পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (চবিসাস) উদ্যোগে আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক্যাম্পাসের সকল রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের অংশগ্রহণে ইফতার মাহফিল এক মিলনমেলায় রূপ নেয়।
বুধবার (১২ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। চবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আজহার। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আল-আমীন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, হালদা গবেষক ও প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনজুরুল কিবরীয়া।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন খান বলেন, আমাদের রাষ্ট্রের চারটি স্তম্ভের অন্যতম একটি হলো গণমাধ্যম। বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমগুলো সঠিক ভূমিকা পালন করতে না পারার কারণে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ তৈরি হয়েছে। আমাদের দেশে একই ঘটনার সংবাদ বিভিন্নভাবে হয়, অনেক ভুল তথ্য প্রকাশ করা হয় কিন্তু প্রকৃত সত্য তুলে ধরে খুব কম সাংবাদিক সংবাদ করেন। সাংবাদিকদের সকল প্রতিবেদন তথ্যমূলক, অনুসন্ধানমূলক হতে হবে, তাহলেই বাংলাদেশকে আপনারা সঠিক দিকে নিয়ে যেতে পারবেন। সাংবাদিকদের মূল কাজ হলো সঠিক তথ্য পরিবেশনের মাধ্যমে জাতিকে সঠিক পথের নির্দেশনা দেওয়া।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে চবি সাংবাদিক সমিতির সহ-সভাপতি আহমেদ জুনাইদ বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির ইফতার মাহফিল সবসময়ই ক্যাম্পাসের সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের মিলনমেলায় পরিণত হয়। বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে ক্যাম্পাসে অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারত না। কিন্তু এখন অনেকগুলো রাজনৈতিক দল একত্রে কাজ করছে। এমন গণতান্ত্রিক ও ঐক্যবদ্ধ ক্যাম্পাস বিনির্মাণে সাংবাদিক সমিতি সবসময় ভূমিকা পালন করবে।
চবি রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকরা হলো সমাজের ঐ শ্রেণি, যাদের মাধ্যমে পরিবর্তন আসে। যেটা আমরা সম্প্রতি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময়ে দেখেছি। মানবতাবিরোধী অপরাধ বা আয়নাঘরের মতো বিভিন্ন প্রতিবেদন সবার সামনে তুলে ধরেছিল যারা তারা হলো সাংবাদিক। সাংবাদিকরা যদি সক্রিয় না থাকত তাহলে আমাদের একার পক্ষে দেশ থেকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করা সম্ভব হতো না।
চবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, আজকের এই ইফতার মাহফিল সবচেয়ে বেশি অনন্য। এখানে উপস্থিত রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্যরা ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এই ধরনের পরিবেশ বিগত দিনে ক্যাম্পাসে পাওয়া যায়নি। কিন্তু, এই পরিবেশ প্রক্টরিয়াল বডি তৈরি করেনি। এই পরিবেশ তৈরি করেছে আমাদের শিক্ষার্থীরা, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
চবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, রমজান মাস হলো আত্মশুদ্ধির মাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল রাজনৈতিক সংগঠনকে নিজেদের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন এনে ক্যাম্পাসে একটা স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতি সবার মাঝে সুসম্পর্ক তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
চবি ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলী বলেন, আজকের এই ইফতারে সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এক ছাদের নিচে মিলিত হয়েছে। দীর্ঘ ৯ বছর পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি ইসলামী ছাত্রশিবিরকে ইফতার মাহফিলে দাওয়াত করেছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। ফ্যাসিবাদের আমলে হয়তো কোন এক জুজুর ভয়ে সাংবাদিক সমিতিও ছাত্রশিবিরকে দাওয়াত দিতে সক্ষম হয়নি। রমজান মাস হলো তাকওয়া অর্জনের মাস। সাংবাদিকতার মাঝেও এক ধরনের তাকওয়া রয়েছে। কেউ কোনো তথ্য দিলেই তার উপর ভিত্তি করে সংবাদ প্রকাশ না করে আপনারা বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করবেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আজহার বলেন, এ বছরের ইফতার মাহফিল আমরা ব্যতিক্রম করেছি। প্রতিবারের মতো শহরে ইফতার মাহফিল না করে আমরা ক্যাম্পাসে আয়োজন করেছি, যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অংশীজনকে এক ছাদের নিচে আনতে পারি। কারণ গত ১৫ বছর এমন পরিস্থিতি ছিল না যে আজকের মতো সবাই এক ছাদের নিচে বসতে পারবে। এটা হল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ফসল। আপনারা জানেন বিগত ৩০ বছর ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি একটি কুচক্রি মহল তাদের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। সাংবাদিক সমিতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই তারা বিভিন্ন অপপ্রচার শুরু করেছে। আমি আশা করি আপনারা সবাই এসব বিষয়ে সচেতন থাকবেন।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সোহরাওয়ার্দী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মান্নান, শহীদ আব্দুর রব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. একেএম আরিফুল হক সিদ্দিকী, সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. কোরবান আলী ও নাজমুল হোসাইন, ছাত্র অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব রোমান রহমান, ইসলামী ছাত্র মজলিশের সভাপতি সাকিব মাহমুদ রুমি, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সেক্রেটারি আব্দুর রহমান, ইনকিলাব মঞ্চের আহবায়ক রকিবুল ইসলাম, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান ও বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগরের সহ-সভাপতি ঈশা দে। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সাংবাদিক সমিতির সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ।
পূর্বকোণ/জুনায়েদ/জেইউ/পারভেজ