চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

৭৫ শতাংশের শরীরে মিলেছে ডেন-২

আক্রান্তের ৬৫ শতাংশই পুরুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৬ নভেম্বর, ২০২৩ | ১:০৫ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ রোগীই ডেন-২  সেরোটাইপে (ধরন) সংক্রমিত হয়েছেন। এছাড়া ১১ শতাংশ রোগী সংক্রমিত হয় ডেন-১ সেরোটাইপে এবং ১৪ শতাংশ রোগী সংক্রমিত হয় ডেন-৩ সেরোটাইপে। তবে এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের মাঝে ডেঙ্গুর চারটি ধরনের (সেরোটাইপ) সর্বশেষ ধরন ডেন-৪ সেরোটাইপ কোনো রোগীর মধ্যে পাওয়া যায়নি। আক্রান্তদের মধ্যে ৫ শতাংশ রোগী পূর্বেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। বাকি ৯৫ শতাংই ছিল নতুনভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী।  চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ১ হাজার ৫৫০ জন রোগীর উপর চালানো এক গবেষণায় এসব তথ্য ওঠে এসেছে। এসপেরিয়া হেলথ রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে ডেঙ্গু নিয়ে চট্টগ্রামের ছয়টি প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা যৌথ এ গবেষণার কাজ করেন।

 

ছয়টি প্রতিষ্ঠান হলো- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন ও পেডিয়াট্রিকস বিভাগ, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রফিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি), আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এবং নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং, রিসার্চ এন্ড ইনোভেশন ল্যাব চিটাগং।

 

গবেষণায় দেখা যায়, চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৬৫% পুরুষ, ডেঙ্গু রোগীদের প্রতি ৫ জনে একজন শিশু। এছাড়াও চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি এলাকাকে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাছাড়া চট্টগ্রামের যাদের মধ্যে সেরোটাইপ-১ পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে ৭০% ছিল শিশু। ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু শহর এলাকায় বেশি, শিশুদের মধ্যে ৭০% এসেছে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। শহর ও গ্রাম উভয় জায়গাতেই প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের মধ্যে ডেঙ্গু সেরোটাইপ-২ বেশি দেখা গিয়েছে।  যা প্রায় ৭৫ ভাগ। ৯৯% রোগীদের মধ্যে জ্বরের প্রাধান্য দেখা যায়, তবে শিশুদের ক্ষেত্রে ১০০% রোগীর মাঝেই জ্বরের লক্ষণ দেখা যায়।

 

৬০ ভাগ ডেঙ্গু রোগীর আবাসস্থল ৫ এলাকা : চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মোট রোগীর ৬০ শতাংশই নগরীর পাঁচ এলাকার বাসিন্দা। যা গবেষকগণ হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এই পাঁচ এলাকা হলো- নগরীর বাকলিয়া, চকবাজার, কোতোয়ালী, ডবলমুরিং এবং বায়েজিদ বোস্তামী। এছাড়াও চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার মধ্যে চারটিতে এবার রেকর্ড সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী পাওয়ার তথ্য উঠে এসেছে গবেষণায়। এসব উপজেলা হলো- সীতাকুন্ড, হাটহাজারী, পটিয়া এবং কর্ণফুলী।

 

৪০ শতাংশ রোগীই করতেন না মশারি ব্যবহার : মশারি টাঙানোর উদাসীনতাই কাল হয়েছে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৪০ শতাংশ রোগীর। ডেঙ্গুর মূল কারণ মশা এটিও জানেন না আক্রান্তের ২০ ভাগ মানুষ।  জমাটবাধা পানি থাকলে সেখানে ডেঙ্গু মশার বিস্তার বাড়ে এই তথ্যও জানা নেই ১৫ ভাগ মানুষের।

 

অসচেতন ও স্বল্প শিক্ষিতরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বেশি : স্বল্পশিক্ষিত মানুষের মাঝে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি পাওয়া গেছে গবেষণায়। গবেষকরা জানান- ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের ৪৫ ভাগই পঞ্চম শ্রেণির বেশি পড়াশোনা করেননি।  ডেঙ্গু সংক্রমণ সম্পর্কে অসচেতনতাই এর কারণ।

 

গবেষণায় যুক্ত ছিলেন যারা : গবেষণার কাজটির পরিচালক ছিলেন এসপেরিয়া পরিচালক এবং চমেকের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. আবদুর রব। প্রধান গবেষক ছিলেন চমেকের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. এম এ সাত্তার, প্রকল্পের সহ-পরিচালক ছিলেন চমেকের ডা. আবুল ফয়সাল মো. নুরুদ্দীন চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী, সহ-প্রধান গবেষক হিসেবে ছিলেন চবির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান এবং আইসিডিডিআরবি‘র বিজ্ঞানী ড. মুস্তাফিজুর রহমান।

 

এছাড়াও গবেষক হিসেবে যুক্ত ছিলেন চমেকের চিকিৎসক ডা. মারুফুল কাদের, ডা. নূর মোহাম্মদ ও হামিদ হোসেন সাগর, বিআইটিআইডির ল্যাব ইনচার্জ ডা. জাকির হোসেন, ফটিকছড়ি হেলথ কমপ্লেক্সের ডা. ইমরুল কায়সার, চবির শিক্ষক মহব্বত হোসেন ও আফরোজা আক্তার তন্বী, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডা. তারেকুল মজিদ। গবেষণাগারে কাজটি পরিচালনা করেন ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ ও কল্যাণ চাকমা, তানজিনা আক্তার, ইসমাইল আল রশিদ।

 

সুপারিশ ও পরামর্শ : ডেঙ্গু প্রতিরোধে বেশ কিছু পরামর্শ ও সুপারিশ তুলে ধরেছেন গবেষকরা। হটস্পট চিহ্নিত জায়গায় পানি জমাট হয়ে থাকা এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। পানি জমে থাকা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। কম শিক্ষিত ও নিম্নআয়ের মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

পূর্বকোণ/আরডি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট