চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

ইস্পাত পণ্য বিক্রিতে উৎসে কর কর্তনের হার ১% করা হোক

মোহাম্মদ সরওয়ার আলম; পরিচালক; গোল্ডেন ইস্পাত লিমিটেড ও এইচএম স্টিল এন্ড ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩০ এপ্রিল, ২০২৪ | ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ

অস্তিত্ব সংকটে পড়ার আগেই দেশের ইস্পাত শিল্প রক্ষার্থে আসন্ন ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটে ইস্পাত পণ্য বিক্রির টনপ্রতি উৎসে কর বর্তমান ২% থেকে কমিয়ে ১% করার দাবি জানাই। কোভিড সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি, ডলার সংকট ইত্যাদি বাস্তব অবস্থা উপলব্ধি করে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। শুধু তাই নয়, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের অবকাঠামো উন্নয়নে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য রডের দাম সহনীয় রাখতে হলে শুল্ক কর ও ভ্যাট কমিয়ে সরকারি সহায়তার বিকল্প নেই।

 

আগামী নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রসঙ্গে গতকাল (সোমবার) পূর্বকোণ প্রতিনিধির সাথে ‘বাজেট ভাবনা’ আলোচনায় গোল্ডেন ইস্পাত লিমিটেড ও এইচএম স্টিল এন্ড ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড পরিচালক মোহাম্মদ সরওয়ার আলম এই দাবি জানান। এছাড়া আসন্ন বাজেটে ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল ফেরাসওয়েস্ট ও স্ক্র্যাপ আমদানির ক্ষেত্রে টনপ্রতি কাস্টমস ডিউটি ১৫শ থেকে কমিয়ে ৫শ এবং টনপ্রতি অগ্রিম আয়কর ৫শ থেকে কমিয়ে ২শ টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন সরওয়ার আলম। পাশপাশি তিনি ফেরো এলয়স আমাদানিতেও টনপ্রতি রেগুলেটরি ডিউটি ১৫% থেকে কমিয়ে ৫% নির্ধারণের দাবি জানান।

 

ভ্যাট আপিল ও ভ্যাট অডিট প্রসঙ্গে সরওয়ার আলম বলেন, বর্তমানে ভ্যাট এর প্রথম আপিলের ক্ষেত্রে ২০% অর্থ জমা দিয়ে ৯০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হয়। আগামী বাজেটে এই ২০% অর্থ জমার শর্ত প্রত্যাহার করা এবং আপিলের সময় ৯০ দিনের পরিবর্তে ১২০ দিন করার দাবি জানাই। এছাড়া ভ্যাট অডিট প্রতিবছর না করে তিন বছরে একবার ভ্যাট অডিট করার বিধার জারির অনুরোধ জানাই।

 

ইস্পাত শিল্প প্রসঙ্গে সরওয়ার আলম বলেন, বর্তমানে ইস্পাত একটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য। অবকাঠামো উন্নয়নসহ যে কোন নির্মাণ কাজে ইস্পাত বা রড অপরিহার্য উপাদান। দৈনন্দিন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির ন্যায় রডের মূল্য বৃদ্ধি মানুষের জীবন যাত্রার উপর সরাসরি প্রভাব বিস্তার করে। অর্থাৎ মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ ব্যক্তিগত কিংবা রাষ্ট্রীয়ভাবে সকল মানুষই নির্মাণকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

 

তিনি আরো বলেন, স্টিল উৎপাদনে মোট খরচের ১৫% ব্যয় হয় জ্বালানি খরচ বাবদ। এমন সংকটময় মুহূর্তে হঠাৎ করে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বার বার গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি স্টিল শিল্পকে মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন করে ফেলেছে।

 

ইস্পাত শিল্পের সংকটের কথা বর্ণনা করে তিনি বলেন, করোনার শুরু থেকে গত ৪ বছর বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে ইস্পাত শিল্প অস্তিত্ব সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। স্টিল উৎপাদনের কাঁচামাল শতকরা ৭০ ভাগ আমদানি নির্ভর। ডলার সংকটে স্টিলের কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলার সমস্যাসহ ডলারের বিনিময় মূল্য বৃদ্ধির কারণে স্টিলের কাঁচামাল আমদানি চরমভাবে সংকুচিত হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে অধিক মূল্যে ডলার ক্রয়ের কারণে স্টিল উৎপাদনের ব্যয়ভার বৃদ্ধিসহ স্টিল উৎপাদনকারীগণের চলতি মূলধনে ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে।

 

বর্তমানে দেশের ভৌত অবকাঠামো কাজের মাত্রা মন্থর হওয়ায় এবং বেসরকারি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে নির্মাণ কার্যক্রম উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়ায় স্টিল শিল্প ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সেই সঙ্গে নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হাউজিং, সিমেন্ট, বালু, সিরামিক-হার্ডওয়ারসহ শতাধিক শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত।

 

সামগ্রিকভাবে স্টিল শিল্পসহ এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৫০ লাখ জনবল অর্থনৈতিকভাবে বিপন্ন। বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ ও দীর্ঘ সময়ের পরিশ্রমে গড়ে উঠা ইস্পাত শিল্প বর্তমানে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অস্তিত্ব সংকটের সম্মুখীন। তাই বাজেট প্রণয়নের সময় ইস্পাত শিল্প রক্ষার্থে এই খাতের ব্যবসায়ীদের দাবি পূরণের বিকল্প নেই।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট