প্রবোধিত আত্নপ্রত্যয় ও আত্মমর্যাদায় বাঙালি জাতি-রাষ্ট্রের অবস্থানকে বিশ্বপরিমন্ডলে সুমহান সমাসীন করার লক্ষ্যে এবং জাতির জনকের নিরন্তর লালিত স্বপ্নকে পরিপূর্ণতাদানে অবিচল আস্থার ঠিকানায় ইতোমধ্যেই নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনা। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় ‘আমি নইলে মিথ্যা হত সন্ধ্যাতারা ওঠা, মিথ্যা হত কাননে ফুল ফোটা’- কবিতার এই অনবদ্য রচনায় প্রস্ফুটিত হয়েছে যেন জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যয়ী বৈশিষ্ট্য। ৭৩তম জন্মদিনের এই মাসেই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানের পূর্বেই অসীম সাহসীকতায় সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতার স্বীয় ও রাষ্ট্রের ঈর্ষণীয় খ্যাতিকে সুদৃঢ় করার এবং তাঁর উপর জনগণের প্রত্যাশিত আস্থা ও বিশ্বাস অটুট রাখার স্বার্থেই কঠিন কিছু সিদ্ধান্ত ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।
নেত্রীর অসাধারণ এক সম্মোহিনী ব্যক্তিত্বের নবতর প্রকাশ দেশের জনগণ শ্রদ্ধাভরে অবলোকন এবং ভালবাসা-কৃতজ্ঞতায় অবনত চিত্তে জন্মদিনের এই মাসটিকে অপরূপ আনন্দে উপভোগ করছেন। নিষিদ্ধ বিনোদন, মাদক, সন্ত্রাস, দুর্নীতি এবং অপরাজনীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে আপন ঘর থেকেই অভিনব অভিযাত্রা শুরু করেছেন। দেশের সকল সচেতন ও সাধারণ মানুষের অকুন্ঠ সমর্থন ও আকাশচুম্বী প্রশংসায় নেত্রী নতুন করে অভিষিক্ত হয়েছেন। সম্ভাষিত নতুন পালক যেন অবিনাশী মুকুটে সুসজ্জিত করেছেন শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বনন্দিত ও বরেণ্য সফল এই রাষ্ট্রনায়ককে। জাতি শুধু বুক ভরে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে না, টেকসই স্থিতিশীল উন্নয়ন সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে বিশুদ্ধ অনুপ্রেরণা ও প্রনোদনায় স্পন্দিত হয়েছে। সবার মুখে একই স্তুুতি- জয় হোক বাংলার, জয় হোক বঙ্গবন্ধুর, জয় হোক বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার।
আমরা জানি; ধরিত্রির কল্যাণকর সবকিছুই মানুষের জন্যই। মহান ¯্রষ্টার অপরিসীম কৃপায় বৈশ্বিক সকল প্রপঞ্চ এবং মানবভাবনা এই বিশ্বকে করেছে অর্থবহ জীবন-যাপনের উর্বর প্রদীপ্ত ক্ষেত্র। কখনো বেদনা, যন্ত্রণা-শোষণ-বঞ্চনা অথবা হাসি-কান্নার সরব বা নীরব বহিঃপ্রকাশ সভ্যতার আদি থেকে অদ্যাবদি জীবনপ্রবাহকে করেছে নানা মাত্রিকতায় প্রতিবাদী, দ্রোহী, মননশীল, নান্দনিক ও সৃৃজনশীল। বস্তুতঃপক্ষে মানুষের ধীশক্তির বিকাশ ও বিস্তার প্রসারমানতা অগ্রসরমান হয় নিজস্ব চিন্তা-চেতনার ইতিবাচক সুস্থ প্রবাহে। এর পিছনে থাকে ঐতিহ্য-কৃষ্টি-পরিবার এবং সর্বোপরি কার্যকর ক্রিয়াশীল সামাজিকীকরণের পরিক্রমা। বিশ্ব ইতিহাসের মহান নায়ক আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনা যেন সেই অবিনস্বর কীর্তিগাঁথার অবিনাশী শাণিত চেতনার মনসব বাতিঘর।
বিগত বেশ কয়েকটি বছর দেশরত্ন শেখ হাসিনার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জ্ঞাপনে ‘কাশফুল কন্যার জন্য প্রার্থনা’ এবং নানাবিধ শিরোনামে আমার বহু নিবন্ধ জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় গুরুত্বসহকারে প্রকাশ পেয়েছে। মনোরম প্রকৃতি পরিক্রমায় অসাধারণ সৌন্দর্যমন্ডিত বাংলার ঋতুসমূহের শ্রেষ্ঠতম হচ্ছে শরৎকাল। এই শরৎ ঋতুর শুভ্রতা-সৌম্যতা-পবিত্রতা, শিউলীমাখা অনন্য সুন্দর কাশফুলের সৌরভে অত্যুজ্জ্বল প্রতীক হয়ে যাঁর জন্ম, এই শুভ জন্মদিনে বিশ্ব বিধাতার দরবারে প্রতিবারের মতই আজকের দিনেও তাঁর সুস্বাস্থ্য ওসর্বাঙ্গীন মঙ্গল প্রার্থনা করছি।
২০১৯ সালে জন্মদিনের শুভক্ষণে বাঙালি জাতির জন্য আবারো বেশকিছু আন্তর্জাতিক শিরোপা অর্জন শুধু নেত্রীর জন্মদিনকে মহিমান্বিত করেনি, দেশবাসীকে তা উৎসর্গ করে তিনি নতুন করে আধুনিক বাংলার শ্রেষ্ঠ মনীষার দৃষ্টান্তই স্থাপন করলেন। অতি সম্প্রতি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ‘ভ্যাকসিন হিরো’ (বিশ্ব টিকা শিরোপা) এবং ‘তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে সাফল্য-শিরোপা’ (চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেপেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ) অর্জন বিশ্বের এই সফল রাষ্ট্রনায়কের মর্যাদাকে করেছে অধিকতর উচ্চতর মাত্রিকতায় অত্যুজ্জল। আমাদের সকলের জানা যে, সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ বিশ্বখ্যাত হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ অর্জনে নেত্রী অতিসম্প্রতি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জাতি-রাষ্ট্রের পক্ষে তাঁর দৃঢ় অঙ্গিকার ব্যক্ত করেছেন।
বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে যুক্ত করা হয়েছে মানবসম্পদ উন্নয়ন। শিক্ষা-প্রশিক্ষণ-প্রযুক্তি-নারী শিশুসহ সকলের স্বাস্থ্য সুরক্ষা-পরিবার ও সমাজকল্যাণ-কর্মসংস্থান-সংস্কৃতি ও ক্রীড়া উন্নয়নসহ সকল আর্থ-সামাজিক খাতে বাজেট বরাদ্দের পাশাপাশি মহিলা উন্নয়ন এবং ক্ষমতায়ন গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় আনা হয়েছে। ১৯৯১ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মহিলা শিক্ষক নিয়োগের হার ছিল ২১.০৯ শতাংশ যা ২০১৮ সালে ৬৪.১৮ শাতাংশে উন্নীত হয়েছে। মা ও শিশু স্বাস্থ্য, পুষ্টি, প্রসূতি সেবা ইত্যাদির ক্ষেত্রে অনন্য সাধারণ উন্নয়নের জন্য জাতিসংঘ প্রদত্ত দুবার ‘সাউথ সাউথ এ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেছে। স্বাস্থ্যসুরক্ষার প্রতিটি সূচক তথা স্থুল জন্মহার (প্রতি হাজারে),স্থুল মৃত্যুহার (প্রতি হাজারে), বিবাহের গড় বয়স, প্রত্যাশিত গড় আয়ুকাল (বছরে), শিশু মৃত্যুহার ( নবজাতক, এক বছরের নিচে, প্রতি হাজারে), শিশু মৃত্যুহার (৫ বছরের নি¤েœ, প্রতি হাজারে), মাতৃমৃত্যু অনুপাত (প্রতি হাজার জীবিত জন্ম শিশু), গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার (%), উর্বরতার হার (মহিলা প্রতি) ইত্যাদির চিত্র মানবসম্পদ উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত ইতিবাচক।
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) ১০টি রোগ বিশেষ করে ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, ধনুষ্টংকার, পোলিও, হাম, যক্ষা, হেপাটাইটিস-বি, হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি, নিউমোকক্কল নিউমোনিয়া ও রুবেলা প্রতিরোধে যুগান্তকারী এবং দৃশ্যমান অর্জন বিশ্বে প্রশংসিত। টিকা গ্রহণকারী শিশুদের হার প্রায় ৮৫ – ৯০ শতাংশ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে এই কর্মসূচির সফলতার জন্য বাংলাদেশকে ২০১৪ সালে পোলিওমুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা এখনও বজায় রয়েছে। ইপিআই কর্মসূচির আওতায় সকল ধরণের টিকা প্রাপ্তির হার ২০১৮ পর্যন্ত ৯৭.৬। দেশের চলমান পুষ্টি কর্মসূচি এবং অপুষ্টির ঘাটতি ও নিরাময় কৌশল প্রণয়ন স্বাস্থ্য খাতকে করেছে অধিকতর সমৃদ্ধ।
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে ‘সকলের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুনগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টির’ পদক্ষেপ গ্রহণ যুগোপযোগী। তরুণদের কর্মক্ষমতা ও দক্ষ মানবসম্পদ রূপান্তরে উৎকর্ষতা বৃদ্ধিতে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসারে সরকারের সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ যুবশক্তিকে উৎপাদনশীল ও দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে – নিঃসন্দেহে তা বলা যায়। এই ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি এবং ২০১৮ সালে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ১৫.১২ শতাংশ অতীব উৎসাহব্যঞ্জক। কারিগরি শিক্ষাবোর্ড অনুমোদিত ১১৯টি সরকারি এবং ৮৭৩৩টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
দেশপ্রেম, মাটি ও মানুষের প্রতি গভীর মমত্ববোধ, ধর্ম-বর্ণ-দলমত নির্বিশেষে বিশ্বমানবতার জয়গানে উদ্বেলিত প্রাণস্পন্দন সঞ্চারনে মহিয়সী নেত্রীর অপরিসীম মর্যাদায় বিশ্বপরিমন্ডলে সমাদৃত আমাদের দেশ-জাতি ও দেশবাসী। বিশ্বব্যাপী সকল বাঙালির কণ্ঠে আজ নতুন করে ধ্বনিত হচ্ছে কবি সুকান্তের সেই অমিয় কবিতা-বার্তা – ‘সাবাস বাংলাদেশ এই পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়, জ্বলে পুড়ে মরে ছারকার তবু মাথা নোয়াবার নয়’। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতার মন্ত্রে শোভিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর করে দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম ত্যাগ তিতিক্ষার অপূরণীয় বিসর্জনে এর সার্থক রূপায়নে উপহার দেন আজকের এই প্রিয় মাতৃভূমি।
এই মহান নেতাই সেই সর্বপ্রথম বাঙালি যিনি বিশ্ব দরবারে তথা জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়ে মাতৃভাষাকে করেছেন বিশ্বজনিন ও নন্দিত। দ্বিতীয়বার আবারো একই জায়গায় মাতৃভাষায় ভাষণ দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে জাতিকে করেছেন সুমহান মর্যদায় সমাসীন। এমন প্রজ্ঞা, মেধা, সততা, দক্ষতা, মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িকতা, বিশ্বনেতৃত্বে গৌরবদীপ্ত হওয়ার উদাহরণ আধুনিক সভ্যতার ইতিহাসে খুবই বিরল। সর্বগুনে গুনান্বিত এই নেতৃত্বের সাম্প্রতিক অর্জন ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’। বাংলাদেশ এবং এশিয়া ও এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তাঁর নেতৃত্বে নারী শিক্ষা ও নারী উদ্যোক্তার বিকাশমানতার জন্য এই মর্যাদাপূর্ণ পুরষ্কার।
ইতোমধ্যেই প্রায় মধ্যম আয়ের দেশ এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের মহাসড়কে বাংলাদেশের পদার্পণ বিশ্বস্বীকৃত। ২০৪১ সালে উন্নত বিশ্বের সমমানে দেশকে উন্নীত করার কৌশলপত্র বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কর্মযজ্ঞ সম্পাদনে অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতির বাংলাদেশকে উন্নয়ন বিশ্বের রোলমডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার মহান কান্ডারী হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা। ১৪০০ সালকে অবগাহন করার জন্য রবীঠাকুর যেমন ১৩০০ সালে লিখেছিলেন ‘আজি হতে শত বর্ষ পরে, কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি – কৌতুহল ভরে’, একইভাবে জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন ২১০০ সালে দেশের জন্য বাস্তবসম্মত রূপকল্প উপস্থাপন এবং তার ধারাবাহিক বাস্তবায়নের রোডম্যাপ পরিচালনা করছেন তা আজ কোন স্বপ্ন নয়, সময় ও যুগের দাবীর প্রেক্ষিতে প্রজ্ঞাবান দূরদর্শীতার প্রজ্জ্বলিত পথ-নির্দেশনা।
দেশবাসী অবগত আছেন যে, এখনো অধিকাংশ ক্ষেত্রে জনধিকৃত ও নিন্দিত রাজনৈতিক সংস্কৃতির পঙ্গুত্বদানকারী পাঁচমিশালী নেতৃত্বের কুঅঙ্গীকার বাস্তবায়নের পিছনে রয়েছে একাত্তরের পরাজিত শক্তি, অন্ধকার ও সাম্প্রদায়িকতার ধর্মান্ধ কুৎসিতগোষ্ঠী, জাতির জনকের আত্নস্বীকৃত হত্যাকারী ও আদর্শের সাথে বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারক বাহিনী, অনৈতিকভাবে ক্ষমতা দখল, দুর্নীতির অভয়ারন্যে দেশকে পরিণত করে নতুন জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ বিপথগামীদের নিয়ে উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারাবাহিকতাকে রুদ্ধ করার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গভীর ষড়যন্ত্র।
আজ দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নসহ সকল ক্ষেত্রে প্রাগ্রসরতা ন্যূনতম বিবেকপ্রসূত ব্যক্তির কাছে গুরুত্ব পেয়েছে। জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা তথা ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত মানবিক ও অসাম্পদায়িক সমাজ প্রতিষ্ঠার সফল বাস্তবায়নের কর্মযজ্ঞ যে অব্যাহত এবং অদম্য পন্থায় এগোচ্ছে তার ধারাবাহিকতা একান্ত প্রয়োজন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের প্রায় পাঁচ কোটি ছিয়াত্তর লক্ষ তথা দেশের ৩২ শতাংশ জনগোষ্ঠীর অমিত সম্ভাবনাকে ফলপ্রসূ ও কার্যকর করার জন্য আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত যুগোপযোগী শিক্ষা কার্যক্রম, তথ্য-প্রযুক্তি, কারিগরী দক্ষতায় উৎকর্ষতা অর্জন এবং যথোপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা অবশ্যই সরকারের পক্ষ থেকে বাস্তবায়নের দাবী রাখে।
এটি সর্বজনবিদিত যে, সকল ধর্মের মর্মবাণী হচ্ছে মানুষের সাথে মানুষের নিগৃঢ় সৌহার্দ-সম্প্রীতি-ভালবাসার বন্ধনকে অটুট রাখা এবং ¯্রষ্টার একই শিক্ষায় সকলকে দীক্ষিত করা। কবির ভাষায় (সাবির আহমেদ চৌধুরী:¯্রষ্টারভাবনা) এর মূলে ছিল ‘জীবন তোমার দাও বিলিয়ে ফুলের মতো উজাড় করে, দুখীর দুঃখ দূর করিতে সদাই যেন অশ্রু ঝরে।’ অথবা ‘আমরা দেশের শ্রমিক চাষী ফসল ফলাই গোলা ভরি, সব মানুষের আহার জোগাই নিজেই কেবল ক্ষুধায় মরি।’ এই বাস্তব সত্যটুকু নিরলস অনুধাবন করে বঙ্গবন্ধুর মতই ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ তথা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধুর মত বজ্রকঠিন ব্রত নিয়ে গভীর মমত্ববোধে ভরা বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জোরালো অঙ্গীকার বঙ্গবন্ধুর কন্যার চোখে এবং কর্মে অবিরাম অবলোকন করে চলেছি। এই কন্যার জন্মে লুকিয়ে আছে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার চিন্তা-চেতনার যথার্থ সার্থকতা।
কবিগুরু আরো বলেছেন ‘আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরির খেলা/নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা’। দ্রোহ, প্রেম ও প্রকৃতির কবি নজরুল বলেছেন ‘এল শারদশ্রী কাশ-কুসুম-বসনা/রসলোক বাসিনী লয়ে ভাদরের নদীসম রূপের ঢেউ/মৃদু মধুহাসিনী যেনো কৃশাঙ্গী তপতী তপস্যা শেষে/সুন্দর বর পেয়ে হাসে প্রেমাবেশে।’ ৪০ দশকের কল্লোলগোষ্ঠীখ্যাত আধুনিক কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থে ‘এখানে আকাশ নীল’ কবিতায় শরতের আকাশ, দুপুরভরা রৌদ্র, ফুল ও ফলের গুঞ্জরণসহ পাখিদের ভাবভাষাও বর্ণনা করেছেন। বাংলার কবিমানস শামসুর রাহমান লিখেছেন ‘জেনেছি কাকে চাই কে এলে চোখ ফোটে/নিমেষে শরতের খুশির জ্যোতিকণা’।
শরতের শিউলি চাদরে আচ্ছাদিত অন্ধকার রাত্রি শেষে আলোকিত সকাল, শস্যপূর্ণ মাঠ, কৃষক-কিষানীর আনন্দের ফসলী গান ইত্যাদির সমন্বয়ে শরতের যে সাবলীল সত্য-সুন্দর-কল্যাণ-মঙ্গলের মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক বার্তায় প্রাণিত বাংলার মানুষ খোঁজে পায় দেশপ্রেমের নতুন ভাবনা এবং চেতনাসমৃদ্ধ উদ্ভাবনের অবগাহন। এই শরতে জন্ম নেয়া সামগ্রিক আলোকোজ্জল নয়নাভিরাম রূপবৈচিত্রের অনন্য প্রভাবে দেশরত্ন শেখ হাসিনার জন্ম এক অপরূপ দেশমাতৃকার প্রতি নিরন্তর ভালবাসার প্রতীক। এজন্যই তিনি বিশ্বনন্দিত এবং যুগ পরিবর্তনের অপরূপ আলোকবর্তিকা। আজ বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর সাথে কন্ঠ মিলিয়ে উচ্চারণ করতে পারছে বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা আমাদের প্রাণপ্রিয় ভালবাসা ও শ্রদ্ধার নির্ভরযোগ্য মনুষ্যালয়।
লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।