চোখের একটি মারাত্মক অসুখ হলো রেটিনোপ্যাথি অব প্রি-ম্যাচুরিটি (আরওপি)। সময়ের আগে জন্ম নেওয়া (প্রি-ম্যাচিউর বেবি) শিশুরা এতে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারে। বিকাশমান রেটিনার রক্তনালিগুলো এবং চোখের পেছনের আলো-সংবেদনশীল টিস্যু অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেলে এই রোগ দেখা দেয়। আরওপি সাধারণত গর্ভাবস্থার ৩১ সপ্তাহের আগে জন্ম নেওয়া বা জন্মের সময় দেড় কেজির কম ওজনের শিশুদের হতে পারে।
নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (এনআইসিইউ) উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন থেরাপি ব্যবহারের কারণে আরওপি দেখা দিতে পারে। তাই সময়ের আগে জন্ম নেওয়া এসব শিশুদের নিয়ে জন্মের ২১ থেকে ৩০ দিনের মধ্যেই চক্ষু বা শিশু চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।
কারণ: আরওপির সঠিক কারণ পুরোপুরি বোঝা যায় না, তবে এটি স্বাভাবিক রেটিনাল ভাসকুলারাইজেশনের ব্যাঘাতের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে ধারণা করা হয়। অস্বাভাবিক রক্তনালির বৃদ্ধি ঘটা এবং এর মাত্রার ওপর ভিত্তি করে চক্ষু বিশেষজ্ঞ আরওপির তীব্রতা যাচাই করে দেখবেন।
চিকিৎসা: আরওপির চিকিৎসা নির্ভর করে তীব্রতার ওপর। গুরুতর ক্ষেত্রে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস বা অন্ধত্ব প্রতিরোধের জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। লেজার থেরাপি এবং ক্রায়োথেরাপির মাধ্যমে আরওপির চিকিৎসা করা হয়। অস্বাভাবিক রক্তনালিগুলোকে ধ্বংস করা এবং সুস্থ রক্তনালিগুলোর বৃদ্ধিকে উন্নীত করার কাজে এই দুই থেরাপি ব্যবহার করা হয়। তবে গুরুতর অবস্থায় না গেলে আরওপি আপনাআপনি ঠিক হয়ে যায়।
প্রতিরোধে করণীয়:
প্রসবপূর্ব যত্ন: গর্ভবতী মায়েদের পর্যাপ্ত যত্ন নিতে হবে। এতে অকাল জন্মের ঝুঁকি কমে, যার ফলে আরওপি হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।
অক্সিজেন থেরাপি ব্যবস্থাপনা: অকাল শিশুদের অক্সিজেনের মাত্রা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করলে অত্যধিক অক্সিজেন এক্সপোজার প্রতিরোধ করা যেতে পারে। অত্যধিক অক্সিজেন এক্সপোজার আরওপি হওয়ার অন্যতম কারণ।
চোখের স্ক্রিনিং: চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করালে প্রাথমিক পর্যায়ে আরওপি শনাক্ত করা সম্ভব হয়। এতে সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়।
পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা: বুকের দুধ বা বিশেষ ফর্মুলাসহ সঠিক পুষ্টি সরবরাহ করতে হবে। শিশুর সুস্বাস্থ্য রক্ষা এবং শিশুর বিকাশে বুকের দুধ বা বিশেষ ফর্মুলা অবদান রাখতে পারে। আরওপির সম্ভাব্য ঝুঁকি ও তীব্রতা হ্রাস করতে পারে।
মনে রাখতে হবে, আরওপি একটি জটিল অবস্থা। এর চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের কৌশল বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। তাই অবশ্যই নবজাতক ও চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
পরামর্শ দিয়েছেন: ডা. মুহিত মুকতাদির, অ্যাসিস্ট্যান্ট কো-অর্ডিনেটর, এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং ডিপার্টমেন্ট, দীপ আই কেয়ার ফাউন্ডেশন, রংপুর।
পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ