
বাঙালির মাতৃভাষা বাংলা। বাল্যকাল থেকে শিশুরা এই মাতৃভাষা অর্জন করে সহজাত ভাবেই। শিশুকে শিক্ষাদানের জন্য তাই মূলত মাতৃভাষাকেই আশ্রয় করতে হয়। ভাষা শেখার ক্ষেত্রে প্রত্যেক শিশুদের চারটি দক্ষতা অর্জন করতে হয়। এ দক্ষতাগুলি হচ্ছেÑ শোনা, বলা, পড়া ও লেখা। প্রাথমিক শিক্ষাক্রমে বাংলা বিষয়ে পড়া দক্ষতার ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা শেষে কী যোগ্যতা অর্জন করবে এবং প্রতি শ্রেণিতে কী যোগ্যতা অর্জন করবে তা সুনির্দিষ্টভাবে লেখা আছে। বাংলা বিষয়ে পড়া দক্ষতার প্রান্তিক যোগ্যতাসমূহ নি¤œরূপÑ
১. স্পষ্ট, শুদ্ধ ও প্রমিত উচ্চারণে সাবলীলভাবে পড়তে পারা।
২. ছড়া, কবিতা, রূপকথা, গল্প, কথোপকথন, বর্ণনা ইত্যাদি পড়ে মূলভাব বুঝতে পারা।
৩. হাতের লেখা ও মুদ্রিত লেখা পড়তে পারা।
প্রান্তিক যোগ্যতাসমূহ অর্জনের জন্য বয়স, সামর্থ্য ও মানসিক পরিপক্কতার ভিত্তিতে শ্রেণি ভিত্তিক অর্জন উপযোগী যোগ্যতাসমূহ নির্ধারিত আছে (বাংলা বিষয়ের প্রাথমিক শিক্ষাক্রম দ্রষ্টব্য)। শিশুদের গুণগত মান উন্নয়নের জন্য পঠন দক্ষতা অর্জন করানো অত্যাবশ্যক। শিক্ষাক্রম সম্মন্ধে যতবেশি স্বচ্ছ ধারনা আমাদের থাকবে পঠন দক্ষতা অর্জন করানো আমাদের জন্য তত সহজ হবে।
শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে পঠন দক্ষতা অর্জনে শ্রেণিকক্ষে পদ্ধতিগত পাঠদান অপরিহার্য। শিক্ষার্থীর পঠন দক্ষতা অর্জন করার জন্য শিখন শেখানো কাজে আমরা নি¤œবর্ণিত পদ্ধতিসমূূহ অনুসরণ করতে পারিÑ
১. শিক্ষক প্রথমে পাঠের অংশ শুদ্ধ ও স্পষ্ট উচ্চারণে স্বাভাবিক গতিতে পড়বেন। শিক্ষার্থীরা বই দেখে শিক্ষকের পাঠ মনোযোগ সহকারে শুনবে।
২. শিক্ষক প্রতি শব্দ আলাদা আলাদাভাবে শুদ্ধ ও স্পষ্ট উচ্চারণে পড়বেন। শিক্ষার্থীরা শিক্ষককে অনুসরণ করে প্রতি শব্দের নিচে আঙুল রেখে প্রতিটি শব্দের শুদ্ধ ও স্পষ্ট উচ্চারণ অনুশীলন করবে।
৩. শিক্ষার্থীরা দলে (তিন জনের একটি দল) প্রতি শব্দ আলাদা আলাদাভাবে পড়বে এবং পড়তে না পারা শব্দ চিহ্নিত করবে। শিক্ষক পড়তে না পারা শব্দগুলো দল থেকে সংগ্রহ করে বোর্ডে লিখবেন ও বারে বারে জোরে জোরে সে সব শব্দের শুদ্ধ ও স্পষ্ট উচ্চারণ অনুশীলন করাবেন।
৪. অতঃপর শিক্ষক প্রথমে টেনে টেনে ও পরে স্বাভাবিক গতিতে পাঠের অংশ পুনরায় পড়বেন। শিক্ষার্থীরা শিক্ষককে অনুসরণ করে প্রতি শব্দের নিচে আঙুল রেখে পাঠের অংশ টেনে টেনে ও স্বাভাবিক গতিতে পড়া অনুশীলন করবে।
৫. পরিশেষে শিক্ষক পাঠের অংশ শুদ্ধ ও স্পষ্ট উচ্চারণে পড়তে পারা মূল্যায়ন (অপেক্ষাকৃত দুর্বল থেকে সবলের দিকে) করবেন।
৬. পঠিত অংশ বাড়িতে পড়ার কাজ হিসেবে দিয়ে পরদিন আদায় করবেন।
শিখন শেখানো কার্যক্রমের বাইরে শিক্ষার্থীর পঠন দক্ষতা বৃদ্ধি ও পঠনে আগ্রহী করে তুলতে আমরা আরো যা করতে পারিÑ
ক) সপ্তাহে একবার সম্পূরক পঠন সামগ্রী পাঠ করা।
খ) বিদ্যালয় ও বিদ্যালয়ের বাইরে বন্ধুদের সাথে ও পরিবারে প্রমিত উচ্চারণে চলিত ভাষায় কথা বলতে উৎসাহিত করা।
গ) মাসে একবার শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক গল্প বলতে দেয়া।
ঘ) নির্ধারিত ও উপস্থিত বক্তৃতার আয়োজন করা।
ঙ) বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা।
চ) শ্রেণিতে পঠন/উচ্চারণ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা।
ছ) বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠান গুলোতে মাঝে মাঝে নাটক মঞ্চস্থ করা। জ) অবসর সময়ে পাঠাগার ব্যবহারে উৎসাহিত করা।
ঝ) শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণে দেয়ালিকা প্রকাশ করা।
প্রাথমিক শিক্ষাকে যুগোপযোগী করতে এবং এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের শিক্ষা সংক্রান্ত সকল নিদের্শনা, গৃহিত কর্মসূচী এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অপরিহার্য। বাংলাভাষার গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য শিশুর পঠন দক্ষতা অর্জন অত্যাবশ্যক। শিক্ষার্থীদের উপলব্দি করাতে হবে যে শিক্ষা, জ্ঞানার্জন ও কৌতূহল মিটানোর জন্য পঠনের কোনো বিকল্প নেই। নিয়মিত পাঠাভ্যাস শিক্ষার্থীকে করে তোলে স্ব শিক্ষিত।
আমার এই প্রয়াস ক্ষুদ্র শিক্ষকতা জীবনের অভিজ্ঞতার ফসল। এই লেখনি শিশুদের পঠন দক্ষতা অর্জনে সামান্যতম ভূমিকা রাখলে আমার এই প্রচেষ্টা সফল হবে বলে প্রত্যাশা করছি। সাথে সাথে এই লেখনিকে আরো সমৃদ্ধ করার জন্য বিজ্ঞজনদের সুচিন্তিত পরামর্শ কামনা করছি।
প্রধান শিক্ষক
পূর্ব জিরি আমানিয়া লোকমান হাকিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পটিয়া, চট্টগ্রাম