চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিদেশি পোশাকের সমান তালে জমেছে দেশীয় বুটিক

মরিয়ম জাহান মুন্নী

৩১ মার্চ, ২০২৪ | ১:৫৯ অপরাহ্ণ

বিদেশি পোশাকের সাথে পাল্লা দিয়ে ঈদ বাজারে সমানতালে বিক্রি হচ্ছে দেশীয় বুটিকের পোশাক। মানে ভালো, আরামদায়ক বিধায় এ পোশাকগুলোর দামও সকল শ্রেণির ক্রেতার নাগালে। ঈদকে কেন্দ্র করে সন্তোষজনক বেচাকেনা চলছে দেশীয় বুটিকে। নগরীর বিভিন্ন শপিংমলের বুটিক হাউস ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। অবশ্য দেশীয় বুটিক হাউসের উদ্যোক্তাদের দাবি-পাকিস্তান, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী লাগেজে করে অবৈধভাবে পোশাক নিয়ে আসেন। ভ্যাট- ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে এসব পণ্য কোনো আউটলেট ছাড়াই ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করে স্বল্পমূল্যে। এতে আমরা যারা দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করছি তারা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। দুঃখ করে বুটিক হাউসের মালিকেরা বলেন, একটি পোশাক তৈরি করতে যে উপকরণের প্রয়োজন তার খরচ বেড়েছে। সেই খরচ তুলনা করে ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে পোশাকের দাম নির্ধারণ করলে ক্রেতা হারাতে হচ্ছে দেশীয় পোশাকের।

 

সরেজমিনে বিভিন্ন মার্কেটের বুটিক হাউস ঘুরে দেখা যায়, কটন, সফুরা সিল্ক, মসলিন, জামদানি, খাদি ও তাঁতের কিছু নির্দিষ্ট উপকরণ দিয়ে মূলত পোশাকগুলো তৈরি করা হয়। এসব কাপড়ের মিশ্রণে তৈরি হচ্ছে শাড়ি, থ্রি-পিচ, টু-পিচ, কুর্তি, কুটি ও গাউন। তৈরি হচ্ছে ছেলেদের ফতুয়া, পাঞ্জাবি ও শার্ট। রয়েছে শিশুদের আরামদায়ক পোশাকও। মেয়েদের পোশাকগুলো এক হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায়, ডিজাইনের উপর নির্ভর করে শাড়ি, গাউন বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকায়, ছেলেদের পোশাক এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। শিশুদের পোশাক ৫শ’ টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।

 

আফমী প্লাজার ‘কৃষ্টি বুটিক’র কর্ণধার নূজহাত নূয়েরী কৃষ্টি বলেন, এখন দেশীয় পোশাকের বাজার খুব জমজমাট। অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি আমাদের স্থানীয় এবং দেশীয় ডিজাইনারদের তৈরি পোশাক এখন আন্তর্জাতিক মানের পোশাকের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। আবার আমরা চট্টগ্রামে যারা আছি তাদের মধ্যে অনেকে চট্টগ্রাম থেকে দেশব্যাপী কাজ করছি। প্রতিবছর ঈদসহ বিভিন্ন বাঙালি উৎসবে আমাদের দেশীয় ডিজাইনাররা অসাধারণ কিছু ডিজাইন নিয়ে আসেন। এগুলোর চাহিদাও বেশি।

 

তিনি বলেন, আমি বাংলার ঐতিহ্য ‘কাথাঁ নকশা’ নিয়ে কাজ করি। যেখানে দেশীয় উপকরণে নিখুঁত বাঙালিয়ানা রয়েছে। যা বর্তমান ফ্যাশন সচেতন নারীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। অথচ ঈদ উৎসবের সময় দেশে কিছু লাগেজ পার্টির আবির্ভাব হয়। যারা ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে অবৈধ পথে আসা পোশাকগুলো দেখান। কিছু অফার দেন। এ লাগেজ পার্টিরা সরকারি কর ফাঁকি দিয়ে গোপনে দেশে পণ্য এনে বিক্রি করছে। যেহেতু তাদের কোনো ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে হয় না কোনো আউটলেট নেই তাই স্বল্পমূল্যে পোশাক বিক্রি করেও তাদের মোটা অংকের লাভ থাকে। এক্ষেত্রে আমরা যারা দেশীয় বুটিক নিয়ে কাজ করি তারা চাইলেই স্বল্পমূল্যে পোশাক বিক্রি করতে পারি না। কারণ এখন সব রকম উপকরণের দাম চড়া এবং শ্রমিক খরচ বেশি। দাম বাড়াতে গেলেই ক্রেতা হারাতে হয়।

 

আখতারুজ্জামান সেন্টারের ‘নারী ফ্যাশন মেকার’র কর্ণধার আশরাফুল হাসান জনি বলেন, ঈদের বাজারে সব রকমের পোশাকের বেচাবিক্রি আছে। তেমনি দেশীয় বুটিকের বেচাবিক্রিও কম নয়। কারণ দেশীয় বুটিক হচ্ছে ঈদ পোশাকের মধ্যে ২য় স্থানে রয়েছে। কিন্তু এখন একটা বড় সমস্যা হচ্ছে অনলাইন ব্যবসা। যেখানে কোনো নিয়ম-কানুন ছাড়াই কিছু মানুষ বিভিন্ন গ্রæপ-পেজে এসে পোশাক বিক্রি শুরু করে। দেখা যায় এদের কোনো শো-রুম বা আউটলেট নেই, ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট নেই। সরকারি কোনো ভ্যাট- ট্যাক্স কিছুই দিতে হয় না। এরা আবার বাইরের পোশাকগুলো অফারে বিক্রি করে। দেশীয় পোশাকের বাজার আরো রমরমা হওয়ার কথা থাকলেও এদের কারণে সেটি হচ্ছে না। সরকারি সবরকম নিয়মনীতি মেনে আমরা ব্যবসা করেও সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। অবৈধভাবে লাগেজে করে পণ্য এনে বিক্রি করা গ্রুপের লোকগুলোকেও একটি ব্যবসায়িক কাঠামোতে আনা প্রয়োজন।

 

খুলশী কনকর্ড টাওয়ারের ‘স্ট্রাইপ ফ্যাশন হাউস’র কর্ণধার সাদমান সাঈকা সেফা বলেন, দেশীয় বুটিক আরো ভালো করতো, যদি বিরাজমান কিছু সমস্যার সমাধান করা যেত। এরমধ্যে বড় সমস্যা হচ্ছে, পোশাক তৈরির কাঁচামালের দাম অনেক বেশি। তার উপর আমাদের কিছু লিমিটেড উপকরণ নিয়ে কাজ করতে হয়। অথচ ভারত-পাকিস্তানে তারা অনেকগুলো উপকরণের মিশ্রণে কাজ করে। তাদের এ কাপড়গুলোর চাহিদা আমাদের দেশে বেশি। আবার দামেও সস্তা। আমরা কাজ করি মূলত সফুরা সিল্ক, মসলিন, জামদানি, খাদি, কটন, তাঁত এমন কিছু নির্দিষ্ট উপকরণ নিয়ে। কিন্তু এগুলো এখন অনেক দাম। এত দামের মধ্যেও যখন কোনো পণ্য তৈরি করি, দেখা যায় বিক্রির সময় ক্রেতার সাথে দামের তারতম্য হয়। আবার আমরা যারা নারী উদ্যোক্তা আছি ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে গেলে তারা দিতে চায় না। বাবা বা স্বামীর বিভিন্ন রকম কাগজপত্র খোঁজে। এসব কারণে আমাদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। না হয় দেশীয় বুটিক আরো এগিয়ে যেত।

 

আফমী প্লাজায় শপিং করতে আসেন আছিয়া বেগম ও আসমা আক্তার। তারা বলেন, বাইরের দেশের কালারফুল পোশাক ছাড়া ঈদের আমেজ আসে না। তাই ঈদের দিনের জন্য অবশ্যই বাইরের পোশাক লাগবে। কিন্তু আমারদায়ক পোশাকের মধ্যে দেশীয় বুটিক শ্রেষ্ঠ। ক্রেতা হিসেবে আমাদের কাছে বাইরের পোশাকগুলো যদিও প্রথম সারিতে থাকে, তবে অবশ্যই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দেশীয় বুটিকের পোশাকগুলো।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট