বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি টার্গেট সামনে রেখে তৈরি পোশাক শিল্পে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলমান রয়েছে। কিন্তু কোভিড-১৯ এর পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক অস্থিরতা, দেশে দেশে মুদ্রাস্ফীতিতে আর্ন্তজাতিক বাজারে পোশাকের দর পতন, অর্ডার স্বল্পতা, মূল্য কম ও পেমেন্ট ইনসিকিউরডসহ রপ্তানিকারকদের মধ্যে এক ধরনের আতংঙ্ক বিরাজ করছে।অন্যদিকে সুতা ও ডাইস কেমিক্যালের দাম বৃদ্ধি, ডিজেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ফলে পরিবহন ও উৎপাদন খরচ দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া প্রতিযোগী দেশগুলো থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে থাকার কারণে দেশের পোশাক শিল্প বর্তমানে কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন। এ অবস্থায় রপ্তানি বাণিজ্যকে টিকিয়ে রাখতে সরকার কর্তৃক নীতিগত সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে এই শিল্পকে সহায়তা করতে হবে। পূর্বকোণ প্রতিনিধির সাথে আসন্ন বাজেট (২০২৩-২৪) প্রসঙ্গে আলাপকালে ‘বাজেট ভাবনা’য় তিনি এসব কথা বলেন।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কস্ট অব ডুইং বিজনেস’ কমানোর জন্য বাজেটে বিদ্যুৎ গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহসহ মূল্য হ্রাসের ব্যবস্থা করতে হবে, ভ্যাট ট্যাক্স কমাতে হবে, ব্যাংক ইন্টারেস্ট সিঙ্গেল ডিজিটের মধ্যে রাখতে হবে এবং রপ্তানি আয়ে ইনসেন্টিভ অব্যাহত রাখতে হবে। বাজেটে ‘ইজি অব ডুইং বিজনেস’ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সহজীকরণ নীতিকে প্রাধান্য দিতে হবে।
এছাড়াও ৬ দফা নীতিগত সহায়তার কথা উল্লেখ করে সৈয়দ নজরুল ইসলাম আরো বলেন, রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে পূর্বের ন্যয় ০.৫০ শতাংশ করা এবং সেটি আগামী ০৫ বছর পর্যন্ত ব্যবস্থা রাখতে হবে। তৈরি পোশাক শিল্পের পণ্য এসেসমেন্টের সময় কর আরোপকালে অন্যান্য আয়, যেমন-গেইন অন এসেস্টে ডিসপোজাল, সাব-কন্ট্রাক্ট ইনকাম এবং বিবিধ খরচকে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে গণ্য করে স্বাভাবিক হারে (৩০%) কর আরোপ না করে কর্পোরেট কর ১২% হারে আরোপ করা এবং তা আগামী ৫ বছর পর্যন্ত বলবৎ ব্যবস্থা রাখতে হবে। তৈরি পোশাক শিল্পের সাব-কন্ট্রাক্টের ক্ষেত্রে আয়কর অধ্যাদেশের রুল-১৬ এর টেবিল-১ এর আওতায় সাব-কন্ট্রাক্ট প্রদানকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক চুক্তির মূল্য পরিশোধের সময় প্রস্তাবিত ধাপ অনুযায়ী উৎসে কর ধার্য করা, ওই কর’কে চূড়ান্ত করদায় হিসেবে গণ্য করা, অন্যথায় এসেসমেন্টের সময় কর আরোপকালে কর্পোরেট ট্যাক্স ১২% হারে ধার্য করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানিকারকদের ইআরকিউ ফান্ড থেকে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য পরিশোধিত ফি হতে উৎসে আয়কর কর্তনের হার ২০% হতে হ্রাস করে ১০% করতে হবে। একইভাবে, তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নগদ সহায়তার ওপর ১০ শতাংশ কর প্রত্যাহার করতে হবে। কারণ, নগদ সহায়তা কোন ব্যবসায়িক আয় নয়, তাই নগদ সহায়তার অর্থকে করের আওতার বাইরে রাখাই যুক্তিসংগত।
জ্বালানি প্রসঙ্গে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে সারা বিশ্বেই জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকটের কারণে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। দেশে শিল্পের প্রসার এবং নতুন শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য সোলার পিভি সিস্টেম একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জ্বালানি সংকট নিরসন, উৎপাদন ব্যয় কমানো এবং রপ্তানির ধারা চলমান রাখার জন্য সোলার পিভি সিস্টেমের সরঞ্জামাদি শুল্ক রেয়াতিহারে আমদানির সুযোগ প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন।
পূর্বকোণ/এ