চট্টগ্রাম সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

মারাত্মক হতে পারে শিশুর টাইফয়েড জ্বর

অনলাইন ডেস্ক

২০ আগস্ট, ২০২৩ | ৮:৪২ অপরাহ্ণ

শিশুর শরীরের বিভিন্ন তন্ত্রে সংক্রমণ ঘটিয়ে থাকে এই জ্বর। ‘সালমোনিলা টাইফি’ হলো এটির জীবাণু। শিশু বয়সে প্রায় একই ধরনের উপসর্গ নিয়ে মৃদু মাত্রার অসুস্থতা তৈরি করে ‘প্যারা-টাইফয়েড জ্বর’। যার জীবাণু হলো ‘সালমোনিলা প্যারা-টাইফি’।

উন্নয়নশীল দেশে যেখানে স্যানিটারি ব্যবস্থাপনা দুর্বল, সেখানে এর প্রাদুর্ভাব বেশি। পাঁচ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে এই রোগ দুটি বেশি দেখা যায়। টাইফয়েড ও প্যারা-টাইফয়েডের জীবাণু সংক্রমিত রোগীর মল-মূত্র, কফ-কাশি, খাদ্যদ্রব্য, পানি কিংবা অপাস্তুকৃত দুধে মিশে শিশুর শরীরে প্রবেশ করে।

উপসর্গ: শিশুবয়সে টাইফয়েড জ্বর কোনো উপসর্গ ছাড়া কিংবা সামান্য ধরনের উপসর্গ বা বিবিধ রকমের লক্ষণ নিয়ে প্রকাশ পায়। শরীরে টাইফয়েড ও প্যারা-টাইফয়েড জীবাণু প্রবেশের সাত থেকে ১৪ দিনের মধ্যে উপসর্গ প্রকাশ পায়।

১) ১০ থেকে ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে সব উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগে শিশুর ক্ষণস্থায়ী ডায়রিয়া দেখা দেয়। পরবর্তী সময়ে শিশু মারাত্মক অসুস্থ হতে থাকে। তখন কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, ক্ষিধে লোপ পাওয়া, শুষ্ক কাশ, মাথার সম্মুখভাগে ব্যথা ইত্যাদি দেখা যায়।
২) টাইফয়েড জ্বরের প্রধান লক্ষণ জ্বর, জ্ঞান লোপ পাওয়া, পেট ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং যকৃত-প্লিহা স্ফীতি।
৩) প্রথম সপ্তাহে ৭৫ থেকে ৮৫ শতাংশ রোগীর জ্বর দেখা যায়, যা প্রথম দিকে কিছুক্ষণ থাকে। কিন্তু পরে একনাগাড়ে স্থায়ী হয়। তাপমাত্রা কখনো কখনো ১০৩ থেকে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৯-৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) পর্যন্ত উঠে যায়। এ সময় শিশু কোষ্ঠকাঠিন্যতে ভোগে। কোনো কোনো শিশুর ত্বকে ‘রোজ স্পটস’জাতীয় র‌্যাশ দেখা যায়।
৪) দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শিশু মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে। পেট ফুলে যায়। হার্ট ও শ্বাসের হার বাড়ে।
৫) রোগ জটিলতা থেকে এই সময়ে আন্ত্রিক নালিতে রক্তপাত ও ফুটা হতে পারে, যকৃৎ ও প্লিহার আকার বৃদ্ধি পায়।

চিকিৎসা:
১) টাইফয়েড জ্বরে ভোগা শিশু রোগীর সাধারণ ব্যবস্থাপনার মধ্যে রয়েছে—জ্বর লাঘবে প্যারাসিটামল, পানি ও তরল খাবার বেশি বেশি খাওয়ানো।
২) টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসায় বর্তমানে অনেক ওষুধ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। তাই শিশু বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে প্রয়োজনে শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা প্রদান করতে হয়।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
১) শিশুর খাবার পরিবেশন যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। বাসি ও রাস্তার ধারের বিক্রি করা খোলা খাবার যেন না খাওয়ানো হয়।
২) শিশুকে বারবার সঠিক নিয়মে হাত ধোয়ানোর অভ্যাস গড়ে তোলা।
৩) টাইফয়েড ভ্যাকসিন : দুই বছর বয়স থেকে শিশুকে টাইফয়েড ভ্যাকসিন দেওয়া যায়। প্রায় ৫৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এটা কার্যকর।

পরামর্শ দিয়েছেন: প্রফেসর ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশু স্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট