চট্টগ্রাম শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

নজরুল-চর্চা হওয়া উচিত সার্বিক ও সার্বত্রিক

আবসার মাহফুজ

২৭ আগস্ট, ২০২৪ | ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ

‘গাহি সাম্যের গান/মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাহি/নহে কিছু মহীয়ান’।

 

মানবতার জয়গানে উচ্চকণ্ঠ কবি কাজী নজরুল ইসলাম শুধু বাংলাসাহিত্য ও সংগীতে নয়, আমাদের জীবনের প্রতিটি পরতেও অনন্য প্রভাব বিস্তার করে আছেন। মানবসাম্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আজীবন পুরোধা-সৈনিকের ভূমিকা পালনকারী এ কবির চেতনা ও আদর্শ চিরভাস্বর হয়ে আছে সমগ্র বাঙালি জাতির জীবনে। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হলেও তিনি মানবতার শত্রু শোষকশ্রেণির কাছে কখনও মাথা নত করেননি। আপসকামী নীতি গ্রহণ করলে সাম্রাজ্যবাদী নানা পুরস্কারের পাশাপাশি অর্থ-বিত্তের পাহাড়ও গড়তে পারতেন তিনি। কিন্তু অর্থ-বিত্তের, বৈভবের কাছে নিজেকে সমর্পণ না করে ‘চির উন্নত মম শির’ বলে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্যে।

 

বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াইয়ের পাশাপাশি যাবতীয় সা¤প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, কূপমণ্ডুকতা এবং দেশীয় সামন্তবাদী শোষণের বিরুদ্ধেও তিনি নির্ভীকচিত্তে কলম ধরেছেন। জেল-জুলুম, নির্যাতন-নিপীড়ন তাঁকে দমাতে পারেনি। মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার পক্ষে, মানবতার মুক্তির পক্ষে তিনি আজীবন ছিলেন নিরাপোস। ভারত থেকে বৃটিশ উপনিবেশিক শাসক-শোষকদের বিতাড়ন এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন মূল চেতনার প্রতীক। এখনও সমগ্র দুনিয়ার মুক্তিকামী মানুষের প্রেরণার উৎস হয়ে আছেন তিনি। তাঁর গান, সাহিত্য, দর্শন বিশ্বের অধিকার-বঞ্চিত মানুষদের গাইডলাইন হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে তাঁকে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও তাঁর জীবনদর্শনকে সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হচ্ছে না। নতুন প্রজন্মের কাছেও তাঁকে উপস্থাপন করা হচ্ছে খণ্ডিতভাবে। তাঁর সৃষ্টিকর্ম সংরক্ষণ ও সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটিও হচ্ছে না যথাযথ। শুধু তাই নয় আমাদের গর্বের ধন কবি কাজী নজরুল ইসলামের কোনো প্রামাণ্য জীবনীও অদ্যাবধি রচিত হয়নি। অথচ কবির একটি আদর্শ জীবনী প্রণীত হলে সবাই জানতে পারতো, কী অনন্য সৃষ্টিশীলতা ছিল নজরুলের মাঝে। নজরুলের জীবন যেমন ক্রমবিবর্তিত তেমনি তাঁর জীবনী নির্মাণও একমাত্রিক হতে পারে না। অনুগত সৈনিক হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া নজরুল যে বিপ্লবীতে রূপান্তরিত হলেন, তা তো তাঁর অনন্য জীবনপ্রবাহেরই স্মারক। তার সংগীতে ইসলামি ও হিন্দু-ঐতিহ্যের দ্বিমুখী ধারার যে সমন্বয় তাও অনন্যসাধারণ। তাঁর সাহিত্যকর্ম-জীবনদর্শন নতুন প্রজন্মসহ সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া এবং তাঁর একটি আদর্শ জীবনী রচনা শুধু তাঁকে মূল্যায়নের জন্যই নয়, বাংলাসাহিত্যের পূর্ণ পরিচয় উদঘাটনের জন্যও জরুরি।

 

বাংলা সাহিত্যাকাশে কবি নজরুলের আবির্ভাব ছিল কালবৈশাখী ঝড়ের মতোন। তিনি সকল অন্যায়, অনিয়ম, শোষণ, বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়েছেন আজীবন। চেয়েছেন একটি শোষণমুক্ত সাম্যপূর্ণ সমাজ। চেয়েছেন সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সহাবস্থানময় প্রীতিপূর্ণ সমাজ গড়তে, যে সমাজের নেতৃত্বে থাকবে মানবিক গুণাবলীতে পরিপূর্ণ দরিদ্রজনেরা এবং দলিত-মথিত জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষাকারী মানুষগুলো। এই বিষয়ে তিনি ভারতজুড়ে একটি আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন।

 

তাঁর বিদ্রোহী কবিতা প্রকাশের পরপরই ভারতজুড়ে উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে জনমনের বিদ্রোহী চেতনা অগ্নিস্ফূলিঙ্গ হয়ে প্রকাশ পেলে তাঁকে কারারুদ্ধ করার পাঁয়তারা চলে এবং বিদ্রোহী কবিতাটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কোনোকিছুই তাঁকে দমন করতে পারেনি। বরং সাহিত্যের মাধ্যমে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে তাঁর আহ্বান এবং সাম্যবাদী সমাজ বিনির্মাণের ডাক ভারতের সীমা ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। স্বাধীনতাকামী মানুষ সেদিন তাঁকে বরণ করে নিয়েছিলেন নবযুগ প্রবর্তক কবি হিসেবে।

 

কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বস্তুত বাংলার জাতীয় সত্তার জাগরণের মূর্তপ্রতীক। তাঁর কবিতা-গানে-প্রবন্ধে-নাটকে-উপন্যাসে স্বদেশ ও সমাজ বিষয়ে যতটুকু দরদ উচ্চারিত হয়েছে বাংলাসাহিত্যে নজরুলের আগে শোষিত, নিষ্পেষিত শ্রমজীবী মানুষের কথা এতো দরদ দিয়ে আর কেউ বলেন নি। নজরুলের আগে এতখানি সর্বভারতীয় ও স্বদেশীয় কবি বাংলাসাহিত্যে আর কেউ আসেনি। নজরুল-সাহিত্যের একটি বড় দিক বিদ্রোহ, শোষক ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। নজরুলের এই সামাজিকতাবোধ ও বিদ্রোহ দেশ-কালের গণ্ডি অতিক্রম করে আন্তর্জাতিকতায় পর্যবসিত হয়েছে। তাঁর বিদ্রোহে ও বিশ্বাসে কোনো গোঁড়ামি-কুসংস্কার স্পর্শ করতে পারেনি। জননী ও জন্মভূমির মুক্তিপ্রত্যাশী নজরুল বলেন, ‘ভারতবর্ষের এক পরমাণু অংশও বিদেশীর অধীনে থাকবে না। ভারতবর্ষের সম্পূর্ণ দায়িত্ব, সম্পূর্ণ স্বাধীনতারক্ষা, শাসনভার, সমস্ত থাকবে ভারতের হাতে। তাতে কোনো বিদেশীর মোড়লী করবার অধিকারটুকু পর্যন্ত থাকবে না। যাঁরা এখন রাজা বা শাসক হয়ে এ দেশে মোড়লী করে দেশকে শ্মশানভূমিতে পরিণত করছেন, তাঁদের পাততাড়ি গুটিয়ে, বোঁচকা-পুটলি বেঁধে সাগর পাড়ে পাড়ি দিতে হবে।’

 

নজরুল তাঁর বিদ্রোহী কণ্ঠের জন্যে ব্রিটিশ শাসক কর্তৃক কারারুদ্ধ হয়েছিলেন। বন্দীদশা থেকেই লিখেছিলেন ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ প্রবন্ধটি। প্রবন্ধে নজরুলের জীবনবোধ, কাব্যপ্রেরণা এবং স্বদেশ ও সমাজবিষয়ক চিন্তন প্রতিফলিত হয়েছে। তা ‘বিদ্রোহী’, ‘ধুমকেতু’ এবং ‘আনন্দময়ীর আগমন’র পথ অতিক্রম করে স্বদেশ-সমাজ ও বিশ্বনাগরিক নজরুলের কীর্তিকেই তুলে ধরে। ধুমকেতুর বিদ্রোহ সর্বকালের এবং ‘আনন্দময়ীর আগমন’ বাঙালির অস্তিত্বনির্ভর কবিতা হিসেবে। সে সময়ের সামাজিক, রাজনৈতিক মুক্তিসংগ্রামের আবেগ নজরুলের কাব্যে, প্রবন্ধে, উপন্যাসে, অভিভাষণে যতটা ধরা পড়েছে, বাংলাভাষার অন্য লেখকের রচনায় ততটা ধরা পড়েনি।

 

নজরুল একদিকে যেমন বিদ্রোহী, অন্যদিকে তেমনি মানবিক ও আধুনিক কবি। তাঁর বিদ্রোহ ছিল যাবতীয় অন্যায় অত্যাচার আর নিপীড়ণের বিরুদ্ধে। তিনি নিজেই বলেছেন,

‘যেথায় মিথ্যা ভণ্ডামী ভাই,
করব সেথায় বিদ্রোহ!
ধামাধরা, জমাধরা,
মরণ ভীতু চুপ রহ!’

 

তিনি ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় বলেছেন, উৎপীড়িতের দুঃখ-দুর্দশা না ঘোচা পর্যন্ত সব কিছুকেই অস্বীকার এবং অতিক্রম করে যাবেন। তিনি ‘সাম্যবাদী’ এবং ‘সর্বহারা’ কাব্যগ্রন্থে মানুষের সবরকম বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। যার কারণে তিনি ‘অধিকার আদায়ের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর’ হিসেবে সর্বসাধারণের কাছে পরিচিতি লাভ করেছেন। তাঁর কবিতা উপনিবেশিক ভারতের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও তা ছিল বিশ্বের সিংহভাগ মানুষের কণ্ঠস্বর। নজরুলের বিষয় ছিল তৎকালীন বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের প্রাণের দাবি। একথা চিরন্তন সত্য যে, দুনিয়ার কোনো জাতির জীবনে উপনিবেশিক শাসন কাম্য নয়। কমবেশি সব জাতি-রাষ্ট্রকেই উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয়েছে, লড়তে হয়েছে এবং হচ্ছে। আর, সেখানেই নজরুল প্রাসঙ্গিক। অনাচার বৈষম্যের বিরুদ্ধেই ছিল নজরুল-অভিযাত্রা। দুঃস্থ মানুষের পক্ষে সংগ্রামশীলতা তাঁর লেখার প্রতিপাদ্য। তিনি শুধু ভারতের শোষিত শ্রেণি নয়, সমগ্র বিশ্বের শোষিত শ্রেণির পক্ষে কথা বলেছেন। তিনি যখন ‘অন্তর ন্যাশনাল সঙ্গীত’ রচনা করেন তখন তা আর কোনো ভূখণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। তখন আমেরিকার আশ্রয়হীন মানুষ থেকে শুরু করে বিশ্বের অপর প্রান্তের কালো মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম পর্যন্ত তা প্রলম্বিত হয়ে পড়ে। বেজে ওঠে বেঞ্জামিন মোলায়েসের কণ্ঠ আর জর্জ হ্যারিসনের কনসার্টের সুর। নজরুল তখন জগতের অনশন, বন্দী, লাঞ্ছিত ও ভাগ্যাহতদের হাতিয়ারে পরিণত হন।

 

বিশ্বের দেশে দেশে শোষিত, নির্যাতিত মানুষের মধ্যে শোষণ-নিপীড়ন-বঞ্চনা আর পরাধীনতার বিরুদ্ধে আত্মজাগরণ এবং অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার অনুপ্রেরণা হলেন কবি নজরুল। এটিই হচ্ছে বিশ্বময় নজরুল ইসলামের সবচেয়ে বড় কীর্তি ও পরিচয়। একজন কবি হিসেবে, জীবনবাদী প্রবক্তা হিসেবে, যুগের কর্ণধার হিসেবে তাঁর শ্রেষ্ঠ চিন্তা-ভাবনাসমূহকে তিনি মানবিকতার অজস্র পথে প্রবাহিত করেছিলেন। আর্থ-সামাজিক মুক্তি, রাজনৈতিক মুক্তি, চেতনার জড়ত্বের মুক্তি, আবার জীবনবাদী সুস্থ মানবিকতার উত্তরণ, মানবিকতার স্থানিক ও আন্তর্জাতিক দিগন্ত প্রসারণ, জাতিভেদ ও বর্ণের বিলোপ সাধন করে মহামানবিকতার স্থানিক ও আন্তর্জাতিক দিগন্ত প্রসারণ, জাতিভেদ ও বর্ণের বিলোপ সাধন করে মহামানবিকতার সঙ্গে সকলকে সশ্রদ্ধ আবাহন, সবই নজরুলের মানবিকতার বৈশিষ্ট্য।

 

বস্তুত বহুমুখী প্রতিভা এবং অনন্যসাধারণ সৃজনক্ষমতার অধিকারী কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, উপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার ও অতি উঁচু মাপের গীতিকার। বাংলা সঙ্গীতের জগতে সম্পূর্ণ নিজস্ব ধারায় প্রায় পাঁচ হাজার সঙ্গীত রচনা করে তিনি সুরসাধনার যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, এক কথায় তা অতুলনীয়। গান রচনা ও সুরারোপের ক্ষেত্রে শুধু সংখ্যার বিচারে নয়, বাণী ও সুরের দিক থেকেও এমন বৈচিত্র্যময় গান আর কারো পক্ষে রচনা ও সুরারোপ করা সম্ভব হয়নি বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। তিনি বাংলাভাষার গান রচনাকালে যেমন বেদ-পুরাণ ব্যবহার করেছেন, তেমনি আরবি-ফারসিসাহিত্য থেকে সুন্দর সুন্দর শব্দ চয়ন করেছেন। জন-আকাক্সিক্ষত গান রচনা ও সুরারোপ করে জনমনে সাড়া জাগানোর ক্ষেত্রে তাঁর তুলনা মেলা ভার। আর, আশ্চর্যজনকভাবে তাঁর সাহিত্য, তাঁর সংবাদপত্র পরিচালনা, তাঁর চলচ্চিত্র, ন্যূনপক্ষে ১৮টি বাংলা ও হিন্দি ছায়াছবির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ, বাংলা নাটক রচনা এবং অন্যের নাটকে গীত রচনা ও সুরারোপ- এসব কিছুই তিনি করেছেন মাত্র ২২ বছর (১৯২০-১৯৪২) সময়কালের মধ্যে। বাদবাকি দীর্ঘদিন কেটে গেছে অসুস্থতার নির্বাক যন্ত্রণায়। তাঁর বিরল প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘বসন্ত’ গীতিনাট্যটি নজরুলকে উৎসর্গ করেছিলেন। এর আগে নজরুল সম্পাদিত পত্রিকার জন্যে যে আশীর্বাণী দিয়েছিলেন, তাতেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন-

‘আয় চলে, আয় রে ধূমকেতু,
আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু,
দুুর্দিনের এই দুর্গ শিরে
উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন
অলক্ষণের তিলক রেখা
রাতের ভালে হোক না লেখা
জাগিয়ে দেবে চমক মেরে।
আছে যারা অর্দ্ধচেতন।’

 

নজরুলের আবির্ভাবের পটভূমি তুলে ধরতে গিয়ে বাংলাভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জীবনানন্দ দাস বলেছেন, ‘বাংলার এ মাটির থেকে জেগে, এ মৃত্তিকাকে সত্যিই ভালোবেসে, (আবির্ভূত হয়েছিলেন) আমাদের দেশে ঊনিশ শতকের ইতিহাসপ্রান্তিক শেষ নিঃসংশয়বাদী কবি নজরুল ইসলাম।’

 

বিশ্বের নানা দেশের বিদগ্ধ গবেষকগণ একবাক্যে স্বীকার করেছেন নজরুলের রচনা-সম্ভার, ভাষা, ছন্দ, ব্যঞ্জনা প্রকাশধর্মীতা, আবেগ, অলঙ্কার সবকিছু মিলিয়ে এক অনবদ্য অনুপম সৃষ্টি। তাঁর রচনা তেজস্বী, বেগবান, দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী। ‘বিদ্রোহী’ কবিতার মধ্য দিয়ে তিনি সকল প্রকার অন্যায়-অবিচারের প্রতি যে প্রচণ্ড ভ্রুকুটি হেনেছেন তার কোনো তুলনা বিশ্ব-সাহিত্যের ইতিহাসে নেই। আর এখানেই নজরুল অভিনব, অনবদ্য এবং একক।

 

ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্যে সমভাবে কাজি নজরুল ইসলাম তাঁর সৃজনশীল প্রতিভা উজাড় করে দিয়ে গেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে নজরুলচর্চা আজো সার্বিক ও সার্বত্রিক হতে পারেনি। এটা আমাদের সংকীর্ণতা ও সীমাবদ্ধতা বলতে হবে। কালের প্রয়োজনে এ সীমাবদ্ধতার দেয়াল ভাঙতে হবে আমাদের। কারণ, নজরুল আমাদের চিরকালীন প্রেরণার উৎস। তাঁর সৃষ্টিকর্ম আমাদের অমূল্য সম্পদ। তাই, যথাযথ মর্যাদায় তাঁকে জাতির সামনে উপস্থাপনে বলিষ্ঠ সরকারি পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। নজরুলের রচনাকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্যে বাংলাদেশ সরকারকে ইউনেস্কোর কাছে যথাযথভাবে উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশ্বের পণ্ডিতজনরা। সরকারের উচিত পণ্ডিতজনদের এ যুক্তিপূর্ণ দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া। একইসঙ্গে বিভিন্ন ভাষায় নজরুল-রচনা সম্ভারের অনুবাদ করে তাঁর দর্শন বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের কাছে নজরুলের বার্তা পৌঁছে দেয়ার জোরালো কর্মসূচিও থাকা উচিত।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট