চট্টগ্রাম শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

চট্টগ্রাম নগরের সৌন্দর্য রক্ষায় সাহসী পদক্ষেপ অব্যাহত থাকুক
ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম নগরের সৌন্দর্য রক্ষায় সাহসী পদক্ষেপ অব্যাহত থাকুক

নওশের আলী খান

৯ অক্টোবর, ২০২৫ | ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ

অপরূপ সৌন্দর্যের নগর চট্টগ্রাম। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এই সৌন্দর্য ঢাকা পড়েছিল রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক ব্যানার পোস্টারের আড়ালে। নগরবাসী যখন এই দৃশ্যপট পরিবর্তনে প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন তখনই মেয়রের সৌন্দর্য রক্ষায় সাহসী উদ্যোগ সকলের নজর কেড়েছে।

 

গত রবিবার সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন নিজের ছবি থাকা ব্যানার নিজেই অপসারণ করে এই কার্যক্রম শুরু করেছেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে যে পরিবর্তনের রাজনীতির কথা সবাই বলছে-মেয়রের কার্যক্রম সেই পরিবর্তনের দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

 

শুধু মেয়র নন-বড় দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং জামায়াতের একাধিক প্রভাবশালী নেতার ছবি থাকা বেশ কিছু ব্যানার পোস্টারও নামাতে দেখা গেছে গত কয়েকদিনে। একজন জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে এতে নিজের মধ্যে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে পাহাড়, নদী, সাগরবেষ্টিত চট্টগ্রাম নগরের সৌন্দর্য সবার চোখে ধরা পড়বে। সৌন্দর্য ঢেকে রাখা ব্যানার পোস্টার স্থায়ীভাবে অপসারণ হবে বলে বিশ্বাস করি।

 

মূলত, আশির দশকে ছাপার কাজে রঙিন প্রযুক্তি আসার পর থেকে ব্যানার ফেস্টুন প্রচারণার মূল ধারায় আসে। রাজনৈতিক কর্মসূচি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, এমনকি সামাজিক অনুষ্ঠানেও ব্যানার টাঙানো-লাগানো শুরু হয়। একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে ডিজিটাল প্রিন্টিংয়ের প্রসার বাড়লে ব্যানার-পোস্টার আরও বড় আকারে তৈরি হতে থাকে। নির্বাচনী প্রচার, শুভেচ্ছা বার্তা-সব ক্ষেত্রে এসবের ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়।

 

এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম নগরে গত এক দশকে ব্যানার পোস্টার টাঙানো-লাগানো ব্যাপকহারে বেড়ে যায়। ঢাকা পড়তে শুরু করে নগরের সৌন্দর্য। রাজনৈতিক নেতা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার-সবাই ইচ্ছেমতো ব্যানার পোস্টার লাগানো শুরু করে। সিটি কর্পোরেশন এসব অপসারণে মাঝে-মধ্যে অভিযান চালালেও ব্যানার পোস্টার লাগানোর প্রবণতা বন্ধ হয়নি। অভিযানের সময় রাজনৈতিক ব্যানার-পোস্টার অপসারণে বরাবরই উদাসীন ছিল সংস্থটি।

 

এখন প্রযুক্তির যুগ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে স্ট্যাটাস, ছবি বা ভিডিও শেয়ার করলে মুহূর্তেই তা পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে যায়। সহজেই নিজের বা নিজের প্রতিষ্ঠানের প্রচারণা চালানো যায়। কার্যকরভাবে দর্শক শ্রোতার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। এরপরও আমাদের রাজনৈতিক নেতারা কেনো ব্যানার পোস্টারের মতো নগরের সৌন্দর্যহানিকর এবং পরিবেশ ধ্বংসকারী সংস্কৃতি আঁকড়ে ধরে আছেন তা বোধগম্য নয়।

 

এ বিষয়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ‘ব্যানার পোস্টার ফেস্টুন যুগের অবসান চায় নগরবাসী’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক পূর্বকোণ। সেখানে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা একবাক্যে ব্যানার পোস্টার যুগের অবসান চেয়েছেন। এই সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।

 

প্রশ্ন হচ্ছে-নেতারা যেখানে অপছন্দনীয় কাজের বিরুদ্ধে কর্মীরা সেখানে কীভাবে তাদের ছবি দিয়ে বড় বড় ব্যানার পোস্টায় লাগায়? নেতাদের ছবি এক কোণে ছোট করে বসিয়ে নিজের ছবি বড় করে দেয়? ব্যাপারটা এমন হয়ে গেছে, এলাকায় নিজের প্রভাব জানান দিতে পাতি নেতারা এমন ব্যানার পোস্টার লাগান? নাকি নেতার নাম ভাঙিয়ে ওই এলাকায় অপকর্ম করতে এমন কাজটি করেন!

 

আশার কথা হচ্ছে, দেরিতে হলেও সিটি কর্পোরেশন এসব ব্যানার পোস্টার সরাতে উদ্যোগ নিয়েছে। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টারের সঙ্গে রাজনৈতিক ব্যানার পোস্টারও অপসারণ করছে। সচেতন নাগরিকদের অভিমত, মেয়র নিজের ছবি দেওয়া ব্যানার পোস্টার নিজে সরিয়ে প্রশংসা কুড়াচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু সবারটা সরাতে না পারলে তাঁর এই উদ্যোগ সফল হবে না। আমরা মনে করি, সৌন্দর্যরক্ষায় মেয়রের আলোচ্য অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। একইসঙ্গে নগরবাসীকেও সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে। মনে রাখতে হবে এই নগর সবার। ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে নগরের সৌন্দর্য রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট