চট্টগ্রাম রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

বিজ্ঞানের আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ?

১৯ জুন, ২০২৩ | ১০:২৮ অপরাহ্ণ

প্রযুক্তির নানারকম আবিষ্কার যেন মনে করিয়ে দেয় বিনয় মুখোপাধ্যায়ের উক্তি ‘আধুনিক বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ।’ সভ্যতা যদি যন্ত্র হয়, বিজ্ঞান তবে যন্ত্রী।

প্রযুক্তির অগ্রযাত্রাকে যেমন অস্বীকার করা যায় না ঠিক তেমনই জয়যাত্রার সমান্তরালেই সূচিত হচ্ছে ধ্বংসের ঘূর্ণি। ‘অতিযান্ত্রিকতা’ মানুষের বোধের ভূমিটি কেড়ে নিচ্ছে কিনা, সেই প্রশ্ন ওঠা এ একুশ শতকে অনিবার্য।

এ বিষয়ে প্রায়ই শঙ্কা প্রকাশ করে সচেতনতা জারির চেষ্টা করেন বিশেষজ্ঞরা। কল্যাণকর বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পাশাপাশি তৈরি হয়েছে মারণাস্ত্রও-রাসায়নিক বিষক্রিয়ায় দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে এ বিশ্ব। যেমন বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

এর কারণে মানব সভ্যতা যে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে না, তা নিয়ে কোনো বিজ্ঞানীই সুনিশ্চিত আশ্বাস দিতে পারছেন না। তেমনই, আর এক বৈপ্লবিক আবিষ্কার নাড়া দিয়েছে বিশ্বকে।

সম্প্রতি মার্কিন একদল গবেষক ‘স্টেম সেল’ ব্যবহার করে কৃত্রিম মানব ভ্রূণ তৈরি করেছেন। যদিও এ আবিষ্কারকে বিজ্ঞানের বড় এক অগ্রগতি হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। শুক্রাণু বা ডিম্বাণু ছাড়াই স্টেম সেল ব্যবহার করে সফলভাবে তৈরি করা হয়েছে এই ভ্রূণ। এগুলোতে হৃৎপিণ্ড বা মস্তিষ্কের মতো অঙ্গ থাকে না, তবে এতে সাধারণত প্লাসেন্টা, কুসুম থলি এবং ভ্রূণে বিকশিত হয় এমন কোষ থাকে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ উদ্ভাবন গর্ভপাতের কারণ ও মানব বিকাশের বিভিন্ন বিষয়াদি নতুন করে বুঝতে সহায়তা করবে। তবে, আইনি ও নীতিগত বিভিন্ন প্রশ্নও জন্ম নিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বস্টন শহরে অলাভজনক সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর স্টেম সেল রিসার্চ’ আয়োজিত বার্ষিক সভায় এ কৃত্রিম ভ্রূণকে ১৪ দিন পর্যন্ত বিকশিত প্রাকৃতিক ভ্রূণের পর্যায়ে নেওয়ার বর্ণনা দেন ‘কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি’ ও ‘ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’র অধ্যাপক ম্যাগডালেনা জারনিকা-গোয়েটজ।

জানা গেছে, এ কাঠামোর জন্য ডিম্বাণু বা শুক্রাণুর প্রয়োজন পড়ে না। আর এতে স্পন্দনশীল হৃৎপিণ্ড বা মস্তিষ্ক গঠনে ব্যবহৃত কোষ না থাকলেও প্ল্যাসেন্টাসহ অন্যান্য অঙ্গ ও ভ্রূণের নিজের গঠন তৈরিতে ব্যবহৃত কোষ আছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবচেয়ে বড় যে আশঙ্কার জায়গা হলো, ‘ডিজাইনার বেবি’ উৎপাদনের। যাদের ক্ষমতা আছে, তারা অর্থ ব্যয় করে ‘সর্বগুণযুক্ত, নীরোগ, শক্তিশালী’ সন্তানের বাবা-মা হবে। সেসব সন্তানই কি ভবিষ্যৎ বিশ্বে চালকের আসনে বসবে? তাদের কাছে ক্রমাগত পর্যুদস্ত হতে থাকবে স্বাভাবিক প্রজননে জন্ম নেওয়া শিশু এবং পরবর্তীকালের নাগরিক?

যদিও এটিকে মানব ভ্রূণ বলতে নারাজ ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটের সহযোগী গবেষণা পরিচালক জেমস ব্রিসকো। তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, মানব ভ্রূণের স্টেম সেল থেকে প্রাপ্ত মডেল তৈরির জন্য প্রবিধানের জরুরি প্রয়োজন রয়েছে। ভ্রূণ-সদৃশ কাঠামো তার ল্যাব ইতোমধ্যেই তৈরি করেছে। জেরনিকা-গোয়েটজ বলেন, ‘আমি শুধু জোর দিয়ে বলতে চাই যে তারা মানব ভ্রূণ নয়, সিন্থেটিক ভ্রূণ।

এগুলো ভ্রূণের মডেল, কিন্তু তারা খুব সুন্দর দেখতে একেবারে মানব ভ্রূণের মতো। পরে আবিষ্কারের জন্য তারা গুরুত্বপূর্ণ পথ দেখাবে’। গবেষকরা আশা করছেন, এ মডেল ভ্রূণগুলো মানব বিকাশের ‘ব্ল্যাক বক্সে’ আলোকপাত করবে। তথ্যসূত্র: যুগান্তর

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট