কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির দুনিয়ায় নিয়ে এসেছে নতুন সমীকরণ। চ্যাটজিপিটির মতো চ্যাটবটগুলোর উত্থান এর উজ্জ্বল প্রমাণ। বিপুলসংখ্যক মানুষ গ্রহণ করে নিচ্ছে উদীয়মান প্রযুক্তিকে। বিশেষ করে রিটেইল পরিষেবা খাতে জনপ্রিয়তা বাড়ছে এআই চ্যাটবটের। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে ২০২৮ সালের মধ্যে এ খাতে ব্যয় ছয় গুণ বেড়ে ৭ হাজার ২০০ কোটি ডলারে পৌঁছবে। খবর দ্য ন্যাশনাল।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান জুনিপার রিসার্চ সম্প্রতি চ্যাটবটের বৈশ্বিক বাজারসংক্রান্ত একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ব্যয় বাড়ার পেছনে প্রধান নিয়ামক হিসেবে থাকবে ওপেন ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল। এক্ষেত্রে ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটির অবদান থাকবে সবচেয়ে বেশি।
গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, রিটেইল পরিষেবায় চ্যাটবট ব্যবহার গত কয়েক বছরে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল চলতি বছরে এ খাতে আধিপত্য দেখাচ্ছে। চ্যাটবট ব্যবহার করে রিটেইল পরিষেবায় হওয়া মোট ব্যয়ের ৮৫ শতাংশের হিস্যাই বর্তমানে এ অঞ্চলের। ব্যয় বাড়ার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে অর্থ লেনদেনের জন্য ম্যাসেজিং অ্যাপের ওপর নির্ভরতা। চীনের উয়িচ্যাট, জাপানের লাইন ও দক্ষিণ কোরিয়ার কাকাও অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে অনলাইন পরিষেবা নিয়ে। তার পরও এশীয় অঞ্চলের আনুপাতিক আধিক্য কিছুটা কমবে আগামী পাঁচ বছরে। হিস্যা ৬৬ শতাংশে নেমে আসবে। এর কারণ এশীয় অঞ্চলে জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার আশঙ্কা নয়, বরং অন্যান্য অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের পরিষেবায় চ্যাটবটের ব্যবহার বৃদ্ধি। বিশেষ করে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে রিটেইল পরিষেবায় দ্রুতগতিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে চ্যাটবট।
রিটেইল পরিষেবায় চ্যাটবটের ব্যবহার সম্প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আরো জোরালো হচ্ছে। চ্যাটবট প্রতিষ্ঠানগুলো এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বাইরে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারিত করতে বেশ মনোযোগী।
জুনিপার রিসার্চের বিশ্লেষক ফ্রেডরিখ শ্যাভেজ দাবি করেছেন, রিটেইল পরিষেবা বাড়ার ক্ষেত্রে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে ওপেন ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলের অগ্রগতি। মাঝারি ব্যবসাগুলো চ্যাটবটের পেছনে ব্যয় করছে আগ্রহ নিয়ে, যা কিছুদিন আগেও এতটা ছিল না। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে চ্যাটবটগুলো আগে তেমন গুরুত্ব পেত না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক অ্যালগরিদম সামনে আনা ছিল ব্যয়বহুল। চ্যাটজিপিটি সে ধারণায় পরিবর্তন এনেছে। চ্যাটবটকে অল্প পরিসরের ব্যবসায়ে ব্যবহারের ক্ষেত্রও সহজ হয়েছে।
এআই বড় ব্যবসায়িক পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক আগে থেকেই ব্যবহৃত হয়। জেনারেটিভ এআই আসার পর বেড়েছে গতি ও পরিসর। প্রযুক্তিটিকে জনপ্রিয় করে তুলেছে চ্যাটজিপিটি। বিভিন্ন ধরনের উপাত্ত তৈরি করতে সক্ষম চ্যাটজিপিটি। এটি অডিও, কোড, ছবি, লেখা, সিমুলেশন, থ্রিডি অবজেক্ট ও ভিডিও তৈরি করতে পারে। চ্যাটজিপিটির জনপ্রিয়তার অন্যতম প্রধান কারণ আলাপচারিতার ধরন বুঝে উত্তর দেয়ার সক্ষমতা।
এআই প্রযুক্তির কারণে প্রভাবিত হয়েছে মাঝারি রিটেইল পরিষেবা খাতের বিকিকিনি। বাজারের বিভিন্ন ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সুবিধাজনক অবস্থানে। এআই সেখানে তৈরি করেছে স্বতন্ত্র অবস্থান। সেলফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। প্রভাব পড়ছে রিটেইল চ্যাটবটে। ২০২৮ সালের মধ্যে সিম ব্যবহারের সংখ্যা ১ হাজার কোটি অতিক্রম করবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সংখ্যাটি রয়েছে ৯০০ কোটি ডলারের ঘরে। ব্যবহারকারী বাড়লে তারা পরিষেবা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করবে চ্যাটবটের মাধ্যমে। তার চেয়ে বড় কথা, রিটেইল চ্যানেলগুলো তাদের সক্ষমতা বাড়াতে চাইবে। সেক্ষেত্রে চ্যাটবট প্রধান সমাধান। সক্ষমতা ও সময় বাঁচানোর মাধ্যমে পরিষেবা খাতের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সহজ করবে চ্যাটবট। তথ্যসূত্র: বণিক বার্তা
পূর্বকোণ/সাফা