ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীরা অস্ত্রোপচারের পর প্রতিদিন একটি করে ‘ওসিমেরিনিব’ (Osimertinib) নামক ওষুধ খেলে মৃত্যুঝুঁকি অর্ধেক কমে যায়— দীর্ঘ এক দশক ধরে চালানো একটি গবেষণায় ওঠে এসেছে এমন ‘রোমাঞ্চকর’ এবং ‘অসাধারণ’ তথ্য।
বিশ্বের ক্যান্সারে যত মৃত্যু হয় সেগুলোর মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সার অন্যতম। প্রতি বছর শ্বাসতন্ত্রের মরণব্যধিতে প্রাণ যায় ১৮ লাখ মানুষের।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে চালানো এ গবেষণাটি বর্তমানে শেষ পর্যায়ে আছে। তাদের এ গবেষণার তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের সোসাইটি অব ক্লিনিক্যাল অনকোলোজির (আসকো) বার্ষিক সভায় উপস্থাপন করা হয়। সভাটি হয় শিকাগো রাজ্যে।
ইয়েল ক্যান্সার সেন্টারের উপপ্রধান ডাক্তার রয় হার্বস্ট বলেছেন, ’৩০ বছর আগে, এসব রোগীদের জন্য করার মতো কিছুই ছিল না আমাদের। কিন্তু বর্তমানে আমাদের কাছে এই শক্তিশালী ওষুধ রয়েছে।’
‘মৃত্যুঝুঁকি ৫০ শতাংশ কমানো যে কোনো রোগের জন্যই বড় কিছু। কিন্তু ফুসফুসের ক্যান্সারের মতো বড় রোগ, যেটি থেরাপিতে খুব বেশি কাজ হয় না, সেটির ক্ষেত্রে এটি অনেক বড়।’ বলেন ডাক্তার রয় হার্বস্ট।
ক্যান্সার আক্রান্ত ৩০ থেকে ৮৬ বছর বয়সী ২৬টি দেশের রোগীদের ওপর এ ওষুধের ট্রায়াল চালানো হয়েছে। দেখা হয়েছে, ওষুধটি নন-স্মল ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্তদের সহায়তা করতে পারে কিনা।
যাদের ওপর ট্রায়াল চালানো হয়েছে তাদের সবার ইজিএফআর জিনে পরিবর্তন ছিল। যেটি পুরো বিশ্বের ক্যান্সার আক্রান্তের চার ভাগের এক ভাগের মধ্যে পাওয়া যায়। যার ৪০ শতাংশই আবার এশিয়ার।
ইজিএফআর জিন পরিবর্তনের বিষয়টি পুরুষদের তুলনায় আবার নারীদের এবং যারা কখনো ধুমপান করেননি বা হালকা ধুমপান করতে তাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
শিকাগোর ওই সভায় ডাক্তার রয় হার্বস্ট বলেছেন, একই ট্রায়ালে তারা দেখতে পেয়েছিলেন এই ওষুধটি শরীরে পুনরায় ক্যান্সার বাসা বাঁধার বিষয়টি অর্ধেকে নামিয়ে আনে। আর নতুন ‘রোমাঞ্চকর’ এ ফলাফল আগের ফলাফলের বিষয়টি আরও রোমাঞ্চকর করেছে।
তিনি জানিয়েছেন, ইজিএফআর জিন পরিবর্তিত ক্যান্সারের রোগীদের জন্য এ ওষুধটি চিকিৎসার একটি অংশ করে দেওয়া উচিত। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের রোগীরা এটি পাচ্ছেন কিন্তু বিশ্বের সবদেশেই ওষুধটি সহজলভ্য করে দিতে হবে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত সব রোগীর ইজিএফআর জিন পরীক্ষা করা হয় না। এটি পরিবর্তন করতে হবে এবং চিকিৎসা শুরুর আগে অবশ্যই এই পরীক্ষা করতে হবে।
ওষুধটি তৈরি করেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। আর এটি ওষুধের বাজারে তাগরিসো নামে পরিচিত।
গবেষণার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফুসফুসের ক্যান্সার আক্রান্ত যেসব রোগীর টিউমার অপসারণের পর এই ওষুধটি দেওয়া হয়েছে— পাঁচ বছর পর তাদের মধ্যে ৮৮ শতাংশ এখনো বেঁচে আছেন। আর যাদের ওষুধটি দেওয়া হয়নি তাদের মধ্যে ৭৮ শতাংশ বেঁচে আছেন। সবমিলিয়ে যারা ওষুধটি গ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে মৃত্যুঝুঁকি ৫১ শতাংশ কমেছে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ