চর্মরোগ নিয়ে মানুষের ভুল ধারণা ও বিভ্রান্তির শেষ নেই। চর্মরোগ নিয়ে বিভ্রান্তিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে অন্যতম প্রধান হলো, প্রায় সব ধরনের ত্বক সমস্যাকে অ্যালার্জি বলে মনে করা।
ত্বকের অনেক রোগেই চুলকানি একটি খুব সাধারণ উপসর্গ; কিন্তু যেসব চর্মরোগে চুলকানির উপসর্গ থাকে তার মাত্র আনুমানিক ১ শতাংশ রোগ অ্যালার্জিজনিত হয়ে থাকে, বাকি ৯৯ শতাংশ রোগেরই অ্যালার্জির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকে না। অথচ এই ভুলটি প্রায় সবাই করে থাকে, যেকোনো কারণে চামড়া চুলকালেই সেটা অ্যালার্জি বলে মনে করে থাকে প্রায় সবাই। আসলে চুলকানি ও অ্যালার্জি সমার্থক নয়।
ত্বকে যেকোনো কারণে চুলকালেই, হোক সেটা ছত্রাক সংক্রমণ, কিংবা সোরিয়াসিস, অথবা স্কেবিজ (যা ত্বকে ছোট্ট একটি পোকার সংক্রমণ থেকে হয়ে থাকে) রোগীরা চিকিৎসকের কাছে এসে প্রথমেই দাবি করে যে তাদের ত্বকে ব্যাপক অ্যালার্জির আক্রমণ ঘটেছে। এমনকি ব্রণে আক্রান্ত রোগীরাও ব্রণকে প্রায় সময়ই অ্যালার্জি বলে অভিহিত করে, কেননা ব্রণেও মাঝেমধ্যে চুলকাতে পারে। চর্মরোগ নিয়ে মানুষের আরো অনেক ধরনের ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে, যা মানুষকে ত্বক সমস্যার সঠিক সমাধান থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে এবং পরিণামে সমস্যা জটিল থেকে জটিলতরই হয়ে ওঠে।
ভুল ধারণাগুলো:
১) প্রথমত, অনেক মানুষই মনে করে, চর্মরোগ বলতে একটি রোগই বোঝায়। এর আর কোনো প্রকারভেদ নেই বা হতে পারে না।
২) চর্মরোগ কোনো দিনও সারে না।
৩) চর্মরোগ চামড়ায় হলেও এর মূল বা শিকড় থাকে নাড়ে। এখানে নাড় বলতে মনে হয় খাদ্যতন্ত্র বা গ্যাস্ট্রো ইন্টেসটিনাল সিস্টেমকে বোঝানো হয়। সে জন্যই নাড় বা শরীরের অভ্যন্তর থেকে রোগটির মূল কারণটি অপসারণ না করা গেলে চর্মরোগ কখনোই চিরতরে উপশম হবে না বা হয় না।
৪) চর্মরোগ মানেই ছোঁয়াচে এবং চর্মরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংসর্গ সম্পূর্ণ বর্জনীয়।
৫) শ্বেতী রোগে আক্রান্ত রোগীর জন্য দুধ (যেহেতু সাদা), টক ফল ও আরো অনেক খাবার খাওয়া নিষেধ।
প্রকৃত ঘটনা:
১) চর্মরোগ বা ত্বকের ব্যাধি দুই হাজার প্রকারেরও বেশি।
২) অনেক চর্মরোগেরই সফল নিরাময় সম্ভব।
৩) সব ধরনের ত্বকের সমস্যা শরীরের ভেতরের কোনো সিস্টেমের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে না। তবে কিছু কিছু ত্বকের সমস্যা শরীরের ভেতরের রোগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা দেয়, এটা সত্য। তবে চামড়ায় যা কিছুই ঘটুক সেটার উৎপত্তি সব সময়ই শরীরের অভ্যন্তর থেকেই ঘটতে হবে তা কিন্তু নয়।
৪) যত ধরনের চর্মরোগ আছে, তার অতি অল্প অংশ অর্থাৎ সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ রোগ ছোঁয়াচে, বাকিগুলো নয়।
৫) শ্বেতী রোগে আক্রান্ত রোগীদের অবশ্যই দুধ খাওয়া নিষেধ নয়; বছর পঞ্চাশেক আগে টক জাতীয় খাবার শ্বেতী রোগ বাড়িয়ে দেয় বলে মনে করা হলেও অনেক দিন আগেই প্রমাণিত হয়েছে, টকজাতীয় খাবার এ রোগ সারিয়ে তুলতে বরং সাহায্য করে।
পরামর্শ দিয়েছেন: ডা. যাকিয়া মাহফুজা যাকারিয়া, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ডার্মাটোলজি, উত্তরা স্কিন কেয়ার অ্যান্ড লেজার।
পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ