চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

নাক থেকে রক্তপাত হলে যা করবেন

অনলাইন ডেস্ক

৯ জুন, ২০২৪ | ৯:২৫ অপরাহ্ণ

নাক দিয়ে রক্ত পড়া নিজে কোনো রোগ নয়; বরং এটি বিভিন্ন রোগের লক্ষণ মাত্র। নাক, কান, গলা ছাড়াও শরীরের অন্য অনেক রোগের কারণেও নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। যেকোনো বয়সেই এটি হতে পারে। এটি নাকের একপাশ দিয়ে অথবা উভয় পাশ দিয়ে হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি একটি সাধারণ সমস্যা হিসেবে দেখা দিলেও কখনো কখনো এতে জীবনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

 

এপিসট্যাক্সিস: নাক দিয়ে রক্ত পড়ার সমস্যাটি চিকিৎসাবিদ্যায় এপিসট্যাক্সিস নামে পরিচিত। সাধারণত ৬০ শতাংশ মানুষ জীবনে কোনো না কোনো সময় নাক দিয়ে রক্ত পড়ার সমস্যার সম্মুখীন হয়। এদের মধ্যে অন্তত ছয় শতাংশের ডাক্তার ও হাসপাতালের শরণাপন্ন হতে হয়।

 

রক্ত পড়ার কারণ: নাক দিয়ে বিভিন্ন কারণে রক্ত পড়তে পারে। অনেক ক্ষেত্রে কোনো কারণ ছাড়াই রক্তপাতের সমস্যা দেখা যায়। এটাকে বলে ইডিওপ্যাথিক বা অজানা কারণ। সাধারণত স্থানিক কারণ বা লোকাল, সিস্টেমিক কারণ বা অন্যান্য অসুখঘটিত কারণে নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে পারে।

 

লোকাল বা স্থানিক কারণের মধ্যে আছে-
আঘাত: যেকোনো ধরনের আঘাত যা নাকে লাগে এমন। যেমন-মারামারি, সড়ক দুর্ঘটনা, নাকের ভেতরে আঙুল বা অন্য কিছু দিয়ে খোঁচানো, নাকের ভেতরে অপারেশনজনিত আঘাত, কোনো ধরনের রাসায়নিক বা অতিরিক্ত উত্তাপ, বিস্ফোরণে আশপাশের বাতাসে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হলে।

 

নাকের বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন। যেমন-

* ক্রনিক রাইনাটিস বা ঘন ঘন সর্দি
* সাইনোসাইটিস বা সাইনাসের প্রদাহ
* এডেনয়ডাইটিস বা এডেনয়েড গ্রন্থির প্রদাহ
* এট্রফিক রাইনাইটিস
* রাইনসপোরিডিওসিস
* যক্ষ্মা বা টিউবারকিউলোসিস
* ডিপথেরিয়া
* মিসেলস
* ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো সাধারণত ভাইরাল সর্দি-জ্বর ইত্যাদি।

 

নাকের বিভিন্ন টিউমার। যেমন-

* এনজিওফাইব্রোমা
* নেসোফ্যারিনজিয়াল ক্যান্সার
* হেমানজিওমা
* ইনভারটেড পেপিলোমা
* সারকোমা ইত্যাদি।

 

অন্যান্য: স্থানিক আরো কিছু কারণের মধ্যে আছে-

* নাকের মাঝখানের হাড় অতিরিক্ত বাঁকা
* নাকের মাঝখানের পর্দায় ছিদ্র

 

শারীরিক কারণগুলোর মধ্যে আছে-

* উচ্চ রক্তচাপ-বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এ কারণেই নাক দিয়ে রক্ত পড়ার সমস্যা বেশি হতে দেখা যায়।
* হার্ট ফেইলিউর
* রক্তশূন্যতা-যখন তা অনেক বেশি মাত্রায় হয়।
* জন্ডিস বা লিভারের প্রদাহ
* লিভার সিরোসিসের মতো লিভারের অসুখ

 

রক্তের বিভিন্ন রোগ, যেমন-

* এপ্লাস্টিক অ্যানেমিয়া
* হিমোফিলিয়া
* অ্যাথেরোসক্ল্লেরোসিস বা রক্তনালিতে চর্বি জমা হওয়া
* থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া
* পারপুরা

 

জন্মগত ত্রুটি: রক্তনালির কিছু জন্মগত ত্রুটি থাকলেও নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।

ওষুধ: অ্যাসপিরিন, ক্লোপিডেগরাল, হেপারিনের মতো রক্ত তরলীকরণের জন্য সেবন করতে হয়-এমন কিছু ওষুধের নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।

 

যেখান থেকে বেশি রক্তপাত হয়: নাকের মাঝখানের পর্দার সামনের নিচের দিক থেকে বেশি রক্তপাত হয়। এখানে চারটি রক্তনালি একত্র হয়ে একটি রক্তজালিকা তৈরি করেছে, যা কিসেলব্যাকস প্লেক্সাস নামে পরিচিত। কোনো কারণে এই রক্তজালিকা ক্ষতিগ্রস্ত হলে, আঘাত পেলে, ফেটে গেলে নাক দিয়ে প্রচুর রক্তপাত হয়।

 

রক্ত পড়লে বাড়িতে যা করবেন: নাক দিয়ে রক্ত পড়লে ঘাবড়ে যাবেন না। নাকে অনেক ছোট ছোট রক্তনালি থাকে তাই অনেক রক্ত পড়তে পারে। রক্ত দেখেই অনেকে ঘাবড়ে যায়। ঘাবড়ে গেলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়।

 

* রক্তপাতের স্থানে আঙুল দিয়ে ৬-১০ মিনিট চেপে ধরে রাখুন।
* নাকে বরফ দিয়ে ঠাণ্ডা সেঁক দিন।
* নাক ভালো করে পরিষ্কার করে দিন।
* রোগীর উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস থাকলে রক্তচাপ পরিমাপ করুন। প্রয়োজনে রক্তচাপের ওষুধ সেবন করতে দিন।
* এর পরও রক্ত পড়া বন্ধ না হলে রোগীকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে এবং একজন নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং প্রয়োজনে অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম ও গজ দিয়ে নাসারন্ধ্র বন্ধ করে দিতে হবে।

 

চিকিৎসা: কী কারণে রক্ত পড়ছে সেটি নির্ণয় করে চিকিৎসা দিতে হয়। নাকের সামনের দিক থেকে রক্তপাত হলে খুব দ্রুত তা বন্ধ করা যায় কিন্তু পেছন বা ভেতরের দিক থেকে রক্তপাত হলে বহু ক্ষেত্রে তা বন্ধ করতে অনেক সময় লাগে। কিছু ক্ষেত্রে রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা, এক্স-রে, সিটি স্ক্যান লাগে। সাধারণত ন্যাসাল এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে রক্তপাতের জন্য দায়ী রক্তনালিগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় (ইলেকট্রোকটারি বা কেমিক্যাল কটারি)। বয়স্ক ব্যক্তিদের উচ্চ রক্তচাপজনিত এপিসট্যাক্সিস হলে সেটার চিকিৎসা করতে হয়। তথ্যসূত্র: কালের কণ্ঠ

 

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট