
সাম্প্রতিক সময়ে দামপাড়ার চিটাগং প্রিপারেটরী স্কুলটি শহরের কেজি স্কুলগুলোর মধ্যে অভিভাবক মহলের বেশ প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়েছে। স্কুলের লেখাপড়ার মান, স্কুলপরিচালনায় দক্ষতা ও অভিজ্ঞতায়, ছাত্রছাত্রীদের সদাচরণ, শৃঙ্খলা, সুন্দর হস্তাক্ষরের জন্য সকল মহলের আস্থা অর্জন করেছে।
মাত্র ৫২ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে ২০০৫ সালে দামপাড়ার চিটাগং প্রিপারেটরী স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষকদের
তৎপরতায় পরবর্তী বছরেই এ সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যায়। এখন তো সব স্কুল শুরু করতেই স্কুল ও কলেজ নাম ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে আপনি ব্যতিক্রম কেন? এ প্রসঙ্গে স্কুলের অধ্যক্ষ জাহান আকতার হোসাইন জানানÑ ‘হাই স্কুল অর্থাৎ উচ্চ মাধ্যমিক শেষ না করে কলেজে পড়া যায় না। সুতরাং কিন্ডারগার্টেন স্কুল শুরু করে কলেজ নাম দেওয়ার পক্ষপাতী আমি নই। তাই আমার স্কুল শুরু হয় চিটাগং প্রিপারেটরী স্কুল নামে। প্রিপারেটরী নাম রাখার উদ্দেশ্য কোমলমতী শিশুদের ভিত তৈরি করার প্রতিষ্ঠান হিসেবে এগিয়ে যাওয়া। সেই লক্ষ্যে আমার শিক্ষকগণ কাজ করে চলেছেন। শিশুদের আনন্দের সাথে পাঠদান করা, স্কুলের পড়া স্কুলেই শেষ করা, বাড়ীর কাজ না দেওয়া,সর্বোপরি চর্চা ও অনুশীলনের মাধ্যমে প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর সুন্দর হস্তাক্ষর নিশ্চিত করা আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য’। তিনি আরও জানানÑ ‘প্রথমত. আমি ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধির পরিবর্তে তাদের লেখাপড়ার গুণগত মান বাড়ানোর পক্ষপাতী। একে তো ভাড়া করা বাড়িতে অধিক ছাত্র নেওয়ার সুযোগ কম, তদুপরি অতিরিক্ত ছাত্র ভর্তি করে শ্রেণিকক্ষের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হোক তা চাই না। তাই বয়স, শ্রেণি ও মান ঠিক রেখে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে উপযুক্ত ছাত্রছাত্রী নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’
আপনার স্কুল হতে প্রচুর ছাত্রছাত্রী অন্য স্কুলে চলে যায় শুনেছি, এর কারণ কি? এ প্রসঙ্গে তিনি আরও জানানÑ
‘এর অন্যতম কারণ হচ্ছে আমরা প্রত্যেক শ্রেণিতে ছাত্রছাত্রীর ভিত মজবুত করে উন্নত মানের পাঠদান করে থাকি। ফলে অভিভাবকগণ যে কোন বড় স্কুলে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হলে সর্বাগ্রে আমার ছাত্রছাত্রীরা ভর্তির সুযোগ পায়। শহরের নামকরা সকল স্কুলে যেমন বাওয়া, ইস্পাহানী, ফ্যান্ট পাবলিক, খাস্তগীর-কলেজিয়েট সহ সকল সরকারী স্কুলে আমার প্রচুর ছাত্র ছাত্রী সুযোগ পেয়েছে। এতে আমি গর্বিত ও আনন্দিত।’
আপনার স্কুল পিএসসি’র ব্যবস্থা নেই কেন? এর উত্তরে তিনি বলেনÑ ‘এই দুঃখবোধ আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। সরকারী স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পেয়ে ছাত্রছাত্রীরা চলে যাচ্ছে বিধায় আমি এ সুযোগ হতে বঞ্চিত হচ্ছি। অথচ ২০১২ সালপর্যন্ত আমার স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি বিদ্যমান ছিল। অথচ আমি অভিভাবকদের গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, আমার স্কুল হতে পি.এস.সি দিলে আমি তাদের শতভাগ গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়া নিশ্চিত করতে পারতাম।’
এই স্কুলের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ, পাঠ্যসূচীর পাঠদান, অভিজ্ঞ শিক্ষক ম-লীর সমাবেশ ছাড়া ও আমরা সকল জাতীয় দিবস পালনসহ সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলীর উপর জোর দিয়ে থাকি। স্কুলের শুরু থেকেই আর্ট প্রশিক্ষণ, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, স্কুলেই কোরআন শিক্ষার ক্লাস, সকল আয়োজনই রেখেছিলাম। কিন্তু অভিভাবকদের কোচিং ক্লাস করার সুবিধার্থে তাদের আবেদনের ভিত্তিতে রুটিন থেকে এসব বাদ দিতে বাধ্য হয়েছি।
স্কুল প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ জানানÑ ‘আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি শহরের অনেক ধনী স্কুলে (আর্থিকভাবে লাভবান) না থাকলেও আমার স্কুলে মেধা তালিকার প্রথম তিনজনকে প্রতি বছর এককালীন মেধাবৃত্তি দেওয়া হয়। প্রত্যেক শ্রেণিতে একজন করে মেধাবী অস্বচ্ছল ছাত্রকে ফ্রি পাঠদান করা হয়; তাছাড়া বহু ছাত্রছাত্রীকে ভর্তির সময় কম টাকায় ভর্তি করানো হয়। ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের সন্তুষ্টি আমার একান্ত কাম্য। সমাজে কিছু মানুষ যদি এতে উপকৃত হয় তবে আমার উদ্যোগ সার্থক হবে বলে আমি মনে করি।’