
প্রতিবারের ন্যায় এবারও চট্টগ্রাম জেলার রেকর্ড ৩৪জনসহ সারাদেশে ৮৬ সিআইপি নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে ৮৬ জনকে নির্বাচিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। আগামী ১৭ ডিসেম্বর ঢাকায় আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে নির্বাচিত প্রবাসী সিআইপিদের সনদ প্রদান করার কথা রয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রেরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় ২০২৬ সালের জন্য ‘বাংলাদেশে শিল্পক্ষেত্রে সরাসরি বিনিয়োগকারী অনিবাসী বাংলাদেশি’ ক্যাটাগরিতে একজন, ‘বাংলাদেশে বৈধ চ্যানেলে সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণকারী অনিবাসী বাংলাদেশি’ ক্যাটাগরিতে ৭৫ জন এবং ‘বিদেশে বাংলাদেশি পণ্যের আমদানিকারক অনাবাসী বাংলাদেশি’ ক্যাটাগরিতে ১০জনসহ মোট ৮৬জনকে প্রবাসীকে বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (অনিবাসী বাংলাদেশে) বা সিআইপি (এনআরবি) হিসেবে বিবেচনা করেছে বাংলাদেশে সরকার।
এর মধ্যে সর্বোচ্চ রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির রয়েছেন ৪১ জন প্রবাসী। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ওমান প্রবাসী। এদেশ থেকে ৭ জন সিআইপি নির্বাচিত হন। এরপর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ওমান প্রবাসীরা। এদেশ থেকে সিআইপি হয়েছেন ৭জন। এরপরের অবস্থান যুক্তরাজ্যের প্রবাসীরা। এদেশ থেকে সিআইপি হয়েছেন ৬জন। সিআইপি নির্বাচিত অন্যদের মধ্যে আমেরিকা ও কাতারের ৫জন করে, সৌদি আরবের ৪, হংকংয়ের ৩, অস্ট্রেলিয়া ৩, কুয়েতের ২, জাপানের ২, সিংগাপুরের ২, মালয়েশিয়ার ২ এবং থাইল্যান্ড, কানাডা, সুইডেন এবং সুইজারল্যান্ডের ১ জন করে প্রবাসী বাংলাদেশি সিআইপি হয়েছেন।
এদিকে নির্বাচিত চট্টগ্রামের ৩৪জন সিআইপির মধ্যে সর্বোচ্চ হাটহাজারীর ৯জন, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাউজানের ৮জন। এরপর সাতকানিয়া ও নগরীর রয়েছেন ৫জন করে এবং ফটিকছড়ি ও পটিয়ার রয়েছেন দুইজন করে। বোয়ালখালী, সীতাকুÐ ও চন্দনাইশ উপজেলার রয়েছেন একজন করে প্রবাসী। নির্বাচিত চট্টগ্রামের ৩৪ প্রবাসী হলেন– হাটহাজারীর রুহুল্লাপুরের মোহাম্মদ রুবেল (ইউএই), ফটিকছড়ির ধুরুং এর মোহাম্মদ ওসমান (ইউএই), হাটহাজারীর ফতেয়াবাদের মোহাম্মদ মহিউদ্দিন (ইউএই), পটিয়ার মুহাম্মদ আবুল বশর (ইউএই), হাটহাজারীর পশ্চিম ধলই এর সৈয়দ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন (হংকং), নগরীর পাথরঘাটার তাহসিন উদ্দিন খান (যুক্তরাজ্য), ফটিকছড়ির মতিন নগরের আবদুল গণি (সৌদি আরব), বোয়ালখালী সারোয়াতলীর মোহাম্মদ শফিউল আলম (ইউএই), হাটহাজারী রুহুল্লাপুরের মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (ইউএই), সাতকানিয়া আমিলাইশের মোহাম্মদ মহিউদ্দীন তালুকদার (ইউএই), রাউজানের নোয়াজিষপুর ফতেহনগরের ফরিদুল আলম (ইউএই), একই উপজেলার হলদিয়া এয়াছিননগরের মোহাম্মদ হাসান মোরশেদ (ইউএই), সাতকানিয়ার খাগরিয়ার শফিকুল ইসলাম রাহী (ইউএই), একই উপজেলার বারদোনার মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম (ইউএই), রাউজান পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (ইউএই), সাতকানিয়ার খাগরিয়ার মুহাম্মদ আবদুল মান্নান (ওমান), নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এ ব্লকের মোহাম্মদ আমিনুল হক (ইউএই), রাউজানের গহিরার দলইনগরের মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন (ইউএই), একই উপজেলার পশ্চিম গুজরার মোহাম্মদ জাফর (ইউএই), একই উপজেলার হলদিয়ার উত্তর শর্তার মো. ওসমান আলী (ইউএই), হাটহাজারীর বুড়িশ্চর গ্রামের নুর নবী (ইউএই), একই উপজেলার দক্ষিণ বুড়িশ্চর গ্রামের মোহাম্মদ খালেদ (ইউএই), একই উপজেলার বুড়িশ্চর গ্রামের মো. আবুল হাসেম (ইউএই), একই উপজেলার গড়দুয়ার ইউনিয়নের নিজাম উদ্দীন (ইউএই), সীতাকুণ্ড উপজেলার মুরাদপুরের মো. মহিউদ্দীন বহদ্দা চৌধুরী (যুক্তরাজ্য), রাউজানের হলদিয়ার উত্তর সর্তার মোহাম্মদ সেলিম (ইউএই), নগরীর হামজারবাগ এলাকার মোহাম্মদ মাহাবুল আলম (ইউএই), পটিয়ার বেলেখাইনের মোহাম্মদ আবছার উদ্দীন (ইউএই), নগরীর চকবাজারের শেখ আবদুল আজাদ (ইউএই), চান্দগাঁও আবাসিক ‘এ’ বøকের মো. মনজুরুল হক চৌধুরী (ইউএই), সাতকানিয়ার রূপকানিয়ার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান (কাতার), চন্দনাইশ জাফরাবাদের নুরুল আমিন (ওমান), রাউজান পৌরসভার সুলতানপুরের মোহাম্মদ জুলফিকার (ইউএই) এবং হাটহাজারীর দক্ষিণ মাদার্শার আবুল কাশেম (কুয়েত)।
প্রসঙ্গত, নির্বাচিত সিআইপিরা দুই বছর পর্যন্ত (প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ ১৪ ডিসেম্বর থেকে) বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। সিআইপি কার্ডের মেয়াদকালীন বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য প্রবেশপত্র পাবেন ও সরকার নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট বিষয়ক নীতিনির্ধারণী কমিটিতে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন। এছাড়া সিআইপিরা দেশ ও বিদেশে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অগ্রাধিকার পাবেন। বিজয় দিবস, স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, একুশে ফেব্রæয়ারি, শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ইত্যাদি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবস উপলক্ষে বিদেশের বাংলাদেশ মিশনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হবেন সিআইপিরা। সিআইপি কার্ডধারীরা ব্যবসা সংক্রান্ত ভ্রমণে বিমান, রেল, সড়ক ও জলযানে আসন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ‘চামেলী’ ব্যবহার এবং স্পেশাল হ্যান্ডিলিংয়ের সুবিধা পাবেন।
সিআইপি ব্যক্তিদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যা ও নিজের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে কেবিন সুবিধার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। এছাড়া বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মতো সুযোগ-সুবিধা পাবেন এবং তাদের বিনিয়োগ ‘ফরেন প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট (প্রমোশন অ্যান্ড প্রটেকশন) আইন, ১৯৮০’ এর বিধান অনুযায়ী সংরক্ষণ করা হবে বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশে উপস্থিত থাকলে বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে এবং সিটি করপোরেশনের আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ পাবেন সিআইপিরা।
পূর্বকোণ/ইবনুর