চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

বাংলাদেশ ২.০ : রাষ্ট্র মেরামতে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা

ইমরান বিন ইউনুস

২১ আগস্ট, ২০২৪ | ১১:০৯ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষার্থীদের একটা রক্তাক্ত সফল অভ্যুত্থানের ফলাফল আজকের মুক্ত বাংলাদেশ। বাংরাদেশ ভার্ষন ২। স্বাধীনতার পর বেহাত হওয়া সুযোগ আবার দুয়ারে নাড়া দিচ্ছে যেমনটি আমরা চাই, তেমন দেশ গড়ার। শিক্ষার্থীরা অদম্য সাহসে বুকের রক্ত দিয়েছে। এতে দেশ নতুন এক সম্ভাবনায় প্রান্তে এসেছে। অনেক আশার আলো নিয়ে। জনকল্যাণময় জীবনের হাতছানিতে ভরপুর হয়ে। সব অন্যায় অবিচার মুক্ত সাম্য মৈত্রির বিকাশে।

 

কতগুলি মারাত্মক সমস্যা দেশের পরতে পরতে অনুপ্রবেশ করে জমাট বদ্ধতায় মন ও মানসিকতাকে পুরো পরিবর্তন করে দিয়েছে। বিশেষ করে জননীতিধারী, প্রশাসন ও সরকারী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িতদের। তবে আশার আলো হলো, এই অভ্যুত্থানের সূচনাকারী ও সফলতার প্রান্তে যারা নিয়ে গেছে তারা সবাই কলুষিত হয়নি। এরা সবাই তরুণ এবং মানুষের ও দেশ-জাতির কল্যাণে উজ্জিবীত। এরা শিক্ষার্থী। জাতির আগামী। এদের কাজে লাগাতে হবে।

 

ইতিহাসের পাতায় এ ধরণের গণঅভ্যুত্থান বা বিপ্লবের উদাহরণ অনেক আছে। আবার বেহাতও হয়েছে। যেমন ফরাসী ও রুশ বিপ্লব। যথাযথভাবে বিপ্লব উত্তর অবস্থায় জনগণকে কাজে লাগাতে না পারায় পার হওয়া শতাব্দীর সত্তর দশক পর্যন্ত ফ্রান্সে স্থিতিশীলতা ছিল না, যদিও জনগণ সবদিকে মুক্ত ছিল। অন্যদিকে বাশিয়ায় জনগণকে যথাযথ অনুক্রম অনুযায়ী কাজে লাগিয়ে ছিল, যা জনকল্যাণে নিয়োজিত হয়। এতে সবচেয়ে বেশী লাগানো হয়েছিল তরুণদের। তরুণদের কম্যুনিস্ট পার্টিব স্বেচ্ছাসেবী সদস্য করে নেয়া হয়েছিল। তাদের বলা হত কসমোসল। তাদের মূল কাজ ছিল সরকারী-বেসরকারী সর্বক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ, পরীবিক্ষণ, ফেসিলিটেটর ও নিয়ন্ত্রণ করা। প্রতিটি সরকারী ও বেসরকারী দফতরে তাদের নিয়োগ দেয়া হতো। তাদের পদবী ছিল কমিশার। কাজ ছিল প্রতিষ্ঠান পার্টির নিয়ম রীতি নীতি ও আইনানুযায়ী চলছে কিনা।

 

উন্নত দেশগুলিতে ‘ও’ লেভেলে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তাদের ভবিষ্যতের কর্মপ্রত্যাশা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা কাজে স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে সংযুক্ত করা হয়। হাসপাতাল, এমবুলেন্স, পুলিশ পোস্ট, ব্যবসায়, অফিস, হোটেল, মল ও অন্যান্য অনেক কিছুতে। আবার প্রতিরক্ষা কাজেও। এতে তারা বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করে ও ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনা আগেভাগে ঠিক করতে পারে।

 

আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সুযোগসন্ধান, আইনভঙ্গ, পাশকাটানো এবং আরো কিছু। এখানে সবকিছুই মারাত্মকভাবে জটিল জঞ্জাল হয়ে আছে। সোজা-সরলভাবে কোন কাজই হয় না। সেটা রাস্তায় গাড়ী চলাচল থেকে সরকারী যেকোন সেবা বা আইন প্রয়োগকারী বা প্রশাসনিক ব্যবস্থায় হোক। আর্থিক লেনদেনের ব্যাপার হলে তো কথাই নেই।

 

এই অবস্থায় আমাদের শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার পাশাপাশি অনেক কাজে লাগানো যেতে পারে। তারা এখনও কলুষিত হয়নি। এ ক’দিনের অরক্ষিত সময়গুলিতে কম্যুনিটি আর জনপদকে সংরক্ষণ ও পরিমার্জন করে তারা এখন পর্যন্ত তাদের অনমনীয়তা ও নিষ্কলুষতা প্রমাণ করে যাচ্ছে। নিজের সময়, অর্থ, শ্রম ও মেধা উপছে দিয়েছে দেশ ও জাতির জন্য। তাদের এই সংশ্লিষ্টতা আনুষ্ঠানিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। এতে কয়েকটি সুফল পাওয়া যাবে। নির্ভেজাল পরীবিক্ষণ, স্বেচ্ছাসেবা, প্রশিক্ষণ ও মানসিকতার পরিবর্তন। তাছাড়া বাস্তবজীবনের অভিজ্ঞতা হবে। পেশা, ব্যবসা, নির্বাহী ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের। যা থেকে আগামী জীবনের লক্ষ্য ঠিক করতে পারবে তারা ।

 

শিক্ষার্থীদের কাজে লাগানোর ক্ষেত্রসমূহ : ১) বিচারকাজে জুরি; ২) প্রতি সরকারী অফিসে পর্যবেক্ষক; ৩) রাস্তায় চলাচল নিয়ন্ত্রক; ৪) সেবাপ্রদানকারী কেন্দ্রে পর্যবেক্ষক; ৫) ব্যবসায় পরীবিক্ষণ ইত্যাদি। এবং এসব কাজের জন্য তাদের ভাতা ও সার্টিফিকেট দেয়া যায়। শিক্ষার্থীদের কাজগুলোকে নথীভুক্ত করা ও গবেষণায় উপকরণ করা যায়। একাডেমিক ও অপারেশনাল। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো সংযুক্ত হতে পারে। এত অনেক কিছু উন্মোচিত হবে। তা আগামীর জন্য পুনরভিযোজন হবে।

 

আরেকটা কাজ করা যায়, যার দারুণ সুদূরপ্রসারী প্রভাব আছে। সেটা হলো উচ্চমাধ্যমিকের পর একবছরের জন্য বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া। এর ফলে আগামীদিনের ওরা সুশৃঙ্খল সুনাগরিক হবে। দেশের প্রতিরক্ষার সম্পূরক বাহিনী হবে। সিংগাপুর এভাবেই পৃথিবীর সবচেয়ে সুনাগরিকের দেশে পরিণত হয়েছে। এবং সৃদৃঢ় প্রতিরক্ষা বাহিনী সহ।

 

শিক্ষার্থীদের দেশ ও জাতির মূলধারার সাথে জুড়ানোব কর্মযজ্ঞ সুচারুভাবে করতে গেলে কিছু বাড়ীর কাজ করতে হবে। ১) জাতীয় নীতি, ২) কৌশল কাঠামো, ৩) কর্মপদ্ধতি, ৪) পর্যবেক্ষণ ও পরীবিক্ষণ, ৫) সূচক নির্ধারণ, ৬) প্রায়োগিক গবেষণা, ৭) পরিমার্জন ও ৮) কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ ও গঠন। একটি জাতীয় কমিশনকে এই কাজের দায়িত্ব দিতে হবে, যা সুশীলসমাজ মতবিনিময়ের মাধ্যমে নির্দেশনা রোডম্যাপ ঠিক করে দেবে। এভাবেই শিক্ষার্থীগণ রাষ্ট্র মেরামতে তাদের ভূমিকা রাখতে পারবে সব সময়ের জন্য ও সমান্তরালে নিজকেও গঠন করতে পারবে। সুশিক্ষিত দক্ষজনপোষ্ঠির চেয়ে বড় সম্পদ একটা দেশের আর নেই।

 

অধ্যাপক ইমরান বিন ইউনুস বিশেষজ্ঞ, মেডিসিন ও কিডনী রোগ; গবেষক; প্রাক্তন অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ; খন্ডকালিন অধ্যাপক জনস্বাস্থ্য, চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট