চীনের অর্থনীতি সম্পর্কে গত ছয় মাস ধরে একের পর এক দুঃসংবাদ আসছে: প্রবৃদ্ধির ধীরগতি, তরুণদের মধ্যে রেকর্ড বেকারত্বের হার, বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা, দুর্বল রপ্তানি আয়, স্থানীয় মুদ্রার দর পতন এবং আবাসন শিল্পে সংকট।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চীনের অর্থনীতিকে ‘টিকিং টাইম বম্ব’ অর্থাৎ ক্রমশ এক বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি আশংকা করছেন চীনে অসন্তোষ আরও বাড়বে।
তবে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর পাল্টা জবাব দিয়ে বলেছেন, “চীনের অর্থনীতি অনেক টেকসই, এর সম্ভাবনা দারুণ আর আছে অনেক প্রাণশক্তি।”
তাহলে কে সঠিক- মি. বাইডেন নাকি মি. শি? এর উত্তর সম্ভবত লুকিয়ে আছে এই দুয়ের মাঝখানে।
চীনের অর্থনীতি খুব সহসাই ধসে পড়বে এমন সম্ভাবনা কম। তবে চীনের সামনে আছে অনেক চ্যালেঞ্জ, যার মূল অনেক গভীরে।
আবাসন খাতে সংকট এবং কমতে থাকা আয়
চীনের এই অর্থনৈতিক সমস্যার মূলে আছে আবাসন শিল্প। কিছুদিন আগেও চীনের মোট সম্পদের এক তৃতীয়াংশ ছিল রিয়েল এস্টেট খাতে।
সিঙ্গাপুরের ইনসিড বিজনেস স্কুলের প্রফেসর আন্তনিও ফাতাস বলেন, “এর কোন মানে হয় না, এটা একেবারেই অর্থহীন।”
গত দুই দশক ধরে চীনের রিয়েল এস্টেট খাত ফুলে-ফেঁপে উঠছে, বিশেষ করে বেসরকারিকরণের ফলে। কিন্তু ২০২০ সালে এই খাতে সংকট দেখা দিল। কোভিডের মহামারী, তার সঙ্গে চীনের কমতে থাকা জনসংখ্যা- এর কোনটিই এই খাতের জন্য সুসংবাদ ছিল না।
চীনের সরকার তখন এই সংকট থেকে পুরো অর্থনীতিতে বিপর্যয়ের আশংকা করছিল, যেমনটি ঘটেছিল ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে। সরকার তখন রিয়েল এস্টেট ডেভেলপাররা কী পরিমাণ অর্থ ধার করতে পারবে তার একটা সীমা বেঁধে দিল। কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেল রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারদের ঋণের বোঝা শত শত কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যেটা তারা পরিশোধ করতে পারছে না।
এখন চীনে নতুন বাড়ি-ঘরের চাহিদায় ধস নেমেছে, আর এর ফলে বাড়ি-ঘরের দামও সাংঘাতিক-ভাবে পড়ে গেছে। এর মানে হচ্ছে, চীনে যারা বাড়ির মালিক, তারা আগের চেয়ে গরীব হয়ে পড়েছে। আর এটি ঘটেছে গত তিন বছর ধরে কোভিডের কঠোর বিধিনিষেধে থাকার পর সেখান থেকে যখন তারা বেরিয়ে আসছে।
“চীনে আপনার বাড়িই আসলে আপনার সঞ্চয়”, বলছেন অ্যালিসিয়া গার্সিয়া-হেরেরো, যিনি ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ন্যাটিক্সিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ। “কিছুদিন আগেও চীনে অস্থির শেয়ার বাজারে টাকা খাটানো বা স্বল্প সুদের ব্যাংক একাউন্টে অর্থ রাখার চাইতে বাড়ি কেনাকে ভালো বিনিয়োগ বল গণ্য করা হতো।”
এর মানে হচ্ছে, পশ্চিমা দেশগুলোতে কোভিড মহামারীর পর অর্থনীতিতে যে চাঙ্গা ভাব দেখা গেছে, চীনে সেটা ঘটেনি।
“জিরো-কোভিড নীতি বাতিল করার পর ধারণা করা হয়েছিল চীনের মানুষ পাগলের মতো অর্থ ব্যয় করবে”, বলছেন মিজ গার্সিয়া-হেরেরো। “তারা বেড়াতে যাবে, প্যারিসে যাবে, আইফেল টাওয়ার কিনে নেবে। কিন্তু চীনের মানুষ জানে যে বাড়ির দাম কমে যাওয়ায় তাদের সঞ্চয় কমে গেছে, ফলে তারা এখন আর কোন বাড়তি অর্থ-কড়ি খরচ করতে চাইছে না।”
এর ফলে যে লোকজন নিজেদের এখন দরিদ্রতর বলে মনে করছে সেটাই শুধু নয়, এর ফলে চীনের স্থানীয় সরকারগুলোর ঋণ সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে।
ধারণা করা হয়, এদের শত শত কোটি ডলারের রাজস্বের এক তৃতীয়াংশ অর্থই আসে ডেভেলপারদের কাছে জমি বিক্রি করে। কিন্তু এখন এই খাত বড় সংকটে।
কিছু কিছু অর্থনীতিবিদের মতে, আবাসন শিল্পের এই সংকট কাটতে বহু বছর সময় লাগবে। সূত্র: বিবিসি
পূর্বকোণ/এএইচ