চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪

গবেষণায় ইঁদুরের আয়ু বেড়েছে, ঠেকিয়েছে ক্যানসারও

নতুন ওষুধ মানুষের বুড়িয়ে যাওয়ার গতি কমিয়ে দেবে

পূর্বকোণ ডেস্ক

২৭ জুলাই, ২০২৪ | ১:৪০ অপরাহ্ণ

একটি নতুন ওষুধ গবেষণাগারে প্রাণীদের আয়ু প্রায় ২৫ শতাংশ বাড়িয়েছে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই ওষুধ মানুষের বুড়িয়ে যাওয়ার গতিও কমিয়ে দিতে পারবে। এই ইঁদুরগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে ‘সুপারমডেল গ্র্যানি’। ওষুধ প্রয়োগের পর ইঁদুরগুলোকে আগের চেয়ে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও শক্তিশালী দেখা গেছে। সেইসঙ্গে ওষুধ না দেওয়া ইঁদুরের তুলনায় ক্যানসার কম হতে দেখা গেছে এদের মধ্যে।

ওষুধটি ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে মানুষকেও দেওয়া হচ্ছে; তবে মানুষের ওপরও এটি একই প্রভাব ফেলে কি না, তা এখনও জানা যায়নি।

 

দীর্ঘদিন ধরেই বিজ্ঞানীরা মানুষের বুড়িয়ে যাওয়ার গতি রোধে ও আয়ু বাড়াতে কাজ করছেন। গবেষণাগারেও দেখা গেছে, অনেক প্রাণীর বেশ কিছু খাবার গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দিলে তারা বেশিদিন বাঁচে। বিজ্ঞানীরা এখন বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া ধীরগতির করে দিতে কাজ করছেন।

 

ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের এমআরসি ল্যাবরেটরি অভ মেডিকেল সায়েন্স ও সিঙ্গাপুরের ডিউক-এনইউএস মেডিকেল স্কুলের গবেষণাদলটি ইন্টারলিউকিন-১১ নামক একটি প্রোটিন নিয়ে গবেষণা করছিলেন। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে এ প্রোটিনের উপস্থিতিও বাড়ে। এটি মানবদেহে প্রদাহ বাড়ায়। গবেষকরা বলছেন, আমাদের বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণকারী কয়েকটি জিনিসের ওপর এ প্রোটিনের প্রভাব রয়েছে।

গবেষকরা দুটি পরীক্ষা করেন। প্রথম পরীক্ষায় তারা ইঁদুরের শরীরে জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে ইন্টারলিউকিন-১১ উৎপাদন বন্ধ করে দেন।

 

দ্বিতীয় পরীক্ষায় তারা ইঁদুরগুলোর বয়স ৭৫ সপ্তাহ (প্রায় ৫৫ বছর বয়সি ব্যক্তির সমতুল্য বয়স) হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। এরপর প্রাণীগুলোকে একটি ওষুধ দেন যা তাদের শরীর থেকে ইন্টারলিউকিন-১১ রেচন (অপসারণ) করে। পরীক্ষা সম্পন্ন করার পর দেখা যায়, পরীক্ষা ও লিঙ্গভেদে ইঁদুরগুলোর আয়ু ২০-২৫ শতাংশ বেড়েছে।

 

বিজ্ঞান জার্নাল ‘নেচার’-এ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। গবেষণাগারে থাকা বয়স্ক ইঁদুর প্রায়ই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। তবে দেখা গেছে, যেসব ইঁদুরের শরীরে ইন্টারলিউকিন-১১ নেই, তাদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হার একেবারেই কম।

 

এছাড়া এসব ইঁদুরের পেশির কার্যক্ষমতাও বেড়েছে। সেইসঙ্গে তাদের গড়ন আরও ছিপছিপে হয়েছে, দেহের পশম হয়েছে আরও স্বাস্থ্যবান। এরা শারীরিকভাবে দুর্বলও হয়েছে কম। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ প্রক্রিয়া মানুষের ওপরও সমান কার্যকরী কি না এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সহনীয় মাত্রায় থাকবে কি না। বেড়ে ওঠার সময় মানবদেহে ইন্টারলিউকিন-১১-এর ভূমিকা রয়েছে। মানুষের দেহে এ প্রোটিন উৎপাদন না হওয়ার ঘটনা খুবই বিরল। ইন্টারলিউকিন-১১ না থাকলে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।

 

বিজ্ঞানীদের ধারণা, বয়স বাড়ার পর ইন্টারলিউকিন-১১ মানুষের বুড়িয়ে যাওয়া প্রক্রিয়া দ্রæত করতে ভূমিকা রাখে। বিজ্ঞানীরা যে অ্যান্টিবডি তৈরি করেছেন সেটি ইন্টারলিউকিন-১১-কে আক্রমণ করে। বর্তমানে এ ওষুধ ফুসফুসের ফাইব্রোসিসে আক্রান্ত রোগীদের ওপর পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে।
গবেষণাদলের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক স্টুয়ার্ট কুক বলেন, পরীক্ষাটি এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। তবে এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বলছে, এ ওষুধ গ্রহণ নিরাপদ।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট