিদা এবং আগ্রহ অনুযায়ী উপযুক্ত কনটেন্ট সরবরাহ করা গেলে তারা আরও ভালোভাবে শিখতে পারবে। কনটেন্ট ফিল্টারিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সঠিক কনটেন্ট দেখানোর পাশাপাশি ক্ষতিকর কনটেন্ট ব্লক করাও সম্ভব হবে। ২) কলেজ পর্যায়ে: কলেজের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহী হয় এবং তাদের বিশেষায়িত কনটেন্টের প্রয়োজন হয়। কনটেন্ট ফিল্টারিং ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য ও গবেষণামূলক কনটেন্ট সহজে সরবরাহ করা যেতে পারে, যা তাদের শিক্ষার মান বাড়াবে। এছাড়া, কনটেন্ট মনিটরিং ব্যবহার করে কোনো ধরনের ভুয়া তথ্য বা ক্ষতিকর কনটেন্টের বিস্তার রোধ করা সম্ভব হবে। ৩) বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে: বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট বিষয়ে গভীরভাবে জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করে। কনটেন্ট বেইজড ফিল্টারিংয়ের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন গবেষণা পত্র, প্রবন্ধ, বই এবং লেকচারের মধ্যে থেকে সঠিক তথ্য পেতে সক্ষম হবে। এটি গবেষণা কার্যক্রমে সাহায্য করতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় রিসোর্স সহজলভ্য করবে।

 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও ভুয়া তথ্য প্রতিরোধে কনটেন্ট ফিল্টারিং ও মনিটরিং: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদিতে গুজব ও ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত। কনটেন্ট মনিটরিং ও ফিল্টারিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ধরনের তথ্য নিয়ন্ত্রণ করা যায়। গুজব রোধ: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়া একটি বড় সমস্যা। উদাহরণস্বরূপ, করোনা মহামারি এবং বর্তমান ছাত্র-আন্দোলনের সময় ভুয়া তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে বিভিন্ন পক্ষ জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করেছিল। কনটেন্ট মনিটরিং ও ফিল্টারিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে গুজব ছড়ানোর আগেই তা শনাক্ত করা সম্ভব হবে। ভুয়া তথ্য প্রতিরোধ: কনটেন্ট মনিটরিং এবং অ্যাসেসমেন্ট ব্যবহার করে কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব। ভুয়া তথ্য শনাক্ত করার জন্য অও-ভিত্তিক ফিল্টারিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলে ভুয়া কনটেন্ট বøক করা সম্ভব হবে। পর্নোগ্রাফি রোধ: ইন্টারনেটের মাধ্যমে অপ্রাপ্তবয়স্করা সহজেই পর্নোগ্রাফিক কনটেন্টের সংস্পর্শে আসতে পারে, যা মানসিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিকর। কনটেন্ট ফিল্টারিং, মনিটরিং এবং অ্যাসেসমেন্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি এবং অন্যান্য ক্ষতিকর কনটেন্ট ব্লক করা সম্ভব।

 

বাংলাদেশে কনটেন্ট ফিল্টারিং, মনিটরিং এবং অ্যাসেসমেন্ট প্রযুক্তি বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ এবং সমাধানের উপায়: বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে কনটেন্ট বেইজড ফিল্টারিং বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে দেশের প্রযুক্তিগত অবকাঠামো, ইন্টারনেট সুবিধা, এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপযুক্ত প্রযুক্তির অভাবের কারণে এটি বাস্তবায়ন করা কিছুটা কঠিন হতে পারে। গ্রামীণ এলাকাগুলোতে এখনও ইন্টারনেট সুবিধা অপ্রতুল, ফলে সেখানে কনটেন্ট বেইজড ফিল্টারিংয়ের কার্যকারিতা কম হতে পারে। সঠিক এবং প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব এবং নীতিমালা প্রণয়ন ছাড়া এই ধরনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং প্রয়োগ কঠিন। অবাধ তথ্য প্রবাহ, তথ্য অধিকার এবং গনতান্ত্রিক দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতার মতন বিষয়গুলো মাথায় রেখে উপযোগিতা অনুযায়ী ফিল্টারিং, মনিটরিং-এর নীতিমালা করা চ্যালেঞ্জিং তবে অসম্ভব নয়। এই ব্যাপারে সকল স্টেইকহোল্ডারদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। সরকারের তথ্য-প্রযুক্তি, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার, নেটওয়ার্ক এক্সপার্ট, আইটি শিল্প, আইটি এক্সপার্ট (সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়ার), আর্থ-সামাজিক বিশ্লেষক, শিক্ষা বিশ্লেষক, আইন-নিরাপত্তা বিশ্লেষক, অভিভাবকবৃন্দ সহ সবাইকে একযোগে এই ব্যাপারে সংযুক্ত করতে হবে।
পরিশেষে, কনটেন্ট বেইজড ফিল্টারিং, মনিটরিং এবং অ্যাসেসমেন্টের ব্যবহার বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এটা এতক্ষণে প্রমাণিত। শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত ও প্রয়োজনীয় কনটেন্ট প্রদান করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও ভুয়া তথ্য প্রতিরোধে এর কার্যকারিতা অপরিসীম। তবে এর জন্য চাই সমন্বিত নীতিমাল, আইন-প্রণয়ন এবং সঠিক বাস্তবায়ন।

 

 

প্রফেসর ড. ইকবাল আহমেদ, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

 

পূর্বকোণ/এমটি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট