চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

কর্মস্থলে ফিরতে চান শাস্তি পাওয়া দুবাই প্রবাসীরা

জুবাইর উদ্দিন

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১১:০৭ পূর্বাহ্ণ

২২ বছরের বেশি সময় দুবাই ছিলেন রাউজানের প্রবাসী সাইদুল হক সাইদ। সেখানে ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছিলেন। নিয়মিত বৈধ পথে পাঠাতেন রেমিট্যান্স। সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে দেশটিতে জেলে যেতে হয় তাকে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রচেষ্টায় সাধারণ ক্ষমা পাওয়ার পর দেশে ফিরে আসেন তিনি।

 

 

 

কিন্তু কর্মহীন হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাইদ। তাই ফিরতে চান নিজ কর্মস্থলে। যদিও তাকে ‘নো-এট্রি’ ভিসা দিয়ে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। শুধু সাইদই নয়, একইভাবে দেশে ফেরা পাঁচজনের সাথে কথা হয় দৈনিক পূর্বকোণের; তারা সকলেই নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরতে চান। এদের মধ্যে রয়েছেন- দুবাইয়ের ব্যবসায়ী আফসারুল আমিন, চাকরিজীবী এসকান্দর হোসেন, গ্যারেজের মালিক গাজী মাহফুজুর রহমান ও জিয়াউল হক জিসান।

 

 

 

দেশটিতে কী কী রয়েছে জানতে চাইলে সাইদুল হক সাইদ বলেন, আমার গাড়ির ব্যবসাসহ তিনটি দোকান রয়েছে। দেখার মতো কেউ নেই। কর্মচারী যারা আছে তারা ঠিকমতো চালাতে না পারায় ইতোমধ্যে একটি দোকান ছেড়ে দিতে হয়েছে। এখন নিজের প্রতিষ্ঠান ও পরিবারের কাছে ফিরে যেতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সহযোগিতা চাই।

 

 

 

রাজতন্ত্র আইনে শাস্তি হতে পারে জেনেও আন্দোলনে কেন অংশ নিয়েছিলেন জানতে চাইলে জিয়াউল হক জিসান বলেন, আমরা স্বতস্ফ‚র্তভাবে ওই মিছিলে অংশ নিয়েছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম স্বৈরাচারী হাসিনা আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের বুকে আর একটাও যেন গুলি না চালায়। আমরা জানতাম প্রতিবাদ করলে রাজতন্ত্র আইনে আমাদের শাস্তি পেতে হবে। সেই শাস্তিকে উপেক্ষা করেই আমরা আন্দোলনে নেমেছিলাম।

 

 

 

কন্ট্রাক্টরের কাজ করা আফছারুল আমিন বলেন, আন্দোলনের পরদিন ওই দেশের পুলিশ আন্দোলনরত বাঙালিদের গ্রেপ্তার করে দ্রæতসময়ের মধ্যে যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করে। আমরা খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পর কোন উপায় দেখছিলাম না। সারাক্ষণ পরিবারের দুশ্চিন্তায় সময় কেটেছে। অবিরত চোখের পানি ঝরিয়েছি। আল্লাহর কাছে একটাই চাওয়া ছিল, আল্লাহ আমাদের এই অন্ধকার কুঠুরি থেকে মুক্ত করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিন।

 

 

 

এসকান্দর হোসেন বলেন, ৪৫টা দিন আমার কাছে কয়েক শ বছরের মতো লেগেছিল। সময় যেন ফুরাচ্ছিল না। জেলে বন্দী থাকা অবস্থায় হঠাৎ একদিন শুনলাম আমাদের মুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশের সরকার আমিরাতের সাথে যোগাযোগ করছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেষ করা যাবে না।

 

 

আমিরাতে আবারও ফিরতে প্রধান উপদেষ্টার সহযোগিতা চেয়েছেন দেশটিতে গ্যারেজের মালিক গাজী মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা আবারও আমিরাতে ফিরতে চাই। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার চাইলে আমিরাত সরকারের সাথে যোগাযোগ করে আমাদের ভিসার ‘নো এন্ট্রি’ তুলে নেয়া সম্ভব। যদি ফেরানো সম্ভব না হয় তাহলে এখানে আমাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হোক।

 

 

 

উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করায় গত জুলাই মাসে ৫৭ জন বাংলাদেশি গ্রেপ্তার হন ও শাস্তি পান। পরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে ওই ৫৭ বাংলাদেশির সবাইকে ক্ষমা করার আদেশ দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কারাদণ্ড প্রত্যাহার করা হয়।

 

 

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট