চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

বেকারত্ব দূরীকরণে সুচিন্তিত উদ্যোগ জরুরি

অনলাইন ডেস্ক

২২ নভেম্বর, ২০২৩ | ১০:৩১ অপরাহ্ণ

রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে দিন দিন বেকার সমস্যা বাংলাদেশে আরও ঘনীভূত হচ্ছে। বেকার সমস্যা সমাধানে নানা সময়ে সরকার নানা কর্মসূচি নিলেও কার্যত কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

 

বেকার সমস্যার কোন যৌক্তিক সমাধান না হওয়ায় দারিদ্র বিমোচনেও কাক্সিক্ষত সাফল্য আসছে না। এতে জাতীয় উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বেকারত্ব বিমোচন না হওয়ায় আজ যুবসমাজ বিপথগামী হচ্ছে। সমাজের অশুভ চক্র তাদেরকে খুব সহজেই ব্যবহার করছে সমাজবিরোধী কাজে। এতে বৃদ্ধি পাচ্ছে সন্ত্রাসসহ নানা অপরাধমূলক কাজ। কিন্তু বেকারত্বের ক্রমবর্ধমান মিছিলকে স্তব্ধ করে দেয়ার সময়োপযোগী পদক্ষেপ না নিলে আমাদের সকল অর্জন বিপন্ন হবে।

 

উল্লেখ্য, কর্মসংস্থানের অভাবই বেকারত্ব সৃষ্টির মূল কারণ। কেউ বেকার থাকতে চায় না, চায় না উপোস থাকতে। কিন্তু বাধ্য হয়েই যুবকশ্রেণির একটি বিশাল অংশকে বেকার থাকতে হচ্ছে। অথচ কর্মসংস্থানের সামান্য সুযোগ পেলেই তারা বেকারত্বের অসহনীয় যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে মরিয়া হয়ে উঠে। বাংলাদেশে দুঃসহ বেকারত্ব নিরসনে যদি কার্যকরভাবে কোন সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ থাকতো তাহলে দেশে বেকারত্বের হার অনেক কমে যেতো। কিন্তু দুঃখজনভাবে এ ব্যাপারে কোন সুচিন্তিত কর্মসূচি নেই। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নতুন নতুন কর্ম সৃষ্টির পাশাপাশি যুবগোষ্ঠীকে আত্মকর্মসস্থানে পর্যাপ্ত ঋণদান, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির মাধ্যমে সাহায্য করলে এবং বিভিন্ন শিল্প-উদ্যোক্তা ও ধনাঢ্য ব্যক্তিরা এ ব্যাপারে এগিয়ে আসলে দেশে বিদ্যমান বেকার সমস্যার সমাধান কোন কঠিন ব্যাপার নয়।

 

বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত ছেলেমেয়েরাই শুধু নয়, বৃত্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষিতদের মধ্যেও অনেকেই চাকরি পায় না আজকাল। বিভিন্ন জরীপে দেখা যায় প্রকৌশলী, ডাক্তার ইত্যাদি পেশার ছেলেমেয়েরাও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে কাঙ্ক্ষিত চাকরি পায় না। কারণ দেশে চাকরির বাজার সীমিত। ফলে, বেকারদের অনেকেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও কর্মসংস্থানের আশায় বিদেশ পাড়ি দেয়। বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী থেকে শুরু করে স্নাতক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পাস করা যুবক-যুবতীর সংখ্যা দিন দিন কেবল বাড়ছেই। এদের অনেকেই বিভিন্ন কারিগরী বিষয়ে সার্টিফিকেট ডিপ্লোমা কোর্সও করেছে। অনেকেই কম্পিউটার বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ব্যুৎপত্তি পর্যন্ত অর্জন করেছে। কিন্তু চাকরি যেন সোনার হরিণ।

 

শত চেষ্টার পরও অনেকেরই চাকরি মিলেনি। ফলে তারা চরম হতাশায় ভুগছে। অদক্ষ জনশক্তিতো বটেই দক্ষ জনশক্তিরও একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আজ বেকার। এক হিসেবে দেখা যায়, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কর্মসংস্থানের যে সুযোগ আছে তাতে দেশের মোট যুবশক্তির অর্ধেকেরও চাকরির সুযোগ হয় না। ফলে, বাধ্য হয়ে বাকীদের বেকারত্বের অভিশাপ বহন করতে হয়। আর এই শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, দক্ষ, অদক্ষ নারী-পুরুষ গ্লানিময় জীবনে অতিষ্ঠ হয়ে এক সময় বিপথগামী হয়ে পড়ে। বেছে নেয় সন্ত্রাস, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা সমাজবিরোধী কাজ। অনেকেই হতাশার সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতে হতাশায় নানা নেশাদ্রব্য সেবন করে জীবন ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু যুবশক্তির এই অবক্ষয় মেনে নেয়া যায় না। কারণ দেশের উন্নতি  ও প্রগতির  চাকাকে সামনে এগিয়ে নেয়ার গুরুদায়িত্ব পালন করে থাকে তারাই। তাই দেশের যুবসমাজকে কর্মক্ষম জনশক্তিতে রূপান্তর করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সরকারের অন্যতম প্রধান কাজ হওয়া উচিত।

 

যুগের দাবি অনুযায়ী বেকার সমস্যা সমাধানে সরকার বহুমুখী কর্মসূচি নিতে পারে। এ লক্ষ্যে প্রথমত বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টি ও যুক্তিসঙ্গতভাবে বিনিয়োগ শর্ত শিথিল করে দেশি-বিদেশি শিল্পোদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দেশি শ্রমিক নিয়োগে বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে হবে। এ জন্যে বেকার যুবকদের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। তবে দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং সাধারণ ও রাজনৈতিক চাঁদাবাজসহ সকল অশুভ শক্তির মূলোৎপাটন।

 

এ জন্যে সরকারি এবং বিরোধীদলসহ সকল রাজনৈতিক নেতাকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। তাদেরকে এই কমিটমেন্টে আসতে হবে যে, দেশের উন্নয়ন  এবং সমৃদ্ধি তথা জাতীয় স্বার্থের সংরক্ষণই তাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য। তারা এমন কোন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন না যাতে জাতীয় স্বার্থের ক্ষতি হয়। দেশে শিল্প বিকাশের পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি বিদেশে দক্ষ শ্রমিক প্রেরণের সুযোগগুলোও কাজে লাগাতে হবে। মাধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে দক্ষ বাংলাদেশি শ্রমিকের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সরকার যদি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমাদের দক্ষ জনশত্তি রফতানি করতে পারে তাহলে দেশে বেকারত্ব ক্রমশ হ্রাস পাবে।

 

তবে, বেকারত্ব পরিপূর্ণভাবে নিরসন করতে চাইলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে স্ব-কর্মসংস্থানে উৎসাহিত করতে হবে যুবসমাজকে। আর এভাবেই একটি কৌশলপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ অবারিত করে বেকারত্বের মূলোৎপাটন সম্ভব।

 

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট