চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রাম-৯ : প্রচারণায় নতুন মেরুকরণ

চট্টগ্রাম-৯ : প্রচারণায় নতুন মেরুকরণ

মোহাম্মদ আলী

১৫ নভেম্বর, ২০২৫ | ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী ও বাকলিয়া) সংসদীয় আসনের জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী ঘোষণা করেছে প্রায় ১০ মাস আগে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাজনৈতিক দলটি ডা. ফজলুল হককে তাদের প্রার্থীতা হিসেবে ঘোষণা দেয়। এরপর থেকে তিনি মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু বিএনপি এখনো তাদের প্রার্থী ঘোষণা দিতে পারেনি।

 

সর্বশেষ গত ৩ নভেম্বর ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন থেকে বিএনপির প্রথম দফায় প্রার্থী ঘোষণাকালে এ আসনে আলহাজ আবু সুফিয়ানের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনের শেষের দিকে তিনি এ আসনে বিএনপি প্রার্থীর নাম স্থগিত করেন। এরপর থেকে আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা ঝুলে থাকলেও বসে নেই সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তাদের প্রচারণায় নির্বাচনী মাঠে নিয়েছে নতুন মোড়। দলের মনোনয়ন পেতে বর্তমানে চার মনোনয়ন প্রত্যাশীর প্রচারণা বেশ জমে উঠেছে। আগে এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ছয় বিএনপি নেতা। এখন মাঠে প্রচারণায় আছেন ৪ জন। আর তাতেই প্রচারণায় লেগেছে নতুন হাওয়া।

 

চট্টগ্রামে ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্ব ও মর্যাদাপূর্ণ আসন চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী ও বাকলিয়া) আসনটি। এ আসন নিয়ে সব রাজনৈতিক দলের পরিকল্পনা, কৌশল ও গুরুত্ব থাকে তুলনামূলক অনেক বেশি। এ কারণে আসনটিতে নির্বাচন করেন সব হেভিওয়েট প্রার্থী। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এ আসনে ইতোমধ্যে একক প্রার্থী হিসেবে ডা. ফজলুল হককে মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি মাঠে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন। এ আসনে বিএনপি থেকে প্রথম দিকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ও নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আলহাজ শামসুল আলম এবং নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর। কিন্তু পরবর্তীতে প্রচারণায় যুক্ত হন দলের দক্ষিণ জেলার সাবেক আহ্বায়ক ও নগর বিএনপির সাবেক সিনিয়র সভাপতি আলহাজ আবু সুফিয়ান এবং নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক, চট্টগ্রাম কাস্টম্স এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি ও চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক এস এম সাইফুল আলম।

 

এছাড়া ২৬ অক্টোবর ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সভায় ডাক পান নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল। তবে বর্তমানে মাঠে প্রচারণায় ব্যস্ত বিএনপির চার মনোনয়ন প্রত্যাশী। এরা হলেন- আলহাজ শামসুল আলম, আবুল হাশেম বক্কর, আলহাজ আবু সুফিয়ান ও এস এম সাইফুল আলম। দলের চার মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আলহাজ শামসুল আলম ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করেছিলেন।

 

এছাড়া অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আলহাজ আবু সুফিয়ান এর আগে চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও, বোয়ালখালী ও পাঁচলাইশ আংশিক) আসন থেকে দুইবার বিএনপি থেকে নির্বাচন করেছিলেন। তবে এবার ওই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পান নগর বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ এরশাদ উল্লাহ। অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর বিগত ১৬ বছরে দলের আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি বিএনপির মনোনয়ন পেতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। মনোনয়ন প্রত্যাশী অপরজন হলেন নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম সাইফুল আলম।

 

বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ আসনে দলের প্রার্থিতা নিয়ে তোড়জোড় চলছে। নতুন করে দলের আরো কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠে নামায় প্রার্থিতা ঘিরে নানা মেরুকরণ তৈরি হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ে কিংবা কারা মনোনয়ন বঞ্চিত হচ্ছেন, এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই দলটির নেতাকর্মীর মাঝে। সব মিলে এবার এ আসনে প্রার্থী বাছাইয়ে বিএনপিকে বড় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে- এমনটি মনে করেন দলের নেতারা।

 

বিএনপি সূত্র আরো জানায়, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী ও বাকলিয়া) আসনে একক প্রার্থী নির্ধারণে কেন্দ্রকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। চট্টগ্রামের বিএনপি নেতৃবৃন্দ ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের অনেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কারো কারো পক্ষে কাজ করছেন। এতে একক প্রার্থী নির্ধারণের বিষয়টি ক্রমেই জটিল হয়ে পড়ছে। এমনকি দিন যতই গড়াচ্ছে তাতে প্রার্থিতা নির্ধারণে নতুন নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হচ্ছে।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট