চট্টগ্রাম সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

এইচপিভি চেনেন না অর্ধেকের বেশি মেডিকেলছাত্রী

চট্টগ্রামের তিন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ছাত্রীদের নিয়ে গবেষণা

এইচপিভি চেনেন না অর্ধেকের বেশি মেডিকেলছাত্রী

ইমাম হোসাইন রাজু

১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ | ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ

যে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকেই জরায়ুমুখ ক্যান্সারের মতো প্রাণঘাতী রোগের সূচনা, সেই হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) সম্পর্কেই স্পষ্ট ধারণা নেই বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অর্ধেকের বেশি ছাত্রীদের। চট্টগ্রামের তিনটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পরিচালিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে- মাত্র ৪৮ দশমিক ৩ শতাংশ মেডিকেল ছাত্রীই এইচপিভিকে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের জীবাণু হিসেবে সঠিকভাবে শনাক্ত করতে পেরেছেনবাকি ৫২ শতাংশই এ বিষয়ে অজ্ঞ। আরও উদ্বেগজনক হলো, মাত্র ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ ছাত্রী এইচপিভি রোগের ঝুঁকির কারণ সম্পর্কে অবহিত।

 

চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের গাইনি এন্ড অবস্টেট্রিকস বিভাগের উদ্যোগে এ গবেষণাটি পরিচালিত হয়। গবেষণার নেতৃত্ব দেন সিআইএমসির গাইনি এন্ড অব্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারজানা চৌধুরী। এতে চট্টগ্রামের তিনটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের মোট ১৭৮ জন নারী শিক্ষার্থী অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩৮ দশমিক ৮ শতাংশের বয়স ছিল ২১ বছর। তাদের ৭৭ শতাংশ ছিলেন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী এবং প্রায় সবাই অবিবাহিত।

 

গবেষণায় দেখা যায়, ৮২ শতাংশ শিক্ষার্থী জরায়ুমুখ ক্যান্সারের নাম শুনেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী এই রোগ সম্পর্কে জেনেছেন শিক্ষকদের কাছ থেকে (৪২ দশমিক ৬ শতাংশ) এবং সংবাদমাধ্যম থেকে (৪০ দশমিক ৫ শতাংশ)। তবে জ্ঞানগত ঘাটতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে রোগের মূল কারণ ও ঝুঁকির বিষয়ে। মাত্র ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী এইচপিভিকে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের ঝুঁকিপূর্ণ কারণ হিসেবে শনাক্ত করতে পেরেছেন।

 

লক্ষণ সম্পর্কে ধারণাও সন্তোষজনক নয়। গবেষণায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ৩৩ দশমিক ৭ শতাংশ জরায়ুমুখ ক্যান্সারের প্রধান লক্ষণগুলো সঠিকভাবে উল্লেখ করতে পেরেছেন। যদিও ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থী এই ক্যান্সার প্রতিরোধের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন, বাস্তবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের হার খুবই কম।

 

গবেষণায় আরও দেখা যায়, মাত্র ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ মেডিকেল ছাত্রী এইচপিভি টিকা নিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও স্ক্রিনিংয়ের হার অত্যন্ত কম, মাত্র ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। স্ক্রিনিং না করার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে সচেতনতার অভাব, পর্যাপ্ত তথ্য না থাকা এবং আর্থিক সামর্থ্যরে সীমাবদ্ধতা।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে জরায়ুমুখ ক্যান্সার নারীদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বাধিক ক্যান্সার। প্রতিবছর দেশে ১২ হাজারের বেশি নারী নতুন করে আক্রান্ত হন এবং ছয় হাজারের বেশি নারী মারা যান। অথচ কিশোরী ও তরুণীদের জন্য এইচপিভি টিকাকরণ এবং ৩০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের জন্য স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে এই ক্যান্সার কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

 

গবেষণার প্রধান গবেষক ডা. ফারজানা চৌধুরী বলেন, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করে পরিচালিত সচেতনতা কর্মসূচি কিশোরী ও তরুণীদের এইচপিভি টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করবে এবং ৩০ ঊর্ধ্ব নারীদের স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব হবে।

 

চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মুসলিম উদ্দিন সবুজ বলেন, রোগের ধরন, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। চিকিৎসা ব্যবস্থাকেও এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে হলে গবেষণার বিকল্প নেই। যুগোপযোগী গবেষণার মাধ্যমেই ভবিষ্যতের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নির্ধারণ সম্ভব

 

গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, মেডিকেল শিক্ষার্থীরাই ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যকর্মী। তাদের মধ্যেই যদি এইচপিভি ও জরায়ুমুখ ক্যান্সার বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও সচেতনতা না থাকে, তাহলে মাঠপর্যায়ে প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম সফল করা কঠিন হবে। এ কারণে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে নিয়মিত স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছেন তারা।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট