হাইপো থাইরয়েডিজম থাকলে কোষে ইনসুলিন রিসেপ্টর কমে যায়, ফলে একটা কৃত্রিম ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়। আবার, হাইপো থাইরয়েডিজম থাকলে শরীরে যথেষ্ট পরিমাণ থাইরয়েড হরমোন থাকে না, সেটাকে কভার করতে শরীর স্ট্রেস হরমোন কর্টিসোলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। মূলত এই বাড়তি কর্টিসোলের কারণেই হাইপো থাইরয়েডিজমে আক্রান্ত মানুষ অতি সামান্য বিষয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত-আতঙ্কিত হয়ে পড়ে বলে মনে করা হয়।
এখন, কর্টিসোল হরমোন বাড়ার সমস্যা হচ্ছে, আপনার বারবার ক্ষুধা লাগবে, শরীর গ্লুকোজ চাবে। কিন্তু টানা যদি কর্টিসোল লেভেল বেশি থাকে (হাইপো থাইরয়েডিজমে কমন প্রবলেম) তখন গ্লুকোজ কোষের ভেতর ঢুকতে বাধাগ্রস্ত হয়, ফলে তা রক্তে ঘুরে বেড়ায়। রক্তে বেড়ে যেতে থাকে গ্লুকোজ।
এই সমস্যার সমাধান আমাদের শরীর কিভাবে করে?
এক্সট্রা ইনসুলিন তৈরি করে। এই এক্সট্রা ইনসুলিনের কারণে শরীর স্টোরেজ মুডে চলে যায়, আর ফ্যাট ঝরাতে চায় না।
আবার, থাইরয়েড নিজে হচ্ছে সবচে শক্তিশালী ফ্যাট বার্নিং হরমোন। হাইপোথাইরয়েডিজম মানে এই হরমোনের অভাব। ফলে, রোগী অটোম্যাটিক্যালি ওয়েট গেইন করবে।
এই তিনটি ঘটনার সম্মিলিত প্রভাবে হাইপোথাইরয়েড পেশেন্টের ওজন কমানো অত্যন্ত কঠিন এক গোলক ধাধা আকারে উপস্থিত হয়। প্রায় ক্ষেত্রেই ওজন কমালেও আবার ওজন ফিরে আসে।
বিশেষভাবে, হাইপোথাইরয়েড মা যদি গর্ভবতী থাকাকালীন ডায়বেটিসে আক্রান্ত হন এবং অতিরিক্ত ওজনের সন্তান জন্ম দেন, পরবর্তীতে তার ওজন কমানো অত্যন্ত মুশকিলের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
এই ঘটনাগুলো ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন কেন?
যাতে আপনারা বুঝে বুঝে ওয়েট লস করতে পারেন, আবার বাড়তি প্রত্যাশার চাপ নিজের ওপর তৈরি না করেন।
হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে আইডিয়াল ওয়েট লস মাসে ১ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ৫ কেজি হওয়া সম্ভব। এর বেশি হওয়া খুবই কঠিন।
থাইরয়েড ম্যানেজমেন্টের সবচে ভাল উপায় কী?
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের সাথে লো জিআই ডায়েট করা এবং আয়োডিন, জিংক, সেলেনিয়াম, বি ভিটামিন্স নিয়মিত নেয়া।
চিনিজাতীয় খাবার সম্পূর্ণ পরিহার করার পাশাপাশি গরুর দুধ, গম, ভুট্টা, সয়বিন এড়িয়ে চলা এবং সবশেষে, নিয়মিত কার্ডিও করা। পাশাপাশি প্রয়োজনে নিয়মিত TSH চেক করে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী থাইরয়েড মেডিকেশান নেয়া।
লেখক: ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ