চট্টগ্রাম সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

দেশে থেকেই সিডনির বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ সম্পন্নের সুযোগ

অনলাইন ডেস্ক

৭ জুলাই, ২০২৪ | ৯:০৬ পূর্বাহ্ণ

সম্প্রতি বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়ার স্বনামধন্য ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনি (ইউটিএস)। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন সাপেক্ষে চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যৌথভাবে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর ফলে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে এক বছর শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করার পর সরাসরি সিডনির ইউটিএস-এ ভর্তির সুযোগ পাবে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা ইউটিএস-এর স্নাতকের প্রথম বছর বাংলাদেশে এবং পরবর্তী দুই বছর মূল ক্যাম্পাসে সম্পন্ন করতে পারবে।ইউটিএস সর্বশেষ কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‍্যাংকিংয়ে ৪৪তম স্থানে রয়েছে এবং ৫০ বছরের কম সময় হিসেবে এটি অস্ট্রেলিয়ার এক নম্বর ‘নবীন’ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সুপরিচিত। ৪৪ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী মিলিয়ে ইউটিএস অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি। অস্ট্রেলিয়ার ওয়ান ডে দলের অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের মতো স্বনামধন্য খেলোয়াড়ও এই প্রতিষ্ঠানের অ্যালামনাই।প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম (পিইউসি) বাংলাদেশের কোর্স ডেলিভারি পার্টনার এবং বাংলাদেশ এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিইআরআই) বাংলাদেশে ইউটিএস কলেজের স্থানীয় প্রতিনিধি। ইউটিএস কলেজ চট্টগ্রামের নিজস্ব ক্যাম্পাসে তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ভবিষ্যতে ঢাকাতেও এই কার্যক্রম শুরু করার কথা ভাবছে প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন ইউটিএস কলেজের পরিচালক ও সিনিয়র এক্সিকিউটিভ পিটার হ্যারিস। পিটার ইউটিএস কলেজের মার্কেট ও ব্যবসা উন্নয়ন কৌশলে নেতৃত্ব দেন। বাংলাদেশ সফরে এসে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে ইউটিএস-এর বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আলাপ করেছেন তিনি।

বাংলাদেশে সাধারণত উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার পর শিক্ষার্থীরা বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য সরাসরি আবেদন করে থাকেন। সেজন্য আইএলটিএস কিংবা অন্যান্য ইংরেজি ভাষার পরীক্ষা দিয়েও অপেক্ষা করতে হয় অফার লেটার আসার। কিন্তু ইউটিএস সেদিকে না গিয়ে প্রথম এক বছর নিজ দেশে ক্লাস শুরু করতে চাইছে। এমনটা কেন?  
পিটার হ্যারিস: বাংলাদেশে বর্তমানে চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির সঙ্গে আমাদের অংশীদারত্ব আছে। ইউটিএস-এ আগ্রহী শিক্ষার্থীদের প্রথম বছর বাংলাদেশে এখানেই অধ্যয়ন করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে প্রথমত, এতে অভিভাবকদের অনেক বড় একটি খরচ সাশ্রয় হবে। কারণ এখানে যা কিছু তাদের শেখানো হবে, সেটা সিডনিতে শিখতে খরচটি একটু বেশি পড়বে। আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে, এখানে এক বছরে শিক্ষার্থীদের কিছুটা পরিপক্ব করে গড়ে তোলা হবে। এতে শিক্ষার্থীরা তাদের কোর্সের বিষয়ে কারিগরি জ্ঞান, অস্ট্রেলিয়ায় লেখাপড়ার ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাবে। এতে যখন একজন শিক্ষার্থী এক বছরের কোর্স শেষ করে অস্ট্রেলিয়া যাবে, তখন আর সেভাবে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে না। আমরা দেখেছি শিক্ষার্থীদের জন্য এই ব্যবস্থা বেশ কার্যকর।বাংলা ট্রিবিউন: তাহলে এই সুযোগ শুধু চট্টগ্রামে কেন, রাজধানীতে কেন নয়?পিটার হ্যারিস: আমরা ঢাকাতেও অংশীদার বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি। আমরা যখন বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা করেছি, তখন চট্টগ্রামেই শুরু করার জন্য উপযোগী মনে করেছিলাম। তবে আমাদের নিকট ভবিষ্যতে ঢাকাতেও কোর্স চালু করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। যদিও চট্টগ্রামের অধিকাংশ শিক্ষার্থী শহর এলাকার বাইরে থেকে এসেছে। আমরা মনে করি, ঢাকাতেও কার্যক্রম চালু করলে আমরা আরও বেশি শিক্ষার্থী পাবো। হয়তো বা আগামী বছর আমরা শুরু করতে পারি।
ঢাকায় কোর্স শুরু করতে কেমন সময় লাগতে পারে বলে মনে করেন?পিটার হ্যারিস: আমি ঢাকা সফরে এসে এ বিষয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছি। মূলত বছর খানেক সময় লেগে যায় অনুমোদন এবং কাগজপত্র ঠিকঠাক করতে। কারণ দুই দেশেই এই বিষয়ে কাজ করতে হয়। সবকিছু সম্পন্ন করে চুক্তি সই করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে বছর খানেক সময় লেগে যায়। সুতরাং আশা করছি ২০২৫ সালের কোনও এক সময়ে আমরা ঢাকায় কার্যক্রম শুরু করতে পারবো।বাংলা ট্রিবিউন: ইউটিএস-এ একজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী কী বিষয়ে পড়ার সুযোগ পাবে?পিটার হ্যারিস: ইউটিএস-এ উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা তিনটি বিষয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পাবে। সেগুলো হচ্ছে, ব্যবসা, আইটি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং। আইটি আমাদের অনেক পপুলার কোর্স। কারণ আমাদের এখান থেকে পাস করে বেরিয়ে আসা আইটি শিক্ষার্থীরা চাকরির বাজারে বর্তমানে অনেক ভালো অবস্থানে আছেন। আইটিতে একজন শিক্ষার্থী সাইবার সিকিউরিটি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ডাটা অ্যানালাইটিক্স, প্রচলিত কম্পিউটার সায়েন্স শেখার সুযোগ পাচ্ছে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বিজনেস কোর্সের ক্ষেত্রে মেজর হিসেবে মার্কেটিং, ফিন্যান্সসহ অনেক ব্যাপক সেক্টরে অধ্যয়নের সুযোগ পাবে।বাংলা ট্রিবিউন: বাংলাদেশে প্রথম বছর কী কী শেখানো হবে?পিটার হ্যারিস: এখানে যেসব কোর্স করানো হবে, তা একবারই। একই কোর্স অস্ট্রেলিয়ার ক্যাম্পাসেও প্রথম বর্ষে পড়ানো হয়। একই কোর্স একইভাবে একই মান বজায় রেখে আমরা সিডনি, শ্রীলঙ্কা ও ভারত এবং বাংলাদেশে দিয়ে থাকি। শিক্ষার্থীরা যার ফলে স্বাধীনভাবে শিখতে পারেন, কীভাবে কমিউনিকেট করতে হয় জানতে পারেন, গ্রুপ ওয়ার্ক কীভাবে করতে হয় জানতে পারেন। অর্থাৎ কারিগরি জ্ঞান এবং সফট স্কিল একইসঙ্গে অর্জন করতে পারেন।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন নীতি, বাড়তি ফি’র কারণে শিক্ষার্থীরা কি ভিসা ম্যানেজ করতে পারবে বলে মনে করেন?পিটার হ্যারিস: আমি মনে করি, মার্কেট কিংবা শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা চায় নিশ্চয়তা। আমরা যত নিশ্চয়তা এবং স্বচ্ছতা দিতে পারবো, সেটি দিন শেষে অনেক বড় পরিবর্তন নিয়ে আসবে। সুতরাং আমি মনে করি এটি কোনও বিষয় হবে না। আজ না হয় কাল, এটি সবার জন্য মঙ্গলজনক হবে। আমি এই সেক্টরে দীর্ঘ সময় ধরে আছি। এই ধরনের ঘটনা আসে এবং যায়। ভালো এবং মেধাবী শিক্ষার্থীরা কোনও না কোনওভাবে অস্ট্রেলিয়ায় নিজের জায়গা করে নেয়। অস্ট্রেলিয়া অনেক উচ্চমানের শিক্ষা সরবরাহ করে থাকে। অনেক দীর্ঘ সময় ধরে সেই সুনাম ধরে রেখেছে। যদিও এখন সামান্য কিছু অসুবিধা রয়ে গেছে। তবে আমি মনে করি, শিগগিরই তা কাটিয়ে উঠবে।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউট

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন