কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে আন্দোলনকারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক শিক্ষার্থীকে আন্দোলন থেকে না সরলে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তি হওয়া এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।
রবিবার (৭ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাবার নম্বরে ফোন দিয়ে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ জানায় কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী খান তালাত মাহমুদ রাফি। তিনি নাট্যকলা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এ নিয়ে রাফি বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।
রাফি পূর্বকোণকে বলেন, গতকাল রাতে একটি অজ্ঞাত নম্বর থেকে আমার আব্বুর নম্বরে ফোন দিয়ে আমাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। আমার বাবাকে ওই ব্যক্তি বলে, আপনার ছেলেকে যদি কোটা আন্দোলন থেকে সরে যেতে না বলেন তাহলে হয়তো আপনার ছেলেকে আর পাবেন না, তার লাশটা পাবেন। দেখা যাবে যে কোথাও না কোথাও মেরে ফেলে রাখা হয়েছে। পরে লাশটা এম্বুলেন্সে করে পাঠানো হবে। পরে আবার আব্বু পরিচয় জানতে চাইলে লোকটি বলে, আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। ক্যাম্পাসেই থাকি। এটা বলে ফোন কেটে দেয়।
রাফি বলেন, যে নম্বর থেকে কল করা হয়েছিল সেটি নিয়ে আমি আমার সাধ্যমতো খোঁজ খবর নিয়েছি। আন্দোলনে আমার সহযোগীরা ওই নম্বরটা চেক করে এবং বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছি আমাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে নাট্যকলা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের রিদয় আহমেদ রিজভী নামে এক শিক্ষার্থী। তার সাথে আমার কোনো পূর্ব পরিচয় ছিল না। তার বাড়ি নরসিংদী জেলায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলে থাকে। আমি যতো জায়গাতেই খোঁজ নিয়েছি প্রত্যেক জায়গা থেকেও একই তথ্য এসেছে।
অভিযোগকারী রাফি বলেন, আমি এখন ক্যাম্পাসে ও ক্যাম্পাসের বাইরে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত হুমকিদাতা রিজভী শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ চুজ ফ্রেন্ড উইথ কেয়ার (সিএফসির) অনুসারী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও প্রজন্ম সংগঠনের সদস্য।
মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও প্রজন্ম কমান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি মো. রমজান হোসাইন পূর্বকোণকে বলেন, রাফি ও রিদয় উভয়ই মুক্তিযোদ্ধার নাতি, আমাদের সংগঠনের সদস্য। রাফি প্রথমে ক্যাম্পাসে এসে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে। সে ভর্তিও হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটায়। কিন্তু হঠাৎ করে সুযোগ সুবিধা পাওয়ার লোভে কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। এমনকি সে রিদয়কে প্রলোভনও দিয়েছে তার সাথে আন্দোলনে যাওয়ার জন্য। রিদয় যেতে রাজি না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
হুমকি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রিদয় আহমেদ রিজভী। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, আমি রাফিকে ডিপার্টমেন্টের ছোটভাই হিসেবে জানি। সে একদিন এসে পরিচিত হয়েছিল। আমি বাড়িতে অবস্থান করছি। হত্যার হুমকি দিব কেন? আমি এ বিষয়ে জানি না। রাফি নিজেও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের একজন সদস্য। মুক্তিযুদ্ধা কোটা আমাদের অধিকার যা হাইকোর্ট আমাদের দিয়েছে, সরকার দেয়নি। আমি এই কোটার কোনো বিরোধিতা করি না। কিন্তু গতকাল অপরিচিত এক নম্বর থেকে কল আসে এবং আমাকে রাফির সাথে আন্দোলন করতে বলা হয়। আমি তাকেও চিনি না।
চবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. অহিদুল আলম বলেন, একটা অভিযোগ প্রক্টর অফিসে দেওয়া হয়েছে। এটা লিগ্যাল বিষয় হওয়ায় পুলিশ প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।
পূর্বকোণ/জুনায়েদ/জেইউ/পারভেজ