
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণার শেষ মুহূর্তে এসে একের পর এক চমক দেখাচ্ছে বিএনপি; পরিবর্তন করা হয়েছে চট্টগ্রামের তিনটি আসনের দলীয় প্রার্থী। তবে এবারই প্রথম চট্টগ্রামের সবগুলো আসনে এককভাবে নির্বাচন করছে বিএনপি।
যদিও চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া-আংশিক) আসনটি জোটের শরিক এলডিপিকে ছেড়ে দেওয়ার অনেক আগে থেকে গুঞ্জন ছিল। কিন্তু শেষপর্যায়ে এসে এলডিপি এককভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিলে আসনটিতে বিএনপি এককভাকে নির্বাচন করার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তবে এখনও ওই আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি।
জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলায় ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় চমক দিয়ে তিন পরিবর্তন এনেছে বিএনপি। চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড-আকবরশাহ) আসনে আসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং, পাহাড়তলী, হালিশহর ও খুলশী) আসনে বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান, চট্টগ্রাম-১১ আসনে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি।
এর আগে গত ৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম-৪ আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে উত্তর জেলার সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের নাম ঘোষণা করেছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নির্বাচনের মাঠের চ‚ড়ান্ত লড়াইয়ে অংশ নিতে দলটির পক্ষ থেকে এবার বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টামÐলীর সদস্য মোহাম্মদ আসলাম চৌধুরীকে মনোনীত করা হয়েছে।
তাছাড়া চট্টগ্রাম-১০ আসনে এর আগে মনোনয়ন পেয়েছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বর্তমানে তাকে চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর, পতেঙ্গা, ডবলমুরিং, ইপিজেড ও সদরঘাট) আসনে প্রার্থী করা হয়েছে। গত ৩ নভেম্বর আসনটি ফাঁকা রেখেছিল বিএনপি। অপরদিকে, চট্টগ্রাম-১০ আসনে এখন দলটির প্রার্থী করা হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পাট শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাঈদ আল নোমানকে। বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান পূর্বকোণকে এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিগত সময়ে জোটগত নির্বাচনে চট্টগ্রাম থেকে কমপক্ষে দুই থেকে তিনটি আসন শরিক দলগুলোকে ছেড়ে দিতো বিএনপি। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী-বায়েজিদ আংশিক) আসনটি বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া-আংশিক) আসনটি এলডিপিকে এবং চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনটি জামায়াতে ইসলামীকে ছেড়ে দিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু এবার তার ব্যত্যয় ঘটেছে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত তিন দফায় চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৫টিতেই নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করে দলটি। এখন পর্যন্ত ঘোষণার জন্য বাকি রয়েছে চট্টগ্রাম-১৪ আসন।
বিএনপি সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া-আংশিক) আসনটিতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন বেশ কয়েকজন। তারা হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ডা. মহসিন জিল্লুর করিম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহŸায়ক ও চন্দনাইশ উপজেলা বিএনপির সাবেক আহŸায়ক নুরুল আনোয়ার চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী এবং বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম রাহী সিআইপি। শেষ মুহূর্তে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণায় চমক আসতে পারে, এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে, এ আসনে এলডিপি থেকে ফরম সংগ্রহ করেন এলডিপির সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রমের ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য। এর আগে ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম নিজে আর নির্বাচন করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনের মধ্যে তিন দফায় বিএনপির ১৫টি আসনের ঘোষিত প্রার্থীরা হলেন- চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) সরোয়ার আলমগীর, চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) মোস্তফা কামাল পাশা, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড-আকবরশাহ) আসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও বায়েজিদ-আংশিক) ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) হুম্মাম কাদের চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও, বোয়ালখালী ও পাঁচলাইশ-আংশিক) এরশাদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-পাহাড়তলী-হালিশহর-খুলশী) সাঈদ আল নোমান, চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর, পতেঙ্গা, ডবলমুরিং, ইপিজেড ও সদরঘাট) আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) এনামুল হক এনাম, চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) সরওয়ার জামাল নিজাম, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) নাজমুল মোস্তাফা আমিন এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা।
পূর্বকোণ/ইবনুর