জাপানের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে আগামী ২০৩২ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা চাইবে বাংলাদেশ। আজ রোববার জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী নিশিমুরা ইয়াসুতোশি দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন। তাঁর সঙ্গে বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এ সুবিধা চাইবেন বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে।
রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আজ ‘বাংলাদেশ ও জাপানের পরবর্তী ৫০ বছরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক : বাংলাদেশের শিল্প খাতের উন্নয়ন’ শীর্ষক এক সম্মলনের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নিশিমুরা ইয়াসুতোশি। যৌথভাবে এ সামিটের আয়োজক বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো) এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে যাবে বাংলাদেশ। উত্তরণ-পরবর্তী বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনা যেমন রয়েছে, কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) নেওয়া সিদ্ধান্তের আলোকে এলডিসি দেশগুলো বিভিন্ন দেশে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পেয়ে থাকে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ ঘটলে এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি বাজার সংকোচনের আশঙ্কা রয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উত্তরণের পর আরও ছয় বছর অর্থাৎ ২০৩২ সাল পর্যন্ত জাপানের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাইবে বাংলাদেশ।
জাপানে বাংলাদেশ তৈরি পোশাকের পাশাপাশি চিংড়ি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাটজাত পণ্য, পাটের সুতাসহ কিছু পণ্য রপ্তানি করে। মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৪ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক থেকে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে বাজার গবেষণা ও পণ্যে বৈচিত্র্য আনার উদ্যোগ রয়েছে। অন্য উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে পণ্যের মান উন্নয়ন, প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এবং সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় জ্ঞান আদান-প্রদান ইত্যাদি।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির এক আলোচনায় বলা হয়, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হলে জাপানের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যে, বিশেষ করে তৈরি পোশাকে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ শুল্ক-কর আরোপ হবে। বর্তমানে সেখানে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় বাংলাদেশ। আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে জাপানের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানোর সুপরিশ করেন। একই সঙ্গে এলডিসি থেকে বের হলে যেসব বাণিজ্য সুবিধা চলে যাওয়ার কথা, তা যেন অব্যাহত রাখা যায়, সেই দরকষাকষি করার উদ্যোগের সুপারিশ করা হয়।
তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি বলেন, করোনা আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে কয়েক বছর বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য পরিস্থিতি সংকুচিত হয়ে গেছে। ২০২৬ সালে শুল্কমুক্ত সুবিধা উঠে গেলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। তাছাড়া পণ্যের নতুন বাজার হিসেবে জাপানে ভালো করছে বাংলাদেশ। এই বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখার বিষয়ে সরকারের জোর তৎপরতা প্রত্যাশা করেন তিনি।
জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে তেমন ঘাটতি নেই। বাংলাদেশ গত অর্থবছরে ১৯০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। এর বিপরীতে ১৯৬ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে। এ ছাড়া জাপান বাংলাদেশে অন্যতম বিনিয়োগকারী ও ঋণদাতা দেশ।
এদিকে গত বছরের ডিসেম্বরে জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের লক্ষ্যে যৌথ সমীক্ষা শুরু হয়েছে। সমীক্ষা দ্রুত শেষ করে এফটিএ সই করতে চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। যদিও বাংলাদেশ এখনও কোনো দেশের সঙ্গে এফটিএ করেনি। ভুটানের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) সই হয়েছে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে এফটিএ অথবা পিটিএ স্বাক্ষরের বিষয়ে কাজ চলছে। তথ্যসূত্র: সমকাল
পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ