
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার তালিকা জমা দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সংস্থা-প্রতিষ্ঠানের কাছে সম্প্রতি চিঠি দেয় ইসি। এজন্য লক্ষাধিক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল প্রস্তুত করতে হয়।
চট্টগ্রাম জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. বশির আহমদ বলেন, নির্বাচনে প্যানেল (ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা) প্রস্তুতের জন্য বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তালিকা পাওয়ার পর প্যানেল প্রস্তুত করা হবে। প্যানেল তালিকা প্রস্তুত হওয়ার পর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান তিনি।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসকে ধরে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম নির্বাচন কার্যালয়। ইতোমধ্যেই ভোটার তালিকা ও ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের ফেব্রæয়ারির প্রথমভাগে ভোটের ঘোষণা দিয়েছেন। জাতিসংঘের অধিবেশনেও ফেব্রæয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন।
নির্বাচন কর্মকর্তা মো. বশির আহমদ বলেন, ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রের উপর আপত্তি-অনাপত্তি গ্রহণ করা হচ্ছে। ৯ অক্টোবর শুনানি শেষে ভোটকেন্দ্রের তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।
ইসির কর্মকর্তারা বলেন, গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬ আসনে ভোটকেন্দ্র ছিল ২০২২টি। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় সবকটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৭৫টি ভোটকেন্দ্র জরাজীর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রের দরজা-জানালা ভাঙা; বিদ্যুৎ ও পানি নেই। রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা। নির্বাচনের আগে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামে ভোটার সংখ্যা ছিল ৬৩ লাখ ৯৬১ জন। এবার হালনাগাদের পর আরও তিন লাখ নতুন ভোটার যুক্ত করা হয়। নির্বাচন কর্মকর্তা বশির আহমদ বলেন, খসড়া ভোটার তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে। আগামী ৩১ অক্টোবর চ‚ড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।
গত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে। প্রতিটি নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কোনটি একতরফা, কোনটি দিনের ভোট রাতে হয়েছে- এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচিতি পেয়েছে ‘আমি আর ডামি’ ভোট হিসেবে।
অন্তর্বর্তী সরকার দেশের ইতিহাসে ‘সেরা নির্বাচন’ আয়োজন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ফেব্রæয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন ঘোষণার পর নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার আগেই ভোটার তালিকা ও ভোটকেন্দ্র চ‚ড়ান্ত করা হবে। নির্বাচনী কার্যক্রমে বড় কার্যক্রম হচ্ছে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকেরা এসব দায়িত্ব পালন করেন। এজন্য লক্ষাধিক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল প্রস্তুত করতে হয়। নির্বাচনের কয়েক মাস আগেই এসব কর্মকর্তার তালিকা প্রস্তুত করতে হয়। এরপর শুরু হবে প্রশিক্ষণ কর্মযজ্ঞ। ইতোমধ্যেই কর্মকর্তাদের তালিকা প্রেরণের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকা যাচাই-বাছাই করা, প্যানেল তালিকা প্রস্তুত-প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম কেনাকাটা সময়সাপেক্ষ বিষয়। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার কয়েক মাস আগে থেকে এসব প্রস্তুতি শুরু করতে হয়।
নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনে কেনাকাটা থেকে শুরু করে যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া নির্বাচন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। আর মাঠপর্যায়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ-প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ অনেক যাচাই-বাছাই করেই কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হয়।
পূর্বকোণ/ইবনুর