চট্টগ্রাম শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

পদোন্নতিতে অনীহা কেন খাদ্য বিভাগে
ফাইল ছবি

পদোন্নতিতে অনীহা কেন খাদ্য বিভাগে

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৯ অক্টোবর, ২০২৫ | ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ

খাদ্য গুদামে চাল-গম নয়, যেন রয়েছে মৌচাক। সেখান থেকে মধু ঝরে। সেই মধু খেতে অনেকেই ‘তথ্য গোপন’ করে পদোন্নতি নিতে চান না। অর্থাৎ প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদার উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার চেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার পদে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন অনেকেই।

 

খাদ্য অধিদপ্তরের পদোন্নতির তালিকায় ধরা পড়ে এ অসঙ্গতি। গত মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) ৮২ কর্মকর্তাকে পদোন্নতির জন্য সরকারি কর্ম কমিশনে প্রস্তাব পাঠিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ১০ গ্রেড থেকে ৯ম গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু এরমধ্যে ১০ জনের পদোন্নতি ঝুলে রয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ১০ কর্মকর্তার বিভিন্ন সময়ে এসিআর (গোপনীয় অনুবেদন) জমা দেননি। কিন্তু বিধিমালা বলছে, এসিআর জমা না দেওয়া ‘অসদাচরণ’। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

 

এসিআর জমা না দেওয়া ১০ কর্মকর্তার মধ্যে দুজন চট্টগ্রাম অঞ্চলে কর্মকর্তা রয়েছেন। গোলাম মোস্তফা নামে একজন গত মাসে বদলি হয়ে খাগড়াছড়ির পানছড়ি খাদ্য গুদামে যোগদান করেছেন। তার বিরুদ্ধে গত সরকারের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। অপরজন হচ্ছেন, রাঙামাটি সদর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মোরশেদুল করিম।

 

গত ২৮ সেপ্টেম্বর ফেনীর ছাগলনাইয়া খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে গোলাম মোস্তফাকে খাগড়াছড়ির পানছড়ি খাদ্য গুদামে পদায়ন করা হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, গোলাম মোস্তফা নামে এক কর্মকর্তা ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এসিআর জমা দেওয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, পদোন্নতি না নিতে চার বছর এসিআর গোপন রেখেছেন তিনি। তবে এসিআর জমা না দেওয়ার বিষয়ে তিনি দাবি করেন, ‘এই গোলাম মোস্তফা আমি নই। মনে হয়, উনার বাড়ি উত্তরবঙ্গে। বরগুনা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে চাকরি করেন।’

 

গোলাম মোস্তফার কথা সূত্র ধরে বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি গোলাম মোস্তফার সন্ধান দিতে পারেননি। পরে বরগুনা জেলা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী সাইফুদ্দিন সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বরগুনা জেলায় গোলাম মোস্তফা নামে কর্মকর্তা নেই বলে জানান তিনি।

 

খাদ্য বিভাগের একটি সূত্র কিশোরগঞ্জ উপজেলায় খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে খোঁজ নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিশোরগঞ্জ খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে গোলাম মোস্তফার নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি।

 

অভিযোগ রয়েছে, খাদ্য গুদামে সরকারি চাল নিয়ে কারসাজি, ডিও ব্যবসায়ী ও কালোবাজারিদের খেলা চলে। সব খেলার প্রধান কারিগর হচ্ছে গুদাম কর্মকর্তারা। এ অপকর্মে লাখ লাখ টাকার অবৈধ লেনদেন হয়।

 

খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে রাঙামাটি সদর এলএসডিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন গোলাম মোস্তফা।

 

অনিয়ম-দুর্নীতি ও বদলির বিষয়ে গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘সরকারি চাকরিজীবীদের বদলি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে অভিযোগ থাকতেই পারে।’

বান্দরবান জেলা সদর গুদামের মোরশেদুল করিম ২০২১ সালের এসিআর জমা দেননি। এসিআর জমা না দেওয়ায় তার পদোন্নতি আটকে রয়েছে।

 

এ বিষয়ে মোরশেদুল করিম গত মঙ্গলবার বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এসিআর জমা না দিলে আমি কী করবো। সবার লক্ষ্য থাকে, চাকরিতে পদোন্নতি পাওয়ার।’

 

গোপনীয় অনুবেদন (এসিআর) অনুশাসনমালা-২০২৩ নীতিমালার ২.৬.৫ ধারায় বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুবেদন দাখিল, অনুস্বাক্ষর প্রতি স্বাক্ষরের ব্যর্থতা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ‘অসদাচরণ’ বলে গণ্য করা হবে। এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এছাড়াও সাময়িক বরখাস্ত, ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা, চাকরিচ্যুতি করা যাবে।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট