স্বামী-স্ত্রী ও শিশু সন্তান নিয়ে তিন জনের সংসার। থাকেন বহদ্দারহাট সংলগ্ন বাদুরতলায়। মাসে বাজার-খরচ মেটাতেন সাড়ে তিন হাজার টাকায়। ৬-৭ মাসের ব্যবধানে এখন তার খরচ হয় প্রায় ৭ হাজার টাকা। তাতে বেড়েছে অন্যান্য খরচও। আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্য করতে পারছেন না গৃহকর্তা। শেষমেষ শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাওয়ার মনস্থির করেছে পরিবারটি। গৃহকত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এখন খরচ দ্বিগুণ বাড়লেও বাজার-সওদা করতে হয় টানাটানি করে।’ এখন ওই গৃহকত্রীর মতো মধ্য-নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি মানুষের কাঁধে চালের দামে নতুন করে দুশ্চিন্তা চেপেছে। কারণ বাজারে নিত্যপণ্য ও সবজি বাজারে দীর্ঘদিন ধরে অস্থিরতা চলে আসছে।
নগরীর চালের বড় পাইকারি মোকাম পাহাড়তলী ও চাক্তাই বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত দু-এক দিনে চালের দাম বস্তাপ্রতি ৫০ টাকা বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগে বেড়েছিল মানভেদে একশ থেকে দুইশ টাকা। অন্তত ১০ দিনের ব্যবধানে চালের দাম মানভেদে বস্তাপ্রতি একশ থেকে আড়াইশ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অর্থাৎ পাইকারিতে কেজিপ্রতি দুই-পাঁচ টাকা বেড়েছে। বিশেষ করে গরিব-মধ্যবিত্ত শ্রেণির চাল হিসেবে পরিচিত মোটা ও সিদ্ধ চালের দাম বেশি বেড়েছে। পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরায় এসে আরও যোগ হবে অন্তত এক-দুই টাকা। অর্থাৎ ভোক্তা পর্যায়ে কেজিতে অন্তত ৪-৬ টাকা বাড়তি গুনতে হবে। চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘হঠাৎ করে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় চালের দাম কিছুটা বেড়েছে।’
বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি বাজারে বেতি আতপ চাল বস্তাপ্রতি ২৪-২৫শ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৬ ও ২৭শ টাকায়। নূরজাহান সিদ্ধ ২৪শ টাকা থেকে বেড়ে ২৬শ টাকা, মধ্যমানের নূরজাহান সিদ্ধ ২৩শ টাকা থেকে বেড়ে ২৫শ টাকা ও গুঁটি নূরজাহান ২১শ টাকা থেকে বেড়ে ২৩শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট সিদ্ধ ২৪শ টাকা থেকে ২৬শ-২৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা সিদ্ধ ২১শ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২২০০-২২৫০ টাকায়। জিরাশাইল মানভেদে ৩ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ৩২৫০ টাকা ও ২৮শ টাকা থেকে বেড়ে ২৯শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাহাড়তলী বণিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. জাফর আলম বলেন, ‘বাজারে ধান-চালের সংকটের অজুহাতে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। মিলার ও বড় কর্পোরেট গ্রুপগুলো কারসাজি করে দাম বাড়িয়েছে।’ আগামী মাস (ডিসেম্বর) আমন ধান না কাটা পর্যন্ত বাড়তি দাম থাকতে পারে বলে জানান তিনি। মাস দুয়েক আগে ভারত চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এতে বিশ্ববাজারে চালের দাম বেড়েছিল। কিন্তু দেশে বোরোর ফলন ভালো হওয়ায় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ধান-চালের পর্যাপ্ত মজুত আছে বলে আশ্বাস দিয়েছিল। বোরো শেষ হওয়ার আগেই আমন ধান বাজারে আসবে। এতে চাল আমদানির প্রয়োজন হবে না। বাজারেও প্রভাব পড়বে না। বাজারের নিত্যপণ্য ও সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখীর মধ্যে চালের দাম নিয়ে আশ্বস্ত ছিল ভোক্তারা। কিন্তু ভোক্তাদের সেই আশার গুঁড়ে বালি। চালের বাজার হঠাৎ করেই এখন ঊর্ধ্বমুখী। গরিবের চাল বলে পরিচিত মাঝারি ও মোটা চালের দাম বস্তাপ্রতি আড়াইশ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, দেশে চালের মজুত রয়েছে ১৪ লাখ ৭০ হাজার ৪৩৯ মে. টন। গমের মজুত রয়েছে এক লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৩ মে. টন। ধানের মজুত আছে ৯১৯ টন। গত ১ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারি মজুদ রয়েছে ১৬ লাখ ১৪ হাজার ৬১৪ মে. টন খাদ্যশস্য।
কনজ্যুমান এসোসিয়েশেন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন পূর্বকোণকে বলেন, ‘দেশে দাম বাড়ার একটা প্রতিযোগিতা আছে। ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছেই। এখন চাল মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরাও এই প্রতিযোগিতায় সামিল হয়েছে।’ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসমাইল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে মজুত পরিস্থিতি ভালো আছে। সংকট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। দাম বাড়ার কথা নয়। তবে আমন ধান ওঠার আগ মুহূর্তে কেন বাড়ছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।’
পূর্বকোণ/এএইচ