চট্টগ্রাম রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫

নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের হালনাগাদ তালিকা প্রস্তুত

নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের হালনাগাদ তালিকা প্রস্তুত

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ | ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনার একটি হালনাগাদ তালিকা প্রস্তুত করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এলাকাবাসীর অভিযোগ, জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ এবং সরেজমিনে ভবনগুলোর বাহ্যিক অবস্থা পর্যালোচনার ভিত্তিতে এ তালিকা প্রস্তুত করেছে সিডিএ।

 

তালিকাভুক্ত ভবনগুলো জননিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব ভবন অপসারণে চসিকের সচিব মো. আশরাফুল আমিনকে চিঠি দিয়েছেন সিডিএর সচিব রবীন্দ্র চাকমা।

 

সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে (চসিক) ১০২টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা দেয় সিডিএ। তালিকাভুক্ত ভবনগুলোর মধ্যে ৬৮টি আবাসিক ও ১২টি বণিজ্যিক। ১৩টি ভবন আবাসিক ও বাণিজ্যিক দুইভাবেই ব্যবহার হয়। এছাড়া ৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ১টি মার্কেট ও ১টি প্রশাসনিক ভবন রয়েছে। তালিকায় বাকলিয়ার একটি, শুলকবহর এলাকার ২টি এবং মোমিন রোডের একটি ভবনের নাম থাকলেও ভবনগুলো বাণিজ্যিক নাকি আবাসিক তা উল্লেখ করা হয়নি। তালিকার তথ্য অনুযায়ী, ঝূঁকিপূর্ণ ভবনের অনেকগুলো ৫০ থেকে ১০৫ বছরের পুরনো। কিছু ভবনের মেয়াদ চলে গেছে। ভূমিকম্প ও অন্যান্য কারণেও একপাশে কাত বা হেলে পড়েছে কয়েকটি ভবন। হেলে পড়া ভবনের মধ্যে কিছু রয়েছে কয়েক বছর পূর্বে নির্মিত। এছাড়া কিছুৃ পুরাতন ভবনের কাঠামো জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। দেয়ালের বিম ও দেয়ালে রয়েছে ফাটল। ফলে যে কোনো সময় ভবনগুলো বড় ধরনের বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে।

 

সিডিএর পক্ষ থেকে চসিককে ওই চিঠিতে বলা হয়, মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ, ফাটলযুক্ত ও রক্ষণাবেক্ষণহীন ভবন নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিলেন। একাধিক ক্ষেত্রে ভবনের দেয়ালে বড় ফাটল, রড বের হয়ে আসা, ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়া এবং হেলে পড়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ লক্ষণ দেখা গেছে। এসব বিষয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়।

 

স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯-এর তৃতীয় তফসিলের অনুচ্ছেদ-১৭ অনুযায়ী, কোনো ইমারত ধ্বংসের আশঙ্কা সৃষ্টি করলে বা তা বাসিন্দা, পার্শ্ববর্তী ভবন কিংবা পথচারীদের জন্য বিপজ্জনক হলে সিটি কর্পোরেশন নোটিশের মাধ্যমে ভবনের মালিক বা দখলকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিতে পারে। নির্দেশ অমান্য করা হলে কর্পোরেশন নিজ উদ্যোগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে এবং সে ক্ষেত্রে ব্যয়িত অর্থ ভবনের মালিকের কাছ থেকে কর হিসেবে আদায়যোগ্য হবে

 

আইনের একই অনুচ্ছেদের উপধারা ১৭ এরধারা অনুযায়ী, কোনো ভবন যদি বিপজ্জনক বা বসবাসের অনুপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়, তবে সিটি কর্পোরেশন সন্তোষজনকভাবে মেরামত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ওই ভবনে বসবাস নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা রাখে

 

সিডিএ সূত্র জানায়, হালনাগাদ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ভবনগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত কারিগরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা জরুরি। প্রকৌশলীদের মাধ্যমে কাঠামোগত নিরাপত্তা যাচাই করে কোন ভবন মেরামতযোগ্য এবং কোনটি পরিত্যাজ্য তা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে সিটি কর্পোরেশনকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে গড়িমসি করলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রাণহানি ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাই আইনের আলোকে দ্রুত নোটিশ প্রদান, কারিগরি মূল্যায়ন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ভবন মেরামত বা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছেন তারা।

 

জানতে চাইলে সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম বলেন, সম্প্রতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের একটি তালিকা প্রস্তুত করে আমরা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে দিয়েছি। এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণের জন্য আমরা অনুরোধ জানিয়েছি।

 

তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে আমরা প্রয়োজনে সিটি কর্পোরেশনকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট