আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বয়ংক্রিয় নাগরিকত্ব আইন বাতিলের ঘোষণায় অবৈধ অভিবাসী ও অভিবাসন-প্রত্যাশীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে জন্মগ্রহণ করলেও সয়ংক্রিয়ভাবে দেশটির নাগরিকত্ব প্রাপ্তির আইন বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এ সংক্রান্ত প্রস্তাবিত নির্বাহী আদেশের একটি খসড়া ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সের অফিসিয়াল প্রচারণা সাইটে পোস্ট করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী শিশুরা যাদের বাবা-মা কেউই মার্কিন নাগরিক নন বা দেশটির স্থায়ী বাসিন্দা নন, সেসব শিশুর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব মিলবে না’। বিষয়টি নিয়ে নেট দুনিয়ায় বিভ্রান্তমূলক তথ্য ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্ক আরো বেড়েছে। নানাজন নানাভাবে এটিকে বিশ্লেষণ করছেন। আইনটির খসড়ায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে : ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে জন্ম নেওয়া কোনো শিশুর স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব প্রাপ্তির জন্য ওই শিশুর বাবা-মা বা তাদের যেকোনো একজনের নাগরিক হওয়া বা যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাসের অনুমোদন থাকা জরুরি’। অর্থাৎ বাবা-মায়ের অন্তত একজনকে গ্রিন কার্ডধারী হতে হবে। তবেই সন্তান এ দেশে জন্মালে ‘জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব’ পাবে। আমেরিকার সংবিধানে বলা আছে, আমেরিকায় জন্মালেই সে আমেরিকার নাগরিক। জন্মসূত্রে স্বয়ংক্রিয় নাগরিকত্বের এই আইনটিই পাল্টে দিতে চলেছেন ট্রাম্প। আগামী ২০ জানুয়ারি নবনির্বাচিত প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেবেন। প্রেসিডেন্ট হয়ে প্রথম দিনেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব প্রাপ্তির আইন বাতিলের একটি ‘এক্সিকিউটিভ অর্ডার’-এ সই করবেন ট্রাম্প। ওই দিন থেকেই এ নির্দেশনা কার্যকর করা হবে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করদাতাদের লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ হবে, ইতোমধ্যে চাপে থাকা শিল্পখাত বিধ্বস্ত হবে, লক্ষ লক্ষ মানুষ ডিটেনশন সেন্টারে আটক, এবং হাজার হাজার পরিবার ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাবে যার ফলে দেশজুড়ে বিশৃঙ্খলা আর মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হবে। অর্থনীতিতে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে যা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য নেতিবাচক হতে পারে।
মি. ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণার এজেন্ডায় অবিভাসনকে শীর্ষে রেখেছিলেন। কট্টর অভিবাসন-বিরোধী রিপাবলিকান এই প্রার্থী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বলে আসছিলেন যে নির্বাচিত হলেই সর্বপ্রথম তিনি দেশ থেকে অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়ন করবেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসীদের আবর্জনার সাথে তুলনা করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন ময়লার ভাগাড়। তিনি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হলে প্রথম দিনই আমি মার্কিন ইতিহাসের বৃহত্তম ‘ডিপোর্টেশন প্রোগ্রাম’ চালু করব। দখলদারদের হাত থেকে আমি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি শহর রক্ষা করব। তিনি অ্যমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্তে তার আমলে করা অসমাপ্ত দেওয়াল সমাপ্ত করার কথাও বলেছেন। ফ্লোরিডায় বিজয় ভাষণেও তিনি তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। এর প্রমাণ নির্বাচিত হয়েই ট্রাম্প তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘এই সীমান্ত ইস্যুতে মি. ট্রাম্প সমুদ্র পাড়ি দিয়েছেন’। অপরদিকে, ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসের ভরাডুবির জন্য তিনটি কারণের মধ্যে এই অভিবাসন ইস্যুকে অন্যতম দায়ী করা হচ্ছে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এবং পিউ রিসার্চ বিভাগের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রায় ১১ মিলিয়ন বা এক কোটি দশ লাখের মতো অবৈধ অভিবাসী বসবাস করছেন। তবে বেসরকারি হিসেবে এটি দেড় কোটিরও অধিক হতে পারে। ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখা ৩৩ কোটি ৪৯ লক্ষ।
বিবিসি বলেছে, নতুন মার্কিন প্রশাসন গণপ্রত্যর্পণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে সক্ষম হলেও এজন্য কর্তৃপক্ষকে বিপুল অর্থ ব্যয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ চালাতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১০ লাখের মতো অবৈধ অভিবাসীকে ফেরত পাঠাতে কয়েক হাজার কোটি মার্কিন ডলার খরচ হতে পারে।
নির্বাচনে জয়লাভ করার পর এনবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ‘অভিবাসীদের প্রত্যর্পণে কত খরচ হবে, তা বড় প্রশ্ন নয়। আসলেই আমাদের কোনো বিকল্প নেই। অবৈধ অভিবাসীরা মানুষ খুন করেছে, মাদক ব্যবসায়ীরা দেশকে ধ্বংস করেছে। এখন তারা যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারবে না, তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। এতে কত খরচ হবে তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না।
হিন্দুস্তান টাইমস ও আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, আমেরিকায় বসবাসকারী অন্তত ১০ লক্ষ ভারতীয় এখন গ্রিন কার্ডের অপেক্ষায় রয়েছেন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গ্রিন কার্ডের জন্য আরও অন্তত ৫০ বছর অপেক্ষা করতে হবে তাঁদের। ফলে ধরে নেওয়া যায় যে, ৫ লক্ষ ভারতীয়ের গ্রিন কার্ড না পেয়েই মৃত্যু হবে। ট্রাম্পের আনা নতুন আইনের ফলে এই পাঁচ লক্ষ অভিবাসীর আনুমানিক আড়াই লক্ষ সন্তান, যারা আমেরিকায় জন্মেছে, তাদের নাগরিকত্ব বাতিল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শুধু ভারতীয়রাই নন, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন দেশের এধরনের যত অভিবাসী রয়েছেন তারাও ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছেন।
ট্রাম্প আরও অঙ্গীকার করেছেন তিনি তাঁর প্রথম মেয়াদে যত লোককে বহিষ্কার করেছিলেন, এবার তার চেয়ে বেশি করবেন।
তিনি আধা-সামরিক ন্যাশনাল গার্ড দিয়ে কাগজপত্র-বিহীন অভিবাসীদের আটক করার পরিকল্পনা করছেন। তিনি ১৮’শ শতাব্দীর আইন ‘এলিয়েন্স এনেমিস অ্যাক্ট’-এর কথাও বলেছেন, যার মাধ্যমে যেসব দেশকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বৈরী বলে গণ্য করা হয়, সেসব দেশ থেকে আসা লোকজনকে বহিষ্কার করা যাবে। ট্রাম্পের লক্ষ্য হচ্ছে যেসব অভিবাসীর বৈধ কাগজপত্র নেই, তাদের সংখ্যা ব্যাপক হারে কমিয়ে আনা। তাঁর সমর্থকরা এই পরিকল্পনাকে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। কিন্তু বিরোধীরা যুক্তি দিচ্ছেন যে, এর ফলে অনেক আইনগত লড়াই শুরু হবে এবং ব্যবস্থাপনার দিক থেকে ঝামেলা সৃষ্টি করবে।
প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনের সময় শুরু করা ‘রিমেইন ইন মেক্সিকো’ প্রোগ্রাম আবার চালু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই নীতি অনুযায়ী আশ্রয়প্রার্থী অভিবাসীদের আবেদন প্রক্রিয়া চলার সময় তাদের মেক্সিকোতে থাকতে বাধ্য হয়।
আরও একটা নীতিমালা পুনরায় চালু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে অভিবাসীদের দ্রুত বহিষ্কার করা যায় এবং যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে অভিবাসন কমিয়ে আনা যায়। ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার সময় আরেকটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যা হল, বাইডেন প্রশাসন অভিবাসীদের কিছু নির্দিষ্ট গ্রুপকে আইনসম্মতভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করার অনুমতি দিয়ে যে পদক্ষেপ নিয়েছিল, তা বাতিল করা। বাইডেনের নীতির অধীনে, কিউবা, হেইতি, নিকারাগুয়া এবং ভেনেজুয়েলা, এই চারটি দেশ থেকে আসা প্রতি মাসে ৩০,০০০ অভিবাসীকে শর্ত সাপেক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে আইনসম্মতভাবে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়। ট্রাম্প এই রাস্তা বন্ধ করার অঙ্গীকার করেছেন। যারা যুক্তরাষ্ট্রে আসবে তাদের যাচাই করার প্রক্রিয়া আরও জোরদার করার জন্য ট্রাম্প ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকা পুনরায় চালু করে আরও দেশ অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি একটি “মতাদর্শ যাচাই” প্রক্রিয়া শুরু করতে চান যার মাধ্যমে যেসব ব্যক্তিকে ট্রাম্প “বিপজ্জনক, পাগল, ঘৃণাপূর্ণ, বিদ্বেষী এবং বেপরোয়া” বলে বর্ণনা করেন, তাদের নিষিদ্ধ করা হবে।
ট্রাম্পের প্রচারণা দল বলছে এই পদক্ষেপ জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করবে, যদিও এগুলো বৈষম্য এবং অধিকার নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির প্রতি তাঁর মূল সমর্থকদের সমর্থন রয়েছে, কিন্তু সেটা বিরোধিতার মুখে পড়ছে আইন বিশেষজ্ঞ এবং অধিকার সংগঠনগুলোর কাছে। তারা যুক্তি দেখাচ্ছে, গণ বহিষ্কার এবং যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে পারে এবং আদালতে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। এইচআইএস-এর মার্ক হেটফিল্ড বলেছেন, নতুন ট্রাম্প প্রশাসন আইনসম্মত অভিবাসন নিয়ে কী করবে, তা নিয়ে অধিকার কর্মীরা উদ্বিগ্ন। সংগঠন ‘ইউনাইটেড উই ড্রিম’-এর রাজনৈতিক পরিচালক মিশেল মিং বলেন, তারা অভিবাসীদের “রক্ষা” করতে প্রস্তুত থাকবেন।
মাইগ্রেশন পলিসি ইন্সটিটিউট বলছে, ভিসার জন্য একাধিক পথ আছে, প্রত্যেকটির নিজস্ব অপেক্ষার সময় আছে, যা নির্ধারণ করে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য আবেদনকারীকে কতদিন অপেক্ষা করতে হবে। বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা এবং নির্দিষ্ট দেশের জন্য কোটার এই প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করে। অনেক আবেদনকারীকে দশকের পর দশক অপেক্ষা করতে হয়। পুনরায় প্রবেশে কড়াকড়ির কারণে অনেক কাগজ-পত্র বিহীন অভিবাসী কোন ভাবেই এসব লাইনে যোগ দিতে পারেন না।
যেসব অভিবাসীর যুক্তরাষ্ট্রে ‘বেআইনিভাবে থাকার’ ইতিহাস আছে, তাদের পুনরায় প্রবেশের রাস্তা ১৯৯৬-এর দ্য ইমিগ্রেশন রিফর্ম অ্যান্ড ইমিগ্র্যান্ট রেসপন্সিবিলিটি অ্যাক্ট বন্ধ করে দিয়েছে। যারা চলে গিয়ে আবার ঢুকতে চান, তাদের মধ্যে যারা ১৮০ দিনের বেশি কিন্তু এক বছরের কম সময় বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ছিলেন, তারা তিন বছরের জন্য পুনরায় প্রবেশ করতে পারবেন না। যারা এক বছরের বেশি সময় বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন, তাদের উপর ১০ বছরের নিষেধাজ্ঞা থাকবে। বেআইনি উপস্থিতির মধ্যে ভিসার মেয়াদ শেষে রয়ে যাওয়া বা যাচাই ছাড়া প্রবেশ অন্তর্ভুক্ত।
২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিদেশি বংশোদ্ভূত মানুষের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বেশি। সেই তথ্য বলছে, বিদেশে জন্মগ্রহণকারী চার কোটি ৭৮ লাখ মানুষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাস করেন যা মোট মার্কিন জনসংখ্যার ১৪.৩ শতাংশ। এই তালিকায় সবার প্রথমে রয়েছে মেক্সিকো থেকে আসা মানুষ। সেখানকার এক কোটি ছয় লাখ মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। অন্যদিকে, সেখানে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষের সংখ্যা ২৮ লাখ এবং চীন থেকে আসা মানুষের সংখ্যা ২৫ লাখ। সম্প্রতি গ্যালাপ জরিপে দেখা গিয়েছে, মার্কিন অর্থনীতিতে অভিবাসীদের ভূমিকা থাকলেও ৫৫ শতাংশ মার্কিন নাগরিক চাইছেন অভিবাসন হ্রাস পাক। অভিবাসনকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে বিশেষত মেক্সিকো সীমান্তে অবৈধ প্রবেশ রুখতে রাজনৈতিক ঐকমত্যও রয়েছে।
মার্কিন গণমাধ্যম ফক্স নিউজের তথ্যানুযায়ী, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শাসনামলে চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা বেড়েছে ৭৩ লাখ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্ত দিয়ে এসব অবৈধ অভিবাসী দেশটিতে প্রবেশ করেছে। এই সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের ৩৬টি অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যার থেকে বেশি। মার্কিন কাস্টমস ও সীমান্ত সুরক্ষা কর্তৃপক্ষের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ওই রিপোর্ট করা হয়েছে। যদি অভিবাসী প্রবেশের এই ধারা অব্যাহত থাকে তাহলে ২০২৪ অর্থবছরে অবৈধ অভিবাসী প্রবেশের নতুন রেকর্ড হবে। গত বছর ২৪ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ প্রবেশ করে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে। সীমান্তবর্তী অঙ্গরাজ্য নিউ মেক্সিকোর জনসংখ্যার থেকে বেশি এই অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা। ২০২১ সালে বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর মোট ৭২ লাখ ৯৮ হাজার ৪৮৬ জন অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন। ওবামা প্রশাসনে বাইডেন ভাইস-প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায়, তিন কোটিরও বেশি লোক নির্বাসন হয়েছিল, যার ফলে কিছু অভিবাসন সংস্কার কর্মী বারাক ওবামাকে ‘ডিপোর্টার-ইন-চিফ’ বলে নাম দিয়েছিলেন।
আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক জেরেমি রবিন্স বলেছেন, কোন প্রেসিডেন্ট যদি গণবহিষ্কার নীতি অনুসরণ করতে যান, তাহলে সেটা করতে সরকারের বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ হবে এবং একই সময় অর্থনীতির উপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে। তিনি বলেন, এটা খুবি গুরুত্বপূর্ণ যে, নীতি নির্ধারকরা এবং আমেরিকান জনগণ বুঝুক এর মধ্যে কী জড়িত আছে। করদাতাদের লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ হবে, ইতোমধ্যে চাপে থাকা শিল্পখাত বিধ্বস্ত হবে, লক্ষ লক্ষ মানুষ ডিটেনশন সেন্টারে আটক, এবং হাজার হাজার পরিবার ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাবে যার ফলে দেশজুড়ে বিশৃঙ্খলা আর মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হবে”।
বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারিক হাসান জানিয়েছেন অভিবাসীদের অনুপস্থিতির বড় প্রভাব পড়বে মার্কিন অর্থনীতিতে।
তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, ‘যদি অবৈধ অভিবাসীদের পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়, তাহলে ধরে নিন মাথাপিছু জিডিপি পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ কমে যাবে। অর্থাৎ কিছু মানুষ কমে যাওয়ার (অভিবাসীদের অনুপস্থিতি) যে প্রভাব, তার প্রতিফলন ঘটবে জিডিপিতে।’
লাতিন আমেরিকার ওয়াশিংটন অফিসের অভিবাসন ও সীমান্ত বিশেষজ্ঞ অ্যাডাম আইজ্যাকসন বলেন, ‘গণ-নির্বাসনের ভীতিকর দৃশ্যাবলী রাজনৈতিকভাবে ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’
লেখক : মুহাম্মদ মোরশেদ আলম, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাংবাদিক