আরবি ১৪৪০ হিজরীর নবম মাস রমজান। তাকওয়া, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস মাহে রমজান। মহান সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত পবিত্র কোরআন নাজিলের মাস রমজান। বছরের অন্যতম রজনী শবে কদর এ মাসেই। জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং কাঙ্খিত জান্নাত লাভের মাস এ মাস। তাই প্রতিটি মুসলমানকে রমজানের সুফল পেতে ১লা রমজান থেকে প্রতিদিন রোজা পালনের সাথে সাথে নিজেকে সিয়াম সাধনায় যুক্ত রাখা প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব। সিয়াম সাধনার মূল শিক্ষা হলো জীবনের সব ক্রিয়া কর্মকে পরিশুদ্ধ রাখা এবং যে কোন ক্ষতিকর কথা, কাজ ও আচরণ থেকে নিজেকে বিরত রাখা। রমজানে রোজাদার ব্যক্তি ক্ষুধা ও তৃষ্ণা তাঁর জীবনের পাপ-তাপ পুড়ে ছাই করে দেয়। রাসুল (দ.) বলেন, “যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসে রোজা রাখবে তার অতীতের সকল গুণাহ মাফ করে দেয়া হবে। যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসে তারাবির নামাজ পড়বে তার অতীতের সব গুণাহ মাফ করে দেয়া হবে। যে ব্যক্তি শবে কদরে ইবাদত করবে, তার অতীতের সব গুণাহ মাফ করে দেয়া হবে।” (বুখারি ও মুসলিম)
রমজানের পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ এবং তারাবির নামাজ খতমে কোরন মসজিদে গিয়ে সম্পন্ন করা অতি উত্তম। রমজানের পাঁচটি সুন্নত পালনে সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে। যেমন : ১) সেহরি খাওয়া ২) ইফতার করা ৩) তারাবির নামাজ পড়া ৪) পাক কোরআন তিলওয়াত করা ৫) ইতিকাফ করা। উল্লেখ্য নারীরাও নিজ কক্ষে ইতিকাফ করতে পারবেন। সকল রোজাদারকে তিনটি আমলের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। ১) কম খাওয়া ২) কম ঘুমানো ৩) কম কথা বলা। এছাড়াও রয়েছে হারাম থেকে বেঁচে, চোখের, কানের ও জবানের হেফাজত করা। রমজানের ৫ম সুন্নত হলো ইতিকাফ। ইতিকাফের অর্থ হলো কোনো জিনিষকে আঁকড়ে ধরা। এবং তাতে আবদ্ধ থাকা। সে অর্থে ইতিকা হলো আল্লাহর এবাদতে মশগুল থাকার নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা। বছরের যে কোনো সময় ইতিকাফ করা যায়। তবে রমজানের শেষ দশ রোজা মসজিদে ইতিকাফের উদ্দেশ্যে অবস্থান করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। এর কম সময় ইতিকাফ করলে তা নফল হিসেবে গণ্য হবে। পুরুষেরা মসজিদে ইতিকাফ করবেন। নারীরা নিজ নিজ ঘরে নির্দিষ্ট কক্ষে ইতিকাফ করবেন। তারাবির নামাজ রমজানের সম্পর্ক নিগূঢ়। বছরের অন্য কোনো সময় এই নামাজ হয় না। তারাবির নামাজ পুণ্যময়। এতে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়। সারা বিশে^র মুসলমান ২০ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করেন। মসজিদে মসজিদে এশার নামাজের পর কোরআন খতমের মাধ্যমে এই নামাজ পড়ানো হয়। কেউ কেউ নিজগৃহে একাকী ও এই নামাজ আদায় করে থাকেন।
সবশেষে আসি জাকাত সম্পর্কে। সারা বছর নিজের ও পরিবারের যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে কোনো মুসলমানের নিকট নিসাব পরিমাণ অর্থাৎ কমপক্ষে সাড়ে ৭ তোলা সোনা অথবা ৫২ তোলা রৌপ্য অথবা সমমূল্যের অর্থ বা ব্যবসাপণ্য থাকে তবে তাঁর সম্পদের শতকরা আড়াই শতাংশ হিসাবে আল্লাহর নির্ধারিত খাতে গরিব মিসকিনদের মধ্যে বণ্টন করতে হয়। এটাই হলো জাকাত। ধন সম্পদের ৪০ ভাগের এক ভাগ অসহায় গরীব-দুঃখীদের মধ্যে জাকাত হিসেবে দান করা প্রতিটি অর্থবান মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। এটাই আল্লাহর বিধান। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন “তাদের (সম্পদশালীদের) ধনসম্পদের রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের হক (সূরা আল জারিআত, আয়াত-১৯)। আসুন আমরা সবাই সঠিকভাবে রমজান পালনের মাধ্যমে আখেরাতে নাজাতের পথ খুঁজি।