চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

পাহাড়-হ্রদের কোলে প্রাণের মেলা
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আনন্দ সম্মিলনে বক্তব্য রাখছেন দৈনিক পূর্বকোণ সম্পাদক ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী। সাথে রয়েছেন দি পূর্বকোণ লিমিটেডের পরিচালক রাইনিসা চৌধুরীসহ প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিক ও কর্মকর্তাবৃন্দ

পূর্বকোণ পরিবারের আনন্দ সম্মিলন

পাহাড়-হ্রদের কোলে প্রাণের মেলা

তাসনীম হাসান

১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ | ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ

বিজয় দিবসের সকাল। শহর তখনও পুরোপুরি জেগে ওঠেনিপৌষের কুয়াশা ভেদ করে মিষ্টি রোদ উঁকি দিতে শুরু করেছে সবে। ঘড়ির কাঁটা ৮টা ছোঁয়ার আগেই পূর্বকোণ সেন্টারের সামনে হাজির পাঁচটি বাস। এরইমধ্যে সেন্টারপ্রাঙ্গণ ভরে ওঠে কোলাহল আর উচ্ছ্বাসে। পরিবার-পরিজন নিয়ে একে একে বাসে ওঠেন পূর্বকোণের কর্মীরা। একটু পরেই শুরু হলো যাত্রা। গন্তব্য এবার পাহাড়-হ্রদের দেশ রাঙামাটি। শহরের ব্যস্ততা পেছনে ফেলে বাস ছুটে চলে। বাসভর্তি মানুষ, মুখভর্তি হাসি। বিজয় মানে শুধু একটি তারিখ নয়, বিজয় মানে একসঙ্গে থাকা, হাসি-গান-আড্ডায় স্বাধীনতাকে ছুঁয়ে দেখা। সেই অনুভূতিই যেন ছড়িয়ে পড়েছিল বাসের ভেতরে। কেউ গুনগুন করে গেয়েছেন দেশাত্মবোধক গান, কেউ মেতে ওঠেন বহুদিনের জমে থাকা কথামালায়।

 

গাড়ির চাকা রাউজান পেরোতেই ধীরে ধীরে প্রকৃতি নিজের রূপ মেলে ধরতে শুরু করে। পাহাড়ের ছোঁয়া লাগে পথে। আঁকাবাঁকা উঁচুনিচু রাস্তা ধরে বাস এগোতে থাকে পাহাড়ের কোলঘেঁষে। দু’পাশে সবুজ পাহাড়, গাছের ফাঁক দিয়ে উঁকি দেয় কাপ্তাই লেকের নীল জল। শহরের কোলাহল পেছনে ফেলে প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়ার এক অনাবিল আনন্দে ভরে ওঠে সবার মন। কুয়াশা, পাহাড়ি গাছ ও ভেজা মাটির ঘ্রাণ ভেদ করে কখন যে পলওয়েল পার্কে পৌঁছে গেছেন, তা বুঝতেই পারেননি কেউ। পার্কে ঢুকেই সবাই উঠলেন লঞ্চে। কাপ্তাই হ্রদের বুক চিরে চলতে থাকা লঞ্চের ইঞ্জিনের শব্দের সঙ্গে পানির ছলছল ধ্বনি মিলে তৈরি করলো এক অপার্থিব অনুভূতি। আধা ঘণ্টা ধরে হ্রদে ভাসতে ভাসতে সবাই পৌঁছে যান সবুজেঘেরা মায়াবী দ্বীপে। দ্বীপজুড়ে পাখির কিচিরমিচির, ঢেউয়ের মৃদু শব্দ আর হিমেল বাতাসে প্রাণ ভিজিয়ে আবার জাহাজে চড়ে মূল অনুষ্ঠানস্থল পলওয়েল পার্কে ফিরে আসেন সবাই। হ্রদের নীল জলরাশি পাশে রেখে শুরু হলো বিজয় দিবসের মিলনমেলা। পরিচিত মুখের ভিড়ে ছিল অচেনা আপনজনের আবেশ; একই পরিবারের মতো আন্তরিকতা, হাসি আর কথোপকথনে ভরে ওঠে চারপাশ।

 

এরইমধ্যে মঞ্চ মাতান রাঙামাটির প্রখ্যাত শিল্পীরা। তিসা দেওয়ান, জোনাকি চাকমা আর মিলন ধরের কণ্ঠে সুর মিলিয়েছেন পূর্বকোণ পরিবারের সদস্যরাও। গানের ফাঁকে ফাঁকে জম্পেশ খাবারের আয়োজন-আনন্দে যেন কমতি ছিল না একটুও। এই মিলনমেলা আরও আনন্দময় হয়ে ওঠে পূর্বকোণ সম্পাদক ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী ও পরিচালক রাইনিসা চৌধুরীর উপস্থিতিতে। তাদের সান্নিধ্যে পূর্বকোণ পরিবারের সদস্যরা যেন আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠেন।

 

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের শুরুতে পূর্বকোণ সম্পাদক বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও পিকনিক অনুষ্ঠিত হলো। চট্টগ্রাম শহরে এই সংষ্কৃতি চালু করেছিলেন পূর্বকোণের প্রতিষ্ঠাতা চট্টলদরদী মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী। সময় বদলেছে, প্রজন্ম বদলেছে; সেই ধারাবাহিকতা আজও অটুট। পূর্বকোণের জন্য আমার বাবা-মা ও বড় ভাই তসলিম উদ্দিন চৌধুরী অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। আমাদের পাঁচজনের পরিবারে এখন আছে চেয়ারম্যান আমার মেজো ভাই জসিম উদ্দিন চৌধুরী ও আমি। মেজো ভাই অসুস্থ থাকায় আসতে পারেননি। একদিন হয়তো আমরাও থাকবো না; একে একে চলে যাবো। তবে আমরা না থাকলেও আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখবে। আপনাদের হাত ধরে পূর্বকোণ এগিয়ে যাবে আরও বহুদূর।

 

পরিচালক রাইনিসা চৌধুরী তার বক্তব্যে আনন্দ সম্মিলনে অংশ নেওয়ায় সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

 

আনন্দ সম্মিলন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও দৈনিক পূর্বকোণের নগর সম্পাদক নওশের আলী খান মঞ্চে ডেকে নেন বার্তা সম্পাদক হাসনাত মোর্শেদ, প্রধান প্রতিবেদক সাইফুল আলম, মহাব্যবস্থাপক মোজাম্মেল জিলানী, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মোহাম্মদ আলী, হিসাব বিভাগের প্রধান মো. মারুফ, মানবসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন শীল, সার্কুলেশন বিভাগের প্রধান তাপস কুমার নন্দী, রাঙামাটি জেলা প্রতিনিধি সাখাওয়াত হোসেন রুবেলসহ সবাইকে। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে আয়োজক কমিটির সদস্যসচিব মিহরাজ রায়হানের সঞ্চালনায় শুরু হয় র‌্যাফেল-ড্র। দেড়শো মানুষের এই আয়োজনে সবার জন্যই ছিল দুটি করে পুরস্কার। শেষে সম্পাদক ও পরিচালকের সঙ্গে সবাই তোলেন গ্রুপ ছবি।

 

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। সূর্য ঢলে পড়তে শুরু করে পশ্চিম গগনে। পাহাড়ি ঝিঁজি পোকার ডাক শুনতে শুনতে গাড়ির বহর ছুটে চলে শহরের পথে। দিন শেষে ফেরার পথে ক্লান্তি ছিল সবার শরীরে, কিন্তু মনে ছিল একরাশ পরিপূর্ণতা। বিজয় দিবসের এই আয়োজন যেন পূর্বকোণ পরিবারের জন্য হয়ে উঠেছিল শুধু ভ্রমণ নয়, সম্পর্কের বন্ধন আরও দৃঢ় করার, একসঙ্গে থাকার আনন্দকে আরও বেশি করে অনুভব করার এক উজ্জ্বল স্মৃতি।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট