কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বর্তমানে সব খাতেই ছড়িয়ে পড়ছে। চিকিৎসা, শিক্ষা, প্রযুক্তি, ব্যবসায়িক কার্যকম ও শিল্পোৎপাদন সব ক্ষেত্রেই জেনারেটিভ এআইয়ের বিচরণ। সম্প্রতি আর্থিক খাতে জেনারেটিভ এআই সিস্টেমের ব্যবহার ও এর প্রভাব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
বিটিসি পিয়ার্সের বরাতে টেকটাইমসের খবরে জেনারেটিভ এআই ব্যবহারে সুবিধার কথা স্বীকার করা হয়েছে। পাশাপাশি এর ব্যাপক ব্যবহার শুরুর আগে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিচক্ষণতা চর্চা ও ঝুঁকি মূল্যায়নের বিষয়ে জানানো হয়েছে। জেনারেটিভ এআইয়ের অন্যতম উদাহরণ হলো ওপেনএআইয়ে চ্যাটজিপিটি। যা টেক্সট, ইমেজ, অডিওসহ বিভিন্ন ফরম্যাটে কনটেন্ট তৈরি করতে পারে।
আইএমএফের প্রতিবেদনে, আর্থিক পরিষেবা খাতে এআই ব্যবহারের মাধ্যমে কী ধরনের সফলতা বা সুবিধা পাওয়া সম্ভব এবং গ্রাহক অভিজ্ঞতায় কী রূপ পরিবর্তন আনবে সেসব বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তবে প্রতিবেদনে তথ্যের গোপনীয়তা, পক্ষপাত, নির্ভুলতা, সাইবার নিরাপত্তা ও আর্থিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে সম্পর্কিত উল্লেখযোগ্য ঝুঁকিগুলোর বিষয়ে সতর্কও করা হয়েছে। চ্যাটজিপিটির বিস্তার ও এর কার্যকারিতা বিশ্বের বিভিন্ন খাতে এআইয়ের ব্যবহার বাড়াতে উৎসাহ দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। ক্যাপিটাল ওয়ান, জেপি মরগ্যান ও গোল্ডম্যান স্যাকসের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন এ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।
প্রতিবেদনে আইএমএফ জানায়, স্বয়ংক্রিয়ভাবে নথি প্রক্রিয়া করা, বিস্তারিত গবেষণা, কাস্টমার চ্যাটবট ও পণ্যের উন্নয়নে আর্থিক খাতে দ্রুত এআইয়ের ব্যবহার শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে উৎকর্ষের পাশাপাশি প্রযুক্তির পরিবর্তন ও এর ব্যবহার শুরুর আগে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে সতর্কও করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আর্থিক খাতে বেশকিছু ঝুঁকিপূর্ণ দিকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো তথ্যের সুরক্ষা, এমবেডেড বায়স, বিশ্বাসযোগ্যতা, পক্ষপাত, ব্যাখ্যা ও সাইবার নিরাপত্তা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেনারেটিভ এআই আর্থিক খাতে এআই ব্যবহারের সিদ্ধান্তকে ত্বরান্বিত করবে। বৈশ্বিক বাজার ব্যবস্থায় ক্রমাগত চাপ সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আর্থিক খাতে এআই ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে। এর পেছনে খরচ কমানো, অধিক মুনাফা বা প্রবৃদ্ধি, ক্লায়েন্ট ইন্টারফেসে পরিবর্তন, পূর্বাভাসে নিশ্চয়তা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার বিষয় উল্লেখযোগ্য।
আর্থিক খাতে এআইয়ের ব্যবহার শুরুর আগে আইএমএফ বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছে। এর মধ্যে এআই ব্যবহারের আগে পাইলট টেস্টিং ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পর্যালোচনা করতে হবে। দ্বিতীয় ধাপে বা পদক্ষেপ হিসেবে এআইনির্ভর সিদ্ধান্ত পর্যবেক্ষণে ও জবাবদিহিতার জন্য মানব নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হবে। সার্বিকভাবে ব্যবহারের আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। সবশেষে ঝুঁকির বিষয়ে পুরোপুরি না জানা পর্যন্ত এআইয়ের ব্যবহার বন্ধে নীতিমালা করতে হবে।
প্রতিবেদনটি আর্থিক খাতে জেনারেটিভ এআই অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাব্য সুবিধা ও অসুবিধাগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে। নতুন এ প্রযুক্তির ব্যবহার প্রতিশ্রুতিশীল হলেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রতিবেদনে এআইয়ের মাধ্যমে বড় ক্ষতি হওয়া থেকে সুরক্ষিত থাকতে নীতিমালা ও জবাবদিহিতার বিষয়ও বলা হয়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সেভাবে এআইয়ের ব্যবহার শুরু হতে দেরি হলেও অন্য খাত এগিয়ে যাচ্ছে। এদিক থেকে মেটা নতুন এআই মডেল আনার ঘোষণা দিয়েছে, যা কম্পিউটারের কোড লিখতে সহায়তা করবে।
কোড লামা নাম দেয়া হয়েছে এটির। কোম্পানির তথ্যানুযায়ী, এটি বিনামূল্যে ব্যবহার করা যাবে। এআই মডেলটি কোনো মানুষের দেয়া টেক্সট প্রম্পট অনুযায়ী কোড লিখে দেবে। ব্লগপোস্টে আরো বলা হয়, কোড লিখে শেষ করার পাশাপাশি ডিবাগিংয়ের কাজেও এআই মডেলটি সহায়তা করবে।
গত বছর চ্যাটজিপিটি চালুর পর বিভিন্ন এন্টারপ্রাইজ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান জেনারেটিভ এআইয়ের বাজারে প্রবেশ করতে চাইছে। মূলত সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন পরিষেবার বিকাশই তাদের
মূল লক্ষ্য। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মালিকানা প্রতিষ্ঠান মেটা চলতি বছর বেশকিছু এআই মডেল চালু করেছে। এর মধ্যে ওপেন সোর্স ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল লামাও রয়েছে। প্রযুক্তিবিশারদদের মতে যা মাইক্রোসফটের অর্থায়নে পরিচালিত ওপেনএআই ও অ্যালফাবেটের গুগলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা বাড়াবে।
যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফট পেইন্ট, ফটোজ ও ক্লিপিং টুল অ্যাপে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সক্ষমতা যুক্ত করতে চাইছে। এসব অ্যাপে মাইক্রোসফট জেনারেটিভ এআই, অবজেক্ট আইডেন্টিফিকেশন ও অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন ফিচার যুক্ত করতে চাইছে।
উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের জন্য পেইন্ট সবচেয়ে পুরনো ছবি এডিটিং টুল। বিশ্লেষকদের মতে, এআইয়ের সুবিধা যুক্ত হলে ছবি তৈরি ও সম্পাদনায় ব্যবহারকারীরা ভালো সুবিধা পাবেন। উদাহরণস্বরূপ নির্দিষ্ট রঙ ব্যবহার করে ক্যানভাস তৈরির কমান্ড দেয়া যাবে। এছাড়া ছবিতে কোনো বস্তু যুক্ত করা বা টেক্সট প্রম্পটের মাধ্যমে ছবি তৈরি করা যাবে। সৌজন্য: বণিক বার্তা
পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ