ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের তথ্য অনুসারে, তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গার্মেন্ট পণ্যের বাজার প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলারের। অথচ গত অর্থবছরে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৫১ কোটি ৭৭ লাখ ডলারের। বিশ্বে গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও মধ্যপ্রাচ্যে চাহিদার মাত্র ৪.৭ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে। নতুন বাজার ধরতে সরকারি প্রণোদনা থাকা সত্ত্বেও পোশাক রপ্তানির সম্ভাবনাময় বাজারটি ধরতে সেভাবে উদ্যোগও নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
বাণিজ্য বাড়াতে সেখানকার দূতাবাস ও বাণিজ্যিক মিশনগুলোকে আরো সক্রিয় করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্র জানায়, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে মোট চার হাজার ৬৯৯ কোটি ডলার (৪৬.৯৯ বিলিয়ন ডলার) সমমূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে বহির্বিশ্বে। অথচ এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের হিস্যা মাত্র ৫১ কোটি ৭৭ লাখ ডলার, যা মোট পোশাক রপ্তানির মাত্র ১ শতাংশ।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশ থেকে মোট ১০৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৫১ কোটি ৭৭ লাখ ডলারের। প্রবৃদ্ধির হার ১৪.৬৬ শতাংশ। আগের অর্থবছরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ৪৫ কোটি ১৫ লাখ ডলারের গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৯ কোটি ২৩ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
এরপরই সৌদি আরবে রপ্তানি হয়েছে সাড়ে ১৮ কোটি ডলারের পণ্য। এ ছাড়া কুয়েতে দুই কোটি ৫৯ লাখ ডলার, কাতারে ৪১ লাখ ডলার, জর্দানে ২৫ লাখ ডলার, ওমানে ২৩ লাখ ডলার, লেবাননে ২২ লাখ ডলার, ইরাকে ২০ লাখ ডলার, বাহরাইনে সাত লাখ ৩০ হাজার ডলার এবং ইরানে মাত্র দুই হাজার ডলার সমপরিমাণ তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে গত অর্থবছরে।
ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্ববাজার থেকে প্রায় ৪.৯০ বিলিয়ন মূল্যের পোশাক আইটেম সংগ্রহ করেছে, সৌদি আরব ৩.৫০ বিলিয়ন, কুয়েত ১.২০ বিলিয়ন, কাতার ৭০০ মিলিয়ন, ওমান ৬৩০ মিলিয়ন এবং বাহরাইন ২৯০ মিলিয়ন। অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যের ফ্যাশনেবল পোশাকের বাজার প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলারের। এই বাজারে বাংলাদেশের হিস্যা ৫ শতাংশেরও কম।
একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানির যে পরিসংখ্যান প্রকৃত চিত্র আরেকটু ভিন্ন। উদাহরণ দিতে গিয়ে তাঁরা বলেন, সেখানকার প্রায় প্রতিটি ব্র্যান্ডশপে মেড ইন বাংলাদেশ পণ্য পাওয়া যাবে। এই মেড ইন বাংলাদেশ পণ্য কিন্তু সরাসরি বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা নয়। তাহলে বাংলাদেশে তৈরি এই পোশাক কী করে এই ব্র্যান্ডশপে গেল, এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএ প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ধরুন দুবাইয়ে জারা কিংবা কস্টকো রিটেইল শপে খুঁজলে মেড ইন বাংলাদেশ পণ্য পাওয়া যাবে নিশ্চিত। কিন্তু এই পণ্য দুবাইয়ের কোনো বায়ার বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যায়নি। পণ্যটি বাংলাদেশে অর্ডার করেছে জারার মাদার কম্পানি। তারা আমাদের বলে দেয় পণ্যের এই ব্যাচ দুবাই কিংবা কাতারের বন্দরে পৌঁছে দিতে। কিন্তু পণ্যটির ডক্যুমেন্ট হয় সেই মাদার কম্পানির নামে। ফলে আর্থিক হিসাব-নিকাশও মাদার কম্পানির দেশের খাতায় ওঠে।’
তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্য থেকে মূলত ছোট ছোট অর্ডার সরাসরি আসে। এ ছাড়া গত দুই বছরে বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আমাদের অনেক অর্ডার বাতিল হয়েছিল। সে অর্ডারগুলোরও কিছু অংশ গেছে মধ্যপ্রাচ্যে।’
প্রায় একই কথা বললেন, বিকেএমইএ পরিচালক গাজী মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো মূলত তেল ও গ্যাসনির্ভর। আর্থিক সচ্ছলতার কারণে ক্ষেত্রবিশেষে এদের ক্রয়ক্ষমতা ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে বেশি। কিন্তু এরা ফ্যাশনেবল ও ব্র্যান্ড পণ্যে আসক্ত। মধ্যপ্রাচ্যে নিজস্ব ব্র্যান্ড কালচার সেভাবে গড়ে ওঠেনি। মূলত ইউরোপ ও আমেরিকার নামি ব্র্যান্ডগুলোর সেখানে আধিপত্য। আমাদের দেশের তৈরি পণ্য সেই ব্র্যান্ডশপগুলোতে আছে, তবে সেগুলো সরাসরি সেখানে রপ্তানি না হয়ে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে কিংবা ব্র্যান্ডগুলোর মাদার কোম্পানির মাধ্যমে সেখানে গেছে।’ মধ্যপ্রাচ্যে পোশাকের বাজার বাড়াতে সেখানকার দূতাবাস ও বাণিজ্যিক মিশনগুলোকে আরো সক্রিয় করার আহবান জানান তিনি। সৌজন্য: কালের কণ্ঠ
পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ