যদি অল্প কয়েক দিনের জন্য কোষ্ঠকাঠিন্যের উপসর্গ দেখা দেয় অথবা কোষ্ঠকাঠিন্যের সময় যদি তিন মাসের কম হয়, তাহলে এই অবস্থাকে সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য বলে। উদাহরণস্বরূপ, কোথাও কোনো অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রচুর পরিমাণে গোশত খাওয়ার পর দেখা গেল দুই-তিন দিন মলত্যাগ হচ্ছে না কিংবা খুব শক্ত অল্প অল্প মলত্যাগ হচ্ছে, তাহলে এই অবস্থাকে সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য বলে।
অথবা দেখা গেল, প্রতিদিন তিন বেলাই গোশত, মাছ, ডিম ইত্যাদি দিয়ে ভাত খাচ্ছে, তাই নিয়মিত মলত্যাগ হচ্ছে না, হলেও শক্ত মলত্যাগ হচ্ছে কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্যের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে, তা যদি তিন মাসের কম সময় হয়ে থাকে, তাহলে একে সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হবে। অথবা সারা বছর সুস্থ, কিন্তু কোরবানির ঈদের দিন, ঈদের পরে প্রচুর পরিমাণে গোশত খাওয়ার পর দেখা গেল মলত্যাগ হচ্ছে না, পেট ফুলে যাচ্ছে, পেটে ব্যথা হচ্ছে, তবে এই অবস্থাকেও সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়।
উপসর্গ:
১) মলত্যাগের সাধারণ রুটিন পরিবর্তন হয়ে যাবে।
২) শক্ত মলত্যাগ হবে।
৩) মলত্যাগের সময় মলাশয়ে ব্যথা হবে।
৪) মলত্যাগ করতে গেলে জোর প্রয়োগ করতে গিয়ে অনেক সময় ব্যয় হবে।
৫) মলত্যাগ অল্প অল্প হতে পারে।
৬) পেট ফুলে যেতে পারে।
৭) পেটে ব্যথা হতে পারে।
৮) কিছুক্ষণ পর পর বায়ু ত্যাগ হতে পারে।
৯) খাওয়ার রুচি কমে যাবে।
১০) দুশ্চিন্তা ও অবসাদগ্রস্ত মনে হতে পারে।
১১) স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটবে।
কারণ:
সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য মূলত অস্বাভাবিক লাইফস্টাইলের কারণে দেখা দেয়। যেমন:
১)আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া তথা শাক-সবজি কম খাওয়া।
২) নিয়মিত মলত্যাগ না করা, মলত্যাগ আটকে রেখে কাজকর্ম করা।
৩) নিয়মিত খাবার না খাওয়া।
৪) পরিমিত ঘুম না যাওয়া, চিন্তা, অবসাদগ্রস্ত থাকা ইত্যাদি।
৫) আইবিএসের সমস্যা থাকা।
৬) মেডিসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। যথা, ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার, অ্যান্টিস্পাজমোডিক, অ্যান্টিডায়রিয়াল ড্রাগস, আয়রন ট্যাবলেট, অ্যালুমিনিয়ামযুক্ত অ্যান্টাসিড ইত্যাদি।
৭) দৈনিক অত্যধিক পরিমাণ প্রোটিন খাওয়া, যেমন অধিক পরিমাণ গোশত খেলে সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে করণীয়:
১) লাইফস্টাইল পরিবর্তন করার মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করা যায়। যেমন—প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ শাক-সবজি খেতে হবে।
২) পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
৩) ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবার কম খেতে হবে।
৪) অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।
৫) অত্যধিক গোশত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৬) দৈনিক ১০০ থেকে ১৫০ গ্রামের চেয়ে বেশি গোশত না খাওয়াই উত্তম।
৭) নিয়মিত ইসবগুলের শরবত খেতে হবে।
৮) সম্ভব হলে প্রতিদিন আপেল খাওয়া উত্তম। আপেলে পর্যাপ্ত ফাইবার রয়েছে।
৯) নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।
পরামর্শ দিয়েছেন: ডা. ইসমাইল আজহারি, মেডিসিন বিভাগ, কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মগবাজার, ঢাকা।
পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ