দেহতাপ বেড়ে গেলে একে আমরা জ্বর বলে থাকি। দেহে কোনো সংক্রমণ হলে জ্বর দেখা দেয়। আমাদের মগজে হাইপোথ্যালামাসে যে থারমোস্ট্যাট আছে, যা তাপ নিয়ন্ত্রক, তা নতুন করে পুনঃস্থাপিত হয়। দেহতাপ ৯৮.৬ ডিগ্রি বা ৩৭ ডিগি সেন্টিগ্রেড থাকলে একে বলা হয় স্বাভাবিক দেহতাপ।
জ্বর হলে দেহতাপ এক থাকে না, কমে-বাড়ে। কখনো দেহতাপ বাড়ে প্রতিদিন, তুঙ্গে ওঠে কয়েক ঘণ্টার জন্য, আবার পরে স্বাভাবিক হয়ে যায়। একে বলে ইন্টারমিটেন্ট ফিভার। আবার যে জ্বর একেবারেই ছাড়ে না তাকে বলে রেমিটেন্ট জ্বর।
জ্বরের পরিণতি কী?
জ্বর নিজে মারাত্মক নয়, কিন্তু এর অন্তর্গত কারণের জন্য সমস্যা হয়। তীব্র সংক্রমণে জ্বর ১০৩ ডিগ্রি হলেও ভয়ের কিছু নেই। তবে যারা হার্ট বা ফুসফুসের রোগী, তাদের জ্বর হলে ভাবনার কথা। খুব বেশি জ্বর, যেমন—১০৫.৮ ডিগ্রির ওপরে উঠলে তা ক্ষতিকর। এতে সেপসিস হয়ে দেহের নানা অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে। বাচ্চাদের জ্বর বেশি হলে খিঁচুনি হতে পারে।
কারণ: জ্বরের একমাত্র কারণ সংক্রমণ নয়। প্রদাহের জন্য বা অ্যালার্জির জন্য জ্বর হতে পারে। অটোইমিউন রোগ, এমনকি ক্যান্সারের জন্যও জ্বর হতে পারে। জ্বরের সচরাচর কারণের মধ্যে রয়েছে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, পাকস্থলী আর অন্ত্রের সংক্রমণ, মূত্রনালির সংক্রমণ ও ত্বকের সংক্রমণ।
১) পরীক্ষা-নিরীক্ষা
২) কমট্লিট ব্লাড কাউন্ট
৩) প্রস্রাব পরীক্ষা
৪) প্রস্রাব আর রক্তের কালচার
৫) বুকের এক্স-রে
অন্যান্য দেহতরল পরীক্ষা করা হতে পারে: অজ্ঞাত কারণে জ্বরের লক্ষণ হলো কয়েক সপ্তাহ ধরে জ্বর (১০১-১০২ ডিগ্রি) না থামা এবং শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষা করেও কারণ খুঁজে না পাওয়া। একটি কথা বলা ভালো, ভাইরাল জ্বরে অ্যান্টিবায়োটিকের তেমন কোনো কার্যকারিতা নেই।
করণীয়: জ্বর হলেই প্যারাসিটামল খাওয়া ঠিক নয়, ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। আবহাওয়া বদল হলে সর্দি-কাশি-কফ হলেই চিন্তার কোনো কারণ নেই। ফ্লুর কারণে নাক দিয়ে পানি পড়া, একটু গা গরম, শরীর ম্যাজম্যাজ করা ও দুর্বল বোধ হতে পারে। ভয় নেই, দু-তিন দিনে চলে যাবে। ভাইরাল জ্বরের কারণে গায়ের তাপমাত্রা খুব বেশি বাড়লে জলপট্টি দেওয়া বা গা স্পঞ্জ করা যেতে পারে। পানি খেতে হবে প্রচুর। এ সময় ঝাল-মসলা খাবার না খাওয়া ভালো।
পরামর্শ দিয়েছেন: অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী, সাবেক অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ।
পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ