চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

লোকসানের পথে রড-সিমেন্ট শিল্প

মোহাম্মদ আলী

২৬ নভেম্বর, ২০২৪ | ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ

গত পাঁচ মাস ধরে টানা লোকসান দিচ্ছেন ইস্পাত ও সিমেন্ট খাতের শিল্প মালিকরা। বিক্রিতে ধস নামায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। কোম্পানিভেদে রডের বিক্রি ৫০-৭০ শতাংশ এবং সিমেন্ট বিক্রি ৩৫-৪০ শতাংশ কমেছে।

 

বিক্রি কমে যাওয়ায় উৎপাদন কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে রড ও সিমেন্ট কোম্পানিগুলো। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে সরকারের অধিকাংশ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বন্ধ। পাশাপাশি বেসরকারি আবাসন শিল্পেও স্থবিরতা বিরাজ করছে। ফলে নির্মাণকাজের প্রধান দুই উপকরণ রড ও সিমেন্টের চাহিদা কমেছে। বিক্রি কমে যাওয়ায় বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংক ঋণের কিস্তি সময়মতো পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে নতুন করে খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।

 

ইস্পাত ও সিমেন্ট খাতের শিল্প মালিকরা বলছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর দেশে বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে স্থবিরতা নেমে আসে। নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত ঠিকাদারদের অনেকে গা ঢাকা দিয়েছেন। স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি না থাকায় বিভিন্ন পর্যায়ের উন্নয়নকাজ প্রায় বন্ধ রয়েছে। তাতে চাহিদা কমেছে ইস্পাত ও সিমেন্টের। ফলে লোকসান গুনছেন এ খাতের শিল্প মালিকরা।

 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গোল্ডেন ইস্পাত লিমিটেড ও এইচএম স্টিলের পরিচালক এবং বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের (বিএসএমএ) পরিচালক মোহাম্মদ সরোয়ার আলম পূর্বকোণকে বলেন, গত মে ও জুনে বিভিন্ন সাইজের প্রতিটন রড বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ৯৫ হাজার টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮৩ হাজার টাকা। প্রতি টনে কমেছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। তাতে ইস্পাত কারখানার মালিকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অপরদিকে চাহিদা কম থাকায় উৎপাদনও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

 

সরোয়ার আলম বলেন, গত পাঁচ মাসের ব্যবধানে কোম্পানিভেদে রড বিক্রি ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ এবং সিমেন্ট বিক্রি ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ কমে গেছে। বর্তমানে উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ রড উৎপাদন হচ্ছে। তাতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় লোকসানে বিক্রি হচ্ছে রড ও সিমেন্ট। মূলত সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়নমূলক কাজ থমকে আছে। সাধারণত দেশের যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মধ্যে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে হয় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ।

 

এ সেক্টরকে চাঙা করা না গেলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে এ খাতের শিল্প মালিকরা। সংকট নিরসনে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে দ্রুত এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন (বিএসএমএ) সূত্র জানায়, দেশে ইস্পাত কারখানার সংখ্যা দুই শতাধিক। তার মধ্যে বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৪০টি। প্রতিষ্ঠানগুলোতে বছরে প্রায় এক কোটি ১০ লাখ মেট্রিকটন রড উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। যদিও দেশে বার্ষিক রডের ব্যবহার ৭৫ লাখ টন।

 

এখন পর্যন্ত এই খাতে ৭০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে। দেশে যত ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয় তার মধ্যে সরকারিভাবে ইস্পাত ব্যবহার হয় ৬৭ শতাংশ এবং ৩৩ শতাংশ হয় ব্যক্তি ও আবাসন খাতে। অপরদিকে দেশে সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৪০টি (একই গ্রæপের একাধিক প্রতিষ্ঠানসহ)। প্রতিবছর প্রায় ৪ কোটি টন সিমেন্ট চাহিদার বিপরীতে প্রায় ৭ কোটি ৮০ লাখ টন উৎপাদনের সক্ষমতা আছে এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের।

 

দেশের সিমেন্টখাতের এক শিল্প উদ্যোক্তা জানান, মূলত দুই কারণে সিমেন্টের বিক্রি কমেছে। প্রথমত, বড় কিছু অবকাঠামো প্রকল্পের কাজ থমকে গেছে। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব শূন্যতা তৈরি হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে বিভিন্ন নির্মাণকাজ। এই পরিস্থিতি উত্তরণে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও চলমান প্রকল্পের কাজে স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে হবে।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট