
আউশ, আমন ও বোরো ধানের মধ্যে চট্টগ্রামে বেশি আবাদ হয় আমন। আউশ ও বোরোর চেয়ে ৪-৫ গুণ বেশি জমিতে আবাদ হয় আমন ধান। তবে ১০ বছরে আবাদের পরিমাণ কমে আসলেও বেড়েছে উৎপাদন। কৃষি বিভাগ জানায়, ঊচ্চফলনশীল জাতের ধান আবাদ ও উন্নত প্রযুক্তির কৃষিযন্ত্র ব্যবহারে বাড়ছে ফসল উৎপাদন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০১৪-১৫ মৌসুমে চট্টগ্রামে আমন আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৮১ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর আবাদ হয়েছে এক লাখ ৭৯ হাজার ৮০৯ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে আবাদের পরিমাণ উঠা-নামায় ছিল। কিন্তু উৎপাদনের পরিমাণ উপরের দিকে বাড়তি রয়েছে। ২০১৪-১৫ সালে ধান উৎপাদন হয়েছিল ৫ লাখ ৬ হাজার ৩৬ টন। চলতি বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ সাড়ে ৩০ হাজার টন। লবণাক্ততার কারণে আবাদ কিছুটা কমলেও ছাড়িয়েছে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা।
কৃষি জরিপ বলছে, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে এ অঞ্চলে ধানি জমি কমেছে। খাল-জলাশয় ভরাট করে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে বাড়িঘর, নগরায়ণ-শিল্পায়ন। এতে প্রতিবছর এক শতাংশ কৃষি জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. ওমর ফারুক পূর্বকোণকে বলেন, ‘আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার ভালো ফলন হয়েছে। তবে লবণাক্ততার কারণে আবাদ কিছুটা কমেছে।’
কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত চার বছর ধরে নোনাপানির কারণে উপকূলীয় এলাকায় আমন আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই ভয়ে উপকূলীয় এলাকার চাষিরা ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। দক্ষিণে নদী-সাগর ঘেঁরা চার উপজেলায় এই সংকট চলে আসছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সোনালি ধানে মাতোয়ারা কৃষক। পুরোদমে চলছে ধান কাটা। কৃষকের ঘরে ঘরে নবান্নের উৎসব। বোয়ালখালী, পটিয়া, বাঁশখালী ও আনোয়ারাসহ সবকটি উপজেলায় চলছে আমন ধান কাটা, মাড়াই ও গোলায় তোলা। ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কিষাণীরা।
জ্যৈষ্ঠপুরা এলাকার কৃষক শম্ভু বড়ুয়া বলেন, ‘এবার এক একর জমিতে পাইজাম এবং ব্রি- ৯৪ জাতের ধানের চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। আমন আষাঢ়ের বৃষ্টিতে রোপণ করা হয়। কার্তিক মাসে ধান কাটা হয়।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় এক লাখ ৭৯ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমি। তবে লবণাক্ততার কারণে চাষাবাদ কমে আবাদ হয়েছে এক লাখ ৭৯ হাজার ৮০৯ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে হাইব্রিড জাতের ধান লাগানো হয় ৭৮০০ হেক্টর জমিতে। আর উফশী জাত এক লাখ ৪৯ হাজার ৬৬৫ হেক্টর ও স্থানীয় জাত ২২,৪৮০ হেক্টর জমিতে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৩৪ মেট্রিক টন। তবে ফসল ভালো হওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াবে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।
বোয়ালখালী উপজেলার আমুচিয়া এলাকার কৃষক মো. কামরুল বলেন, তিন কানি জমিতে আমন চারা রোপণ করেছেন। গত সপ্তাহে ধান কাটা শুরু করেছেন। ভালো ফলনে উচ্ছ¡াস প্রকাশ করেছেন তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) কৃষিবিদ কল্পনা রহমান বলেন, ‘নিচু এলাকার জন্য উপযোগী হওয়ায় ব্রি ধান-৪৯, ৫১ ও ৫২ জাত সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে। এছাড়া নতুন জাতের মধ্যে বিনা ধান-২৩, ১০৩, ব্রি ধান-৯৪ ও ৯৫ ভালো ফলন হচ্ছে।’
কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, প্রতি হেক্টরে হাইব্রিড জাতের ধানে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ দশমিক ১০ টন। উফশী জাতে ৩ দশমিক ১০ টন ও স্থানীয় জাতে ১ দশমিক ৬৫ টন।
১০ বছরের আবাদ ও উৎপাদন:
২০১৪-১৫ সালে চট্টগ্রামে আমন আবাদ হয়েছে এক লাখ ৮১ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে। ধান উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার ৩৬ টন। ২০১৫-১৬ সালে এক লাখ ৭৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছে ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৭৯৬ টন। ‘১৬-১৭ সালে এক লাখ ৭৮ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে ধান হয়েছে চার লাখ ৮১ হাজার ১৬৯ টন। ‘১৭-১৮ সালে এক লাখ ৭৬ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছে ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৫০৭ টন। ‘১৮-১৯ সালে এক লাখ ৭৮ হাজার ৭০০ হেক্টরে উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৭৮৬ টন। ‘১৯-২০ সালে এক লাখ ৮১ হাজার ৫০৬ হেক্টরে ধান উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ১৬ হাজার ৫৮৫ টন। ‘২০-২১ সালে এক লাখ ৮৫ হাজার ৩৪০ হেক্টরে ধান আবাদ হয়েছে চার লাখ ৯৫ হাজার ৭৫৯ টন। ‘২১-২২ সালে এক লাখ ৮২ হাজার ৬৭১ হেক্টরে ধান উৎপাদন হয়েছে পাঁচ লাখ ১০ হাজার ২২৯ টন। ‘২২-২৩ সালে এক লাখ ৭৯ হাজার ৬৩৮ হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছে পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ৮৪৮ টন। ‘২৩-২৪ সালে এক লাখ ৭৯ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে ধান হয়েছে পাঁচ লাখ ১৫ হাজার ৮৪৯ টন। চলতি মৌসুমে এক লাখ ৭৯ হাজার ৮০৯ হেক্টর জমিতে ধান হয়েছে ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৩৪ টন।
পূর্বকোণ/ইবনুর