চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

অপ্রতুল বরাদ্দের ধাক্কা স্যুয়ারেজ প্রকল্পে

অপ্রতুল বরাদ্দের ধাক্কা স্যুয়ারেজ প্রকল্পে

মোহাম্মদ আলী

১১ নভেম্বর, ২০২৫ | ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ

চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ মিলছে কম। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ (পয়োনিষ্কাশন) প্রকল্পের কাজের গতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্যুয়ারেজ প্রকল্পে সরকারি অর্থ বরাদ্দ মিলছে চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। প্রকল্পের ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চাহিদা দেওয়া হয়েছিল এক হাজার ৪০ কোটি টাকা। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে চলতি অর্থবছরে সরকার থেকে অর্থ বরাদ্দ মিলেছে মাত্র ৬৭৬ কোটি টাকা। তাই প্রকল্পের কাজের গতির ধারাবাহিকতা রক্ষায় আরো ৪০০ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দের সুপারিশ করেছে প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটি। এটি এখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগের ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে প্রকল্পের জন্য মন্ত্রণালয়ে চাহিদা দেওয়া হয়েছিল এক হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। কিন্তু ওই অর্থ বছরে বরাদ্দ মিলেছে ৭৪৪ কোটি টাকা। এ অবস্থায় প্রকল্পের কাজে গতি বাড়ানো যাচ্ছে না। এমন কী অর্থ বরাদ্দের সংকটের কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বকেয়া নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। প্রকল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ প্রায় ১৫ দিন বন্ধ ছিল। দক্ষিণ কোরিয়ার মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড উপ-ঠিকাদারদের অর্থ পরিশোধ না করায় ৭টি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রেখেছিল। পরে অবশ্য মূল ঠিকাদারের সাথে উপ-ঠিকাদারের সমঝোতা হয় বলে জানা গেছে। এরপর উপ-ঠিকাদারেরা কাজ শুরু করে। এ অবস্থায় প্রকল্পের নির্মাণকাজ বর্ধিত সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

 

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ওয়াসার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ‘স্যুয়ারেজ’। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ওয়াসার স্যুয়ারেজের প্রথম প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। বাংলাদেশ সরকারের সম্পূর্ণ অর্থায়নে প্রকল্পের জন্য প্রথমবার ব্যয় ধরা হয়েছিল তিন হাজার ৮০৮ কোটি ৫৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। কিন্তু পরে প্রকল্পটির সংশোধিত প্রস্তাব চলতি বছরের ২০ এপ্রিল একনেক সভায় অনুমোদন হলে ব্যয় বাড়ে আরো এক হাজার ৪১০ কোটি টাকা। তাতে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়ায় ৫ হাজার ২১৯ কোটি টাকা। বর্তমানে দুইভাগে চলছে প্রকল্পের কাজ। একটি হচ্ছে- পাইপলাইন বসানো এবং অপরটি হালিশহরে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ। প্রকল্পের অধীনে সবমিলে পয়োপাইপলাইন বসানো হবে ২০০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৮১ কিলোমিটার অগভীর পাইপলাইন। বর্তমানে গভীর ও অগভীর পাইপলাইন বসানো হয়েছে ১২৮ কিলোমিটার। এতে পাইপলাইনের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৬০ শতাংশ।

 

অপরদিকে হালিশহরে প্রকল্প এলাকায় পয়োশোধনাগার, ফিক্যাল স্লাজ ট্রিটমেন্ট (মানুষের মল পরিশোধনাগার) প্ল্যান্ট নির্মাণে সিভিলের কাজ শেষ হয়েছে ৮৫ শতাংশ এবং ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল কাজ হয়েছে ৪০ শতাংশ। এছাড়া প্রকল্পের অধীনে গৃহ পয়োসংযোগ হবে ২৮ হাজার। বর্তমানে সংযোগ প্রদান করা হয়েছে ১২ হাজার গৃহে। সবমিলে স্যুয়ারেজের প্রথম প্রকল্পের এ পর্যন্ত ৭০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামী ২০২৬ সালে প্রকল্প শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে ওয়াসার।

 

ওয়াসা সূত্র জানায়, দক্ষিণ কোরিয়ার ঠিকাদার সংস্থা তায়ং ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এ প্রকল্পের কাজ করছে। একইসাথে চলছে গ্রাহক পর্যায়ে পয়োসংযোগ লাইন প্রদানের কাজও। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর নগরীর ২০ লাখ মানুষ স্যুয়ারেজের আওতায় আসবে। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম ওয়াসার এটিই হচ্ছে প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্প।

 

ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্প পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, ‘প্রকল্পের কাজের গতি ধারাবাহিকতা রক্ষায় আরো ৪০০ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দের সুপারিশ করেছে প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটি। এটি এখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।’

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট