চট্টগ্রাম শনিবার, ২৯ মার্চ, ২০২৫

ইয়াকুব সৈনিকের দিন বদলের গল্প আমিরাতে

মোহাম্মদ আলী

১১ মার্চ, ২০২৫ | ১২:২৪ অপরাহ্ণ

ভাগ্য ফেরাতে ১৯৯৯ সালে শ্রমিক ভিসা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যান চট্টগ্রামের আলহাজ মোহাম্মদ ইয়াকুব সৈনিক। নগরীর খাজা রোড এলাকায় তাঁর বড়ি। আমিরাতে গিয়ে প্রথম তিনমাস বেকার জীবন অতিবাহিত করেন। ওমান প্রবাসী বড় ভাই সেখান থেকে তার জন্যে খরচের টাকা পাঠাতেন। এভাবে তিন মাস অতিবাহিত হওয়ার পর মাত্র ৪৫ দেরহাম দিয়ে (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৪০ টাকা) দিয়ে পেঁয়াজের ব্যবসা শুরু করেন। মাসখানেক এ ব্যবসা করার পর কিছু টাকা লাভ হয়। লাভের এ টাকা দিয়ে শুরু করেন ফ্রুটের ব্যবসা। এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

 

বছরখানেক এ ব্যবসার পর হাত দেন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়। গত ২৬ বছরের ব্যবধানে তার একটি রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়ে হয়েছে ৭টি রেস্টুরেন্ট। একই সাথে আমিরাতজুড়ে করছেন রিয়েল এস্টেট ব্যবসা। রয়েছে ফ্রুটস্ এন্ড ভেজিটেবল ব্যবসাও। বর্তমানে তার এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছে তিন শতাধিক প্রবাসীর। এদের মধ্যে বেশিভাগই বাংলাদেশি। আমিরাতে দীর্ঘ সময়ে আলহাজ মোহাম্মদ ইয়াকুব সৈনিক শুধু নিজের ব্যবসা প্রসারে ব্যস্ত থাকেননি, জড়িত হয়েছেন সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডেও। বর্তমানে তিনি আরব আমিরাত সরকার অনুমোদিত বাংলাদেশ এসোসিয়েশন, দুবাই এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশ বিজনেস এসোসিয়েশন, আল আবির এর জেনারেল সেক্রেটারি। এছাড়াও তিনি সেদেশে অসংখ্য সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছে।

 

সম্প্রতি দেশে আসেন আলহাজ মোহাম্মদ ইয়াকুব সৈনিক। গতকাল সন্ধ্যায় দৈনিক পূর্বকোণকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কথা হয় তার ২৬ বছরের প্রবাস জীবন নিয়ে। তিনি তুলে ধরেন তার আজকের অবস্থানে উঠে আসার দিন বদলের গল্প।

 

দৈনিক পূর্বকোণকে তিনি বলেন, কোন দরিদ্র প্রবাসীর মৃত্যু হলে তার মরদেহ নিজেদের খরচে দেশে পাঠাতে কাজ করতেন। এ কাজে তিনি আরো প্রবাসীকে ধীরে ধীরে সম্পৃক্ত করে ব্যাপকতা বৃদ্ধি করেন। শুধু দেশে নিজেদের খরচে দরিদ্র প্রবাসীর মরদেহ পাঠানো নয়, প্রবাসীদের কাজের সংস্থান করে দেওয়া, কেউ বিপদে পড়লে তার সহযোগিতায় এগিয়ে যাওয়াসহ নানা কাজে তিনি নিজেকে ব্যস্ত রাখেন।

 

বিদেশে প্রবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে কী কী থাকা দরকার এমন এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ ইয়াকুব সৈনিক বলেন, মূলত দক্ষ জনশক্তি ছাড়া কোন কাজে সফলতা কম আসে। বিশেষ করে বিদেশ যাওয়ার আগে প্রবাসীরা যদি যে কোন বিষয়ে কাজ রপ্ত করে গেলে প্রবাসে তার সহজে সফলতা আসে। এক্ষেত্রে রেমিটেন্সও বাড়ে। কিন্তু বেশিভাগ ক্ষেত্রে অদক্ষ জনশক্তি প্রবাসে যায় বেশি। অবৈধভাবে ভিসা ব্যবসাকারীর সাহায্যে বিদেশে যাওয়ার কারণে সেখানে প্রবাসীরা পদে পদে সমস্যায় পড়েন।

 

 

আবার অনেকে দেশে মামলার শিকার হয়ে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন। বিদেশে এসব প্রবাসীদের অনেকে সেদেশে অপরাধ প্রবণতার সাথে সহজে জড়িয়ে পড়ছেন। গাঁজা, ইয়াবাসহ নানা মাদকের ব্যবসার পাশাপাশি তারা বিভিন্ন অনৈতিক জড়িয়ে পড়েন। এতে ক্ষুণ্ন হয় দেশের ভাবমূর্তি। বাংলাদেশিদের এসব সমস্যাকে আরবের বুকে আরো বড় করে প্রকাশ করছেন কিছু কিছু দেশ। তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশিদের দুর্নাম করতে নানাভাবে অপপ্রচার করে থাকেন। এ কারণে জনশক্তি রপ্তানিতে বিপুল সম্ভাবনা থাকার পরও পিছিয়ে পড়ছেন বাংলাদেশ। তাতে গত পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশিদের ভিজিট, শ্রমিক ভিসাসহ সব ধরনের ভিসা। অথচ সেদেশে বাংলাদেশি শ্রমিকদের যথেষ্ট কদর রয়েছে।

 

অন্যান্য দেশের শ্রমিকরা দৈনিক সাধারণত ৮ ঘণ্টা কাজ করেন না। কিন্তু বাংলাদেশিরা ৮ ঘণ্টা ডিউটি করেন। এ কারণে বাংলাদেশি শ্রমিকদের যথেষ্ট কদর থাকার পরও শুধুমাত্র অপপ্রচারের কারণে বারবার সমস্যা পড়েন বাংলাদেশিরা। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য দরকার বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনের জোরালো ভূমিকা। কিন্তু এ জায়গাও বড় ধরনের একটা সমস্যা থেকে যাচ্ছে। দূতাবাসে কতিপয় কর্মকর্তা রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগের কারণে তারা সেখানে প্রবাসীদের জন্য সার্বজনীন হতে পারে না। তারা সেখানে দলীয় বিবেচনায় প্রবাসীদের সেবার প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। এছাড়াও তারা সেখানে বাংলাদেশ কমিউনিটির মধ্যে সব সময় বিভাজন তৈরি করে রাখেন।

 

মোহাম্মদ ইয়াকুব সৈনিক বলেন, আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রাজনীতি করার কোন সুযোগ নেই। সেখানকার সরকার এসব পছন্দ করেন না। কিন্তু বিষয়টি মাথায় না রেখে বেশিরভাগ প্রবাসী সেখানে রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ছেন। এ নিয়ে তারা নিজেদের কাজের চেয়ে রাজনীতিতে ব্যস্ত থাকেন বেশি। শুধু রাজনীতি নয়, প্রবাসীদের অনেকে সেখানে বাড়ি, গ্রাম ও পাড়া কমিটিও করে থাকেন। তাদের কারণে সব প্রবাসী বিদেশে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনের কার্যকর ভূমিকা দরকার। প্রবাসীরা যাতে সেদেশে রাজনীতিসহ কোন ধরনের অনৈতিক কাজে না জড়ান তা দেশ থেকে তাদের সতর্ক করা উচিত।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট